‘আমি তো কবুল কইছি না, বিয়া অইলো কিবায়’

‘আমি তো কবুল কইছি না, বিয়া অইলো ময়মনসিংহ নান্দাইল উপজেলার সিংরুইল ইউনিয়নের হায়াতপুর গ্রামের সাইদুল ইসলামের মেয়ে সাদিয়া আক্তার। বয়স ১৩। স্থানীয় মহাবৈ মহিলা দাখিল মাদরাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। ছয় মাস আগে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে বিয়ে দেওয়ার ঘটনা এভাবে বর্ণনা করে গতকাল বৃহস্পতিবার কান্নায় ভেঙে পড়ে। স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা সাদিয়া বর্তমানে নানার বাড়িতে অবস্থান করছে। সেখান থেকে আতঙ্কের মধ্যে মাদরাসায় যায়।

‘বিয়ার কথা হুইন্যা লুকাইয়া পড়ছিলাম। এরপর বাপে ও দাদায় জোর কইর্যা ধইর্যা এক বেডার (বর) সামনে আনে। পরে কবুল কঅনের লাইগ্যা চাপাচাপি করে। কিন্তু আমি খালি কান্দি। বাবায় কিল-ঘুষি ও লাথি মাইর্যা দেইখ্যা নিবো কইলে ভয়ে কান্দা বন্ধ করি। তহন তারা ভাবে আমি বোধয় কবুল কইছি। এরপর এক মুন্সি দোয়া কইর্যা বিয়া অইয়া গেছে কইয়া চইল্যা যায়। কিন্তু আমি তো কবুল কইছি না, তে বিয়া অইলো কিবায়!’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সাদিয়া।

বাবা একাধিক বিয়ে করে ঢাকায় বসবাস করেন। মা গাজীপুরে একটি গার্মেন্টে চাকরি করেন। গত ডিসেম্বরে সাইদুল মেয়ে সাদিয়ার বিয়ে ঠিক করেন পাশের বাড়ির হেলিম মিয়ার ছেলে দুলন মিয়ার (২৫) সঙ্গে। জানতে পেরে সাদিয়া কান্নাকাটি করে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেয়। পরে সাইদুল জানান, বিয়ে না, আলাপ করে রাখা হচ্ছে। কিন্তু তলে তলে বিয়ের তারিখ ঠিক করেন ৩০ ডিসেম্বর।

সত্যতা জেনে সাদিয়া গাজীপুরে মাকে ঘটনাটি জানায়। সেখান থেকে মা প্রতিবাদ করলে তাকে তালাকের হুমকি দেয় সাইদুল। সাদিয়ার নানি হালেমা আক্তার (৬০) জানান, বিয়ের দিন সাদিয়ার বাবা সাইদুল বাড়ি এলে মামা মীমপুল মিয়া ও তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম লুকিয়ে থাকা সাদিয়াকে ধরে তাদের কাছে আটকে রাখে। পরে সন্ধ্যায় বিয়ের আসরে নিয়ে যায়। সেখানে কথিত কাজি মো. মোন্তাজ উদ্দিন দোয়া পড়িয়ে সাদিয়ার বিয়ে পড়ায়।

সাদিয়া জানায়, পরদিন তার দাদা সম্পর্কের মীমপুল মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা নাক ফোঁড়ানোর জন্য সাদিয়ার নাক ফুটু করে দেয়। একপর্যায়ে সন্ধ্যায় নাকে ব্যথা হবে বলে আনোয়ারা একটি বড়ি খাইয়ে দিলে সাদিয়া ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম ভাঙলে সে দেখতে পায়, কথিত বরের ঘরে তার অবস্থান।

এর পরই সাদিয়ার সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়। কিন্তু বাবা সাইদুলের ভয়ভীতির কারণে প্রতিবাদ করার সাহস না পেলেও স্বামীর কাছে আর যায়নি। মামার বাড়ি চলে আসে সাদিয়া।কিবায়’