পেট থেকে গ্যাস দূর করার ঘরোয়া টোটকা, গাদা গাদা গ্যাসের ওষুধ ছাড়ুন

পেট থেকে গ্যাস দূর করার- গ্যাসের যন্ত্রণায় যারা ভোগেন তারাই ভাল জানেন কতটা অস্বিস্তিকর। একটু ভাজাপোড়া অথবা দাওয়াত, পার্টিতে মসলাযু্ক্ত খাবার খেলে তো শুরু হয়ে যায় অস্বস্তিকর গ্যাসের সমস্যা। ফাস্ট ফুড, ব্যস্ত জীবনযাত্রার যুগে গ্যাস, পেটের অসুখ এখন ঘরোয়া।

যেকোনো মানুষের বাসায় গেলেই আর যাই হোক গ্যাস্ট্রিকের ১ পাতা ওষুধ অবশ্যই পাওয়া যায়। তবে কী গাদা গাদা গ্যাসের ওষুধে এ সমস্যা দূর হয়! কিন্তু ঘরোয়া কিছু উপায় আছে যেগুলো প্রয়োগ করলে গ্যাস, বুক জ্বালা থেকে সহজেই বাঁচা যায়।

জেনে নেওয়া যাক:

শসা: শসা পেট ঠাণ্ডা রাখতে অনেক বেশি কার্যকরী খাদ্য। এতে রয়েছে ফ্লেভানয়েড ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা পেটে গ্যাসের উদ্রেক কমায়।

দই: দই আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে করে দ্রুত খাবার হজম হয়, ফলে পেটে গ্যাস হওয়ার ঝামেলা দূর হয়।

পেঁপে: পেঁপেতে রয়েছে পাপায়া নামক এনজাইম যা হজমশক্তি বাড়ায়। নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করলেও গ্যাসের সমস্যা কমে।

কলা ও কমলা: কলা ও কমলা পাকস্থলির অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে সহায়তা করে। এতে করে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়াও কলার সলুবল ফাইবারের কারণে কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষমতা রাখে। সারাদিনে অন্তত দুটি কলা খান। পেট পরিষ্কার রাখতে কলার জুড়ি মেলা ভার।

আদা: আদা সবচাইতে কার্যকরী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানসমৃদ্ধ খাবার। পেট ফাঁপা এবং পেটে গ্যাস হলে আদা কুচি করে লবণ দিয়ে কাঁচা খান, দেখবেন গ্যাসের সমস্যা সমাধান হবে।

ঠাণ্ডা দুধ: পাকস্থলির গ্যাসট্রিক এসিডকে নিয়ন্ত্রণ করে অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি দেয় ঠাণ্ডা দুধ। এক গ্লাস ঠাণ্ডা দুধ পান করলে অ্যাসিডিটি দূরে থাকে।

দারুচিনি: হজমের জন্য খুবই ভালো। এক গ্লাস পানিতে আধ চামচ দারুচিনির গুঁড়ো দিয়ে ফুটিয়ে দিনে ২ থেকে ৩ বার খেলে গ্যাস দূরে থাকবে।

জিরা: জিরা পেটের গ্যাস, বমি, পায়খানা, রক্তবিকার প্রভৃতিতে অত্যন্ত ফলপ্রদ। জ্বর হলে ৫০ গ্রাম জিরা আখের গুড়ের মধ্যে ভালো করে মিশিয়ে ১০ গ্রাম করে পাঁচটি বড়ি তৈরি করতে হবে। দিনে তিনবার এর একটি করে বড়ি খেলে ঘাম দিয়ে জ্বর সেরে যাবে।

লবঙ্গ: ২/৩টি লবঙ্গ মুখে দিয়ে চুষলে একদিকে বুক জ্বালা, বমিবমিভাব, গ্যাস দূর হয়। সঙ্গে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।

এলাচ: লবঙ্গের মতো এলাচ গুঁড়ো খেলে অম্বল দূরে থাকে।

পুদিনা পাতার পানি: এক কাপ পানিতে ৫টা পুদিনা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে খান। পেট ফাঁপা, বমিভাব দূরে রাখতে এর বিকল্প নেই।

মৌরির পানি: মৌরি ভিজিয়ে সেই পানি খেলে গ্যাস থাকে না।

এ ছাড়াও খাবারে সরষে যোগ করুন: সরষে গ্যাস সারাতে করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন খাবারের সাথে সরষে যোগ করা হয় যাতে সেইসব খাবার পেটে গ্যাস সৃষ্টি করতে না পারে। নজর রাখতে হবে নিজের খাওয়া-দাওয়ার প্রতি। জেনে নিতে হবে কোনটি খাওয়া উচিত হবে কোনটি হবে না।

প্রেশার বেড়ে ঘাড় ব্যথা হলে তৎক্ষণাৎ যা করবেন; নয়ত বয়ে আনতে পারে চরম পরিণতি

উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার মুহূর্তেই বয়ে আনতে পারে চরম পরিণতি। উচ্চ রক্তচাপের কারণে করোনারি হার্ট ডিজিজ, হার্টফেল, স্ট্রোক ও কিডনি অকেজো হয়ে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কেন হাই ব্লাড প্রেসার হয়, হলে করণীয় কি?

জানাচ্ছেন বাংলাদেশ আকুপ্রেশার সোসাইটির আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ মনোজ সাহা রক্ত চাপ যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তখন উচ্চ রক্তচাপ হয়। মস্তিষ্ক মেরুজল হৃৎপিণ্ডের তৃতীয় অংশ থেকে ওপরে উঠে স্নায়ুতন্ত্রে প্রবেশ করে।

যখন মস্তিষ্ক মেরুজলে লবণের পরিমাণ বেড়ে যায়, তখন বহির্গত নালির বাল্বের ভেতরে অবস্থিত চুলের মতো সূক্ষ কোষগুলো শক্ত হয়ে যায়। এর ফলে মস্তিষ্ক মেরুজলের প্রবাহ ব্যাহত হয়।

হৃৎপিণ্ডের তৃতীয় অংশে এই মস্তিষ্ক মেরুজলকে ওপরে ঠেলার জন্য যে চাপের সৃষ্টি হয় তাই উচ্চ রক্তচাপ। অনেক সময় দুশ্চিন্তাজনিত কারণ থেকেও এটি হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের ফলে করোনারি হার্ট ডিজিজ, হার্টফেল, স্ট্রোক, কিডনি অকেজো ইত্যাদি মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়।

লক্ষণ – মাথাব্যথা, বিশেষ করে পেছনের দিকে ব্যথা। অনেক সময় সকালে ঘুম থেকে উঠার পর ব্যথা অনুভূত হয়। দু-চার ঘণ্টা পর কমে যায়, মাথা ঘোরা, বুক ধড়ফড় করা, মনোযোগের অভাব, অল্পতে হাঁপিয়ে যাওয়া, মাংসপেশির দুর্বলতা, পা ফোলা, বুকে ব্যথা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, ক্লান্তিবোধ, ঘাড় ব্যথা।

কারণ, ধূমপান, ওজন বেশি, অলস জীবন-যাপন, খাবারের সঙ্গে বেশি লবণ গ্রহণ, নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন, বংশগত কারণে, ক্রনিক কিডনি রোগ, অ্যাড্রেনাল ও থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা।

পথ্য – এক মাস সকাল ও সন্ধ্যায় দুই চামচ করে থানকুনি পাতার রস সেবন করুন। অথবা রসুন ১ কোয়া করে দুবেলা ভাতের সঙ্গে ১৫ দিন খান।৪টি তুলসীপাতা ও ২টি নিমপাতা ১ চা চামচ পানিতে চটকিয়ে খেয়ে নিন। ১০০ গ্রাম পানিতে মাঝারি আকারের অর্ধেকটা লেবু চিপে দিনে ২-৩ বার পান করতে হবে।

যা করবেন – ওজন কামানো, লবণ ও সোডিয়ামযুক্ত খাদ্য কম গ্রহণ, হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা ও শারীরিক পরিশ্রম করা, রেড মিট বর্জন করা। রিফ্লেক্সো্লজি বিন্দুসমূহ ৩, ৪, ৮, ২৫, ২৮, ৩৬, NP, MF উচ্চ রক্তচাপের জন্য ওপরের প্রতিটি পয়েন্টে ৭০ থেকে ৮০ বা ২ মিনিট একটি সুচালো ভোঁতা কাঠি দ্বারা চাপ প্রয়োগ করতে হয়।

প্রতি ১ সেকেন্ডে ১টি করে চাপ দিতে হবে। ৬ ঘণ্টা পর পর দিনে সর্বোচ্চ ৩-৪ বার রিফ্লেক্সোলজি করা যায়। একেবারে খালি পেটে অথবা ভরা পেটে রিফ্লেক্সোলজি করা ঠিক নয়। খাওয়ার আধ ঘণ্টা পরে করা যাবে। রোগের বয়স যত দিন তার ১ : ১০ ভাগ সময়কাল পর্যন্ত থেরাপি করলে রোগ নিরাময় সম্ভব।

টিপস উচ্চ রক্তচাপ হলে চোখ বন্ধ করে দুই হাতের কনিষ্ঠ আঙুল কানের মধ্যে দিয়ে ২-৩ মিনিট কান ঝাঁকুনি দিন। ঘাড়ে ব্যথার কারণ ও প্রতিকার: আমাদের বেশির ভাগ মানুষই জীবনের কোনো এক সময় ঘাড়ের ব্যাথায় ভোগেন।

মেরুদণ্ডের ঘাড়ের অংশকে মেডিক্যাল ভাষায় সারভাইক্যাল স্পাইন বলে। মেরুদণ্ডের ওপরের সাতটি কশেরুকা ও দুই কশেরুকার মাঝখানের ডিস্ক, পেশি ও লিগামেন্ট নিয়ে সারভাইক্যাল স্পাইন বা ঘাড় গঠিত। মাথার হাড় (স্কাল) থেকে মেরুদণ্ডের সপ্তম কশেরুকা পর্যন্ত ঘাড় বিস্তৃত।

আট জোড়া সারভাইক্যাল স্পাইন নার্ভ (স্নায়ু) ঘাড়, কাঁধ, বাহু, নিচু বাহু এবং হাত ও আঙুলের চামড়ার অনুভূতি ও পেশির মুভমেন্ট প্রদান করে। এ জন্য ঘাড়ের সমস্যায় রোগী ঘাড়, কাঁধ, বাহু ও হাত বা শুধু হাতের বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

ঘাড়ের সমস্যা পুরুষের তুলনায় নারীদের বেশি হয়। ঘাড়ে দুই ধরনের ব্যথা হয়ঃ

১. লোকাল বা স্থানীয় ব্যথা,

২. রেফার্ড পেইন বা দূরে ছড়িয়ে যাওয়া ব্যাথা।, ঘাড়ব্যথার কারণঃ অনেকগুলো কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১. সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস,

২. সারভাইক্যাল স্পনডাইলাইটিস,

৩. সারভাইক্যাল স্পনডাইলিসথেসিস,

৪. সারভাইক্যাল রিবস,

৫. সারভাইক্যাল ক্যানেল স্টেনোসিস বা স্পাইনাল ক্যানাল সরু হওয়া,

৬. সারভাইক্যাল ডিক্স প্রলেপস বা হারনিয়েশন, যেখানে হারনিয়াটেড ডিস্ক নার্ভের ওপর চাপ প্রয়োগ করে,

৭. মাংসপেশী, হাড়, জোড়া, লিগামেন্ট, ডিস্ক (দুই কশেরুকার মাঝখানে থাকে) ও স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরি,

৮. অস্বাভাবিক পজিশনে নিদ্রা বা অনিদ্রা,, ৯. উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ,

১০. হাড় ও তরুণাস্থির প্রদাহ ও ক্ষয়,

১১. অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় ও ভঙ্গুরতা রোগ,

১২. হাড় নরম ও বাঁকা হওয়া,

১৩. রিউমাটয়েড-আর্থ্রাইটিস ও সেরো নেগেটিভ আর্থ্রাইটিস,

১৪. সারভাইক্যাল অস্টিও-আর্থ্রাইটিস,

১৫. ফাইব্রোমায়ালজিয়া,

উপসর্গঃ

১. ঘাড়ব্যথা এবং এই ব্যথা কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুল পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে,

২. কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুলে অস্বাভাবিক অনুভূতি বা অবশ ভাব, ৩. বাহু, হাত ও আঙুল দুর্বল হতে পারে,

৪. সব সময় ঘাড় ধরে বা জমে (স্টিফনেস) আছে এবং আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে,

৫. ঘাড়ের মুভমেন্ট ও দাঁড়ানো অবস্থায় কাজ করলে ব্যথা বেড়ে যায়, ল্যাবরেটরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা: ঘাড়ব্যথার চিকিৎসা দেয়ার আগে কারণ নির্ণয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করতে হবে।

চিকিৎসা: ঘাড়ব্যথার চিকিৎসা এর কারণগুলোর ওপর নির্ভর করে। চিকিৎসার মূল লক্ষ হল,

১. ব্যথা ও অন্যান্য উপসর্গ নিরাময় করা

২. ঘাড়ের মুভমেন্ট স্বাভাবিক করা।

কনজারভেটিভ চিকিৎসা:

১.অ্যান্টিইনফ্যামেটরি ওষুধ সেবন,

২.ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এটিই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি। বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপিচিকিৎসা কারণগুলোর উপর নির্ভর করে।

এখানে বিভিন্ন ম্যানুয়াল বাম্যানুপুলেশন থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ এবং এই চিকিৎসাই ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রোমেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট; যেমন- ইন্টারফ্যারেনশিয়াল থেরাপি, অতি লোহিত রশ্মি, মাইক্রো-ওয়েভ ডায়াথারমি,আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি ও ইন্টারমিটেন্ট ট্র্যাকশন, ট্রান্সকিউটেনিয়াস ইলেক্ট্রিক্যাল স্টিমুলেশন ইত্যাদি।

এবং কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে দুই-তিন সপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়। সার্জিক্যাল চিকিৎসা, কনজারভেটিভ বা মেডিক্যাল চিকিৎসায় ভালো না হলে, ব্যথা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে, স্নায়ু সমস্যা দেখা দিলে, বাহু, হাত ও আঙুলে দুর্বলতা এবং অবশ ভাব দেখা দিলে এবং প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে দ্রুত সার্জিক্যাল চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে বিভিন্ন ধরনের সার্জিক্যাল চিকিৎসা কারণগুলোর উপর নির্ভর করে।

করণীয়:

১. সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ কাজ করবেন না।

২. মাথার ওপর কোনো ওজন নেবেন না।

৩. প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে হবে।

৪. শক্ত বিছানায় ঘুমাবেন।

৫. শোবার সময় একটা মধ্যম সাইজের বালিশ ব্যবহার করবেন, যার অর্ধেকটুকু মাথা ও অর্ধেকটুকু ঘাড়ের নিচে দেবেন।

৬. তীব্র ব্যথা কমে গেলেও ঘাড় নিচু বা উঁচু করা, মোচড়ানো (টুইসটিং) পজিশন বন্ধ করা।

৭. অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম কমাতে হবে।

৮. সেলুনে কখনোই ঘাড় মটকাবেন না।

৯. কাত হয়ে শুয়ে দীর্ঘক্ষণ পড়বেন না বা টেলিভিশন দেখবেন না।

১০. কম্পিউটারে কাজ করার সময় মনিটর চোখের লেভেলে রাখবেন।