ঢাকা: গল্প, কবিতা বা সাহিত্যে একজন পুরুষের দৃষ্টিতে নারীর সৌন্দর্যের বর্ণনা নানাভাবে উঠে এসেছে। কিন্তু এর উল্টোটা অর্থাৎ নারীর চোখে পুরুষের কোন বিষয়গুলো আকর্ষণীয় সেই ব্যাখ্যা এসেছে খুবই কম।
তার মানে এই নয় যে, পুরুষকে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে নারীদের কোন পছন্দ-অপছন্দ নেই। সেটা অবশ্যই একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম।
যেমন পেশায় চিকিৎসক ডা. শামসুন্নাহার বীথির কাছে পুরুষের সৌন্দর্য মানেই তার পরিচ্ছন্নতা, সেটা হোক শরীরের বা মনের।
“আমি যখন মেডিকেলে পড়তাম তখন আমাকে এক বড় ভাই খুব পছন্দ করতেন। তিনি দেখতেও বেশ সুন্দর ছিলেন।
কিন্তু আমি তাকে নিয়ে কখনও কিছু ওভাবে ভাবতে পারিনি। কারণ তিনি কখনও সুগন্ধি ব্যবহার করতেন না, যা ছিল তার খুব প্রয়োজন।”
“আমার কাছে শরীর ও মন দুটোর পরিচ্ছন্নতাই এক ধরণের সুন্দর্য। সেটা ছেলে মেয়ে সবার ক্ষেত্রে।
আর আমার একটা অদ্ভূত পছন্দ আছে আর সেটা হল আমি কাঁচা পাকা চুলের ছেলে পছন্দ করি। টাক পড়া নিয়েও আমার সমস্যা নেই। তবে সেটা চকচকে হতে হবে।”
ব্যাবসায়ী নওরিন আক্তার পছন্দ করেন এমন পুরুষ যারা বাইরে কিছুটা এলোমেলো, কিন্তু মনে দিকে অনেকটা গোছানো প্রকৃতির।
তিনি বলেন, “খুব ফরমাল ছেলেদের আমার ভালো লাগেনা। কিন্তু ধরেন একটা ছেলে তার সঙ্গে মানিয়ে একটা পাঞ্জাবি পড়লো, কাঁধে ঝোলা ব্যাগ, চোখে চশমা, চাপ দাড়ি। খুব গুছিয়ে কথা বলছে,আমার এই ধরণের পুরুষদের প্রথম দেখাতেই ভালো লাগে। ”
পুরুষের প্রতি নারীর এমন পছন্দের পরিসর আগের চাইতে অনেক বেড়েছে বলে মনে করেন প্রামাণ্যচিত্র অভিনেত্রী ফারহানা হামিদ। এক্ষেত্রে মিডিয়ার বড় ধরণের ভূমিকা আছে বলে তিনি মনে করেন।
ব্যক্তিগতভাবে তিনি সৃজনশীল, আত্মবিশ্বাসী সেইসঙ্গে শারীরিক ফিটনেস এবং বাচনভঙ্গির ব্যাপারে সচেতন পুরুষদের পছন্দ করেন।
“একটি ছেলে লম্বা, খাটো, কালো বা ফর্সা হতে পারে কিন্তু সে তার শরীরের ফিটনেস নিয়ে যদি যত্নশীল হয় এবং ফ্যাশনেবলভাবে উপস্থাপন করে,আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হই।
তাছাড়া ছেলেটা কতোটা স্মার্ট, অন্যকে কতোটা সম্মান দিয়ে কথা বলে। সে কতোটা প্রাণবন্ত। সেগুলোও আমার কাছে ম্যাটার করে।
কিছুটা ভিন্নভাবে ভাবছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফারজানা ইয়াসমিন। তার পছন্দ ভারী কণ্ঠের পুরুষ।
গায়ের রং তেমন গুরুত্ব না পেলেও লম্বা গড়ন সেইসঙ্গে ক্যারিয়ারে সুপ্রতিষ্ঠিত পুরুষের প্রতি তিনি তার দুর্বলতার কথা জানান। তবে তিনি এটাও মনে করেন সবকিছুর ওপরে পুরুষের সুন্দর মানসিকতাই মুখ্য।
স্কুল শিক্ষিক তাসনিম চৌধুরীও একজন পুরুষের প্রতি আকর্ষণ বোধ করতে তার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, পোশাকি রুচিশীলতা, মার্জিত আচরণ এবং কথাবার্তায় রসবোধকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
“সবার আগে আমার ভাল লাগে পুরুষের হাইট, তার কণ্ঠ আর তার হাত পা পরিস্কার কিনা।
তাছাড়া পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে সে কেমন জুতা পরছে, সেখানেও তার রুচি অনেকটা পরখ করা যায়।তবে আমার কাছে বেশি জরুরি কেয়ারিং মেন্টালিটি আর তার সেন্স অব হিউমর।”
“যে পুরুষ তার নারী সঙ্গীর ছোট ছোট বিষয়গুলো খেয়াল রাখে। তাকে হাসাতে পারে, তার চাইতে আকর্ষণীয় আর আবেদনময় আর কিছু নেই।”
এদিকে টেলিভিশন রিপোর্টার বীথি সপ্তর্ষি একজন পুরুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যের চাইতে তার বাচনভঙ্গি, কথাবার্তার ধরণ, দায়িত্বশীলতা, সমাজ ও বিশ্বকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানুষের প্রতি তার সম্মানবোধকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
“সমাজের যে বেঁধে দেয়া সুন্দর্যের সংজ্ঞা আছে যেমন টল ডার্ক হ্যান্ডসাম, এই বিষয়গুলো আমাকে একদমই টানে না।
আমি একজন পুরুষকে পছন্দ করার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেই, প্রথমত তার কণ্ঠ ও বাচনভঙ্গি, দ্বিতীয়ত কথা বলার বিষয়বস্তু ও তার গভীরতা এবং তৃতীয়ত যে সাধারণ আদব কায়দা রয়েছে।
যেমন খাওয়ার সময় শব্দ না করা, নাকে হাত না দেয়া, সেগুলো তারা মেইনটেইন করছে কিনা।”
পুরুষের প্রতি নারীদের এই দৃষ্টিভঙ্গির বৈচিত্র্য, বয়স-ভেদে বদলায় বলে মনে করেন ফ্যাশন ডিজাইনার ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব তাহমিনা শৈলী।
এর পেছনে শিক্ষা, সচেতনতা এবং নারীর স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগকে অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করেন তিনি। বর্তমানে মেয়েদের এমন বিষয়ে খোলামেলা কথা বলাকে বেশ ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছেন মিজ শৈলী।
“আগেকার ইতিহাস, ধর্মের বইয়ে পুরুষের এক ধরণের বর্ণনা ছিল যে পুরুষ মানেই, সুঠাম দেহ-শক্তিশালী-সাহসী, সেই সবার ওপরে কথা বলে।
তেমনি নারীর ক্ষেত্রেও শুধুমাত্র তার বাহ্যিক কিছু সৌন্দর্যের বর্ণনা দেয়া হতো। সেই বিষয়টি কিন্তু এখন আর নেই। তবে এটা আশাবাঞ্জক যে নারীরা এটা নিয়ে কথা বলছেন।”
তবে নারী ও পুরুষের সৌন্দর্য নিয়ে সমাজে যে গৎবাঁধা ধারণা প্রচলিত আছে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। সর্বোপরি নারীর মনের মতো তার চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টিও রহস্যময়।
বিশেষ করে কোন পুরুষকে পছন্দ করার ক্ষেত্রে বাহ্যিক ও মানসিক এই দুই সৌন্দর্যের সমন্বয়কে খোঁজেন নারীরা। যার কোন আদর্শ মাপকাঠি নেই।