বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। কোন অন্যায়কে ধামাচাপা দেয়ার জন্য নয়ন বন্ডকে নৃশংসভাবে গুলি করে মারা হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন তিনি।
নয়ন বন্ডকে গুলি করে হত্যা করার প্রকৃত কারণ প্রকাশ করতে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলেছে নদীর পাড়ে গোলাগুলিতে নয়নের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু দিন তিনেক আগে স্থানীয় একটি পত্রিকায় এসেছে যে তাকে হিলি বন্দর থেকে আটক করা হয়েছে। জানতে চাই, সত্য কী? তাহলে নয়ন বন্ডকে গুলি করে হত্যা করা হলো কেন? কোন অন্যায়কে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এত বড় বর্বর কাণ্ড ঘটানো হলো, তা আমরা জানতে চাই? যদি সরকার মনে করে তারা যা ইচ্ছা তাই করে পার পাবে, সেটা হবে না।’
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত গ্যাসের দাম বাড়ার প্রতিবাদে মানববন্ধনে যোগ দিয়ে এমন মন্তব্য করেন মান্না।
গত বুধবার সকালে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে গুরুতর জখম করে রিফাত শরীফকে। স্ত্রী আয়েশা আক্তার মিন্নি হামলাকারী নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সঙ্গে লড়াই করেও তাদের হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি স্বামীকে।
ওই ঘটনার ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশজুড়ে প্রতিবাদ-সমালোচনার ঝড় ওঠে। খুনিদের গ্রেপ্তারে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। পরে নয়জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন মূল আসামি নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী এবং রিশান ফরাজী। তাদের মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড মঙ্গলবার সকালে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন বলে দাবি করে বরগুনা জেলা পুলিশ।
এদিকে, আগামী রোববার (৭ জুলাই) গ্যাসের দাম বাড়ার প্রতিবাদে বাম দলের ডাকা হরতাল সফল করতে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে রাজপথে নামারও আহ্বান জানান মাহমুদুর রহমান মান্না।
বাম দলের ডাকা হরতালে নাগরিক ঐক্যের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়ানো সরকারের স্বেচ্ছাচারী বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ। মানববন্ধনের মাধ্যমে আমরা গ্যাসের দাম বাড়ার প্রতিবাদ শুরু করেছি। আমাদের রাজনৈতিক বন্ধু বাম দলের ডাকা হরতাল খুবই যৌক্তিক। আমরা এই হরতালের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। আমাদের উচিত জাতীয় স্বার্থে এই হরতালে অংশগ্রহণ করে সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ করা।’
তিনি আরো বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও এর শরীক দলগুলো গ্যাসের দাম বাড়ানোর মতো গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছে। আমরা তাদের আহ্বান জানাচ্ছি সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ঘরে বসে প্রতিবাদ না করে রাজপথে নেমে আসুন, গণ আন্দোলন গড়ে তুলুন।
সরকার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করেছে অসাধু ব্যবসায়িদের সুবিধা দিতে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকার ভোট চুরির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে, এটা কারও আর অজানা নয়। এখন গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে জনগণের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে। তিতাস, ডেসকোসহ অন্যান্য সরকারি গ্যাস সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলো লাভজনক অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর একমাত্র কারণ অসাধু ব্যবসায়িদের অবৈধ সুবিধা প্রদান করা।’
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ কায়সার বলেন, সরকার জনগণের সাথে গণবিরোধী আচরণ করছে। একদিকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সংসদে অবাস্তব বাজেট পেশ করছে, অন্যদিকে ঘোষণার পরপরই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। এই সরকার লুটেরা সরকার, নির্যাতনের সরকার ও জনগনের উপর করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার সরকার।’