‘০০৭’ গ্রুপের সদস্যকে তুলে নিয়ে গেলো ১০ অস্ত্রধারী!

বরিশাল প্রতিনিধি
বরগুনায় দিন-দুপুরে স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাত শরীফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার পরিকল্পনা করা হয় হত্যাকাণ্ডের আগের দিন ‘০০৭’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে।

ওই গ্রুপে কে কখন কি অস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হবে তার নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী গত বুধবার সকালে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ম্যাসেঞ্জার গ্রুপটির নেতৃত্বে ছিলেন রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রধান আসামি নয়ন বন্ড। তিনি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।

এদিকে, নয়ন বন্ড পরিচালিত ফেসবুক ‘০০৭’ গ্রুপের সদস্য হওয়ার অভিযোগে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ছাত্রাবাস থেকে দ্বিতীয় সেমিস্টারের এক ছাত্রকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বরিশাল বিমানবন্দর থানায় দুটি জিডি করা হয়েছে।

নিখোঁজ মাহাথির মোহাম্মাদ গৌরনদী উপজেলার মো. ফরিদ হোসেনের ছেলে এবং রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করে আসছিলেন মাহাথির।

জিডি সূত্রে জানা যায়, ৩০ জুন রাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকে ৮ থেকে ১০ জনের একটি দল ক্যাম্পাসের মূল ফটকের দারোয়ানকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ছাত্রাবাসে প্রবেশ করে। এ সময় তারা ২০৫ ও ২০৬ নম্বর কক্ষে তল্লাশি চালায়। পরে ২০৬ নম্বর কক্ষ থেকে মাহাথির মোহাম্মাদকে তুলে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের বলে যায় মাহাথির বরগুনার রিফাত হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত এবং ফেসবুক গ্রুপ ‘০০৭’র সদস্য।

রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ গোলাম মো. ইদ্রিস বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সংস্থা ক্যাম্পাসে প্রবেশের জন্য অনুমতি নেয়নি। তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ৮ থেকে ১০ জন অস্ত্রধারীকে দেখা গেছে। তারা ভেতরে ঢুকে মাহাথিরকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। এ ঘটনায় আমাদের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার বিমানবন্দর থানায় জিডি করা হয়েছে।

মাহাথির মোহাম্মাদের বাবা মো. ফরিদ হোসেন বলেন, চারদিন পার হয়ে গেলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সংস্থা মাহাথিরকে গ্রেপ্তার বা আটকের বিষয়টি স্বীকার করেনি। বিভিন্ন জায়গায় সন্ধান করেছি। ছেলে নিখোঁজের ঘটনায় ১ জুলাই বিমানবন্দর থানায় জিডি করেছি। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মাহাথিরের খোঁজ পাইনি আমরা।

রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, মাহাথিরের বাবা মো. ফরিদ হোসেন বরগুনা কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালকের গাড়ির চালক। এ কারণে বরগুনায় মাহাথিরের যাতায়াত ছিল। এসব কারণে রিফাত হত্যা মামলার পরিকল্পনা হওয়া ফেসবুক গ্রুপ ‘০০৭’র সঙ্গে মাহাথিরের জড়িত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

বিমানবন্দর থানা পুলিশের ওসি এসএম মাহাবুব উল আলম বলেন, মাহাথির মোহাম্মাদের নিখোঁজের ঘটনায় থানায় দুটি জিডি করা হয়েছে। তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

ওসি মাহাবুব উল আলম আরও বলেন, আমার থানা পুলিশ বা ডিবি পুলিশ রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ছাত্রাবাসে গত কয়েকদিনে অভিযান চালায়নি। অন্য কোনো বাহিনী অভিযান চালিয়েছে কি-না তারও খবর পাওয়া যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি আমরা।