একসঙ্গে দুজনকে ভালোবাসা ভুল কিছু নয়: মনোবিজ্ঞানী

একসঙ্গে একাধিক নারী বা পুরুষকে ভালোবাসা নিয়ে অনেক সিনেমা হয়েছে। বাস্তবেও ঘটে থাকে আমাদের সমাজে। কিন্তু সমাজে এটাকে দেখা হয় খারাপ চোখে। এতে করে অনেক সময় ভেঙে যায় সাজানো সংসারও।

কিন্তু অবাক করার মত বিষয় হলো, একসঙ্গে দু’জনকে ভালোবাসা ভুল কিছু নয় বলে দাবি করেছেন মনোবিজ্ঞানী ড. রমনি দুর্বাসুলা।

ড. রমনি দুর্বাসুলা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং একজন ক্লিনিকাল মনোবিজ্ঞানী।

ড. রমনি দুর্বাসুলা বলেন, ‘আমরা মনে করি, ভালোবাসা আসে একধরনের সুবাস রূপে। অন্যভাবে বললে, চকলেট চিপ মিন্ট, এবং স্ট্রবেরি দুটো সম্পূর্ণ আলাদা, কিন্তু দু্টোই খেতে খুব ভালো।’

‘আমরা জটিল ও খটমট জীব; এটা খুবই সম্ভব যে দুই ধরনের মানুষের দুই ধরনের বিষয় একই সঙ্গে আমাদের মধ্যেে আবেদন তৈরি করতে পারে,’ বলেন রমনি।

‘‘আকর্ষণ অত্যন্ত জৈবিক এক অভিজ্ঞতা’ মন্তব্য করে অধ্যাপক দুর্বাসুলা বলেন, ‘আপনি প্রতিষ্ঠিত কোনো সম্পর্কের ভেতরে থাকতে পারেন, এবং কর্মক্ষেত্রে গিয়ে এমন একজনের দেখা পেতে পারেন যাকে দেখলে আপনাকে পাগল করে দেয়। অথবা হঠাৎ দেখা সাক্ষাত হয় এমন দুজন মানুষকে একসঙ্গে আপনার কাছে আবেদন থৈরি করতে পারে।’

মনোবিজ্ঞানীর মতে, প্রত্যেকটি মানুষই বিভিন্ন পৃথক বৈশিষ্ট্যযুক্ত হন। একজন মানুষের মধ্যে সবটুকু পছন্দের বৈশিষ্ট্য যে মিলবেই, এমন নয়। তাই ভালোলাগার কোনো গুণ বা স্বভাব থেকে প্রেম বা ভালোবাসার অনুভূতি দু’জনের প্রতিই জন্মাতে পারে। পিটুইটারি গ্রন্থি ও ফিল গুড হরমোনরাই এর জন্য দায়ী।

এ প্রসঙ্গে এ মনোবিদ বলেন, ‘জন্মের শুরু থেকেই এক সঙ্গে দু’জনকে অর্থাৎ মা-বাবাকে ভালবাসে মানুষ। কাজেই একসঙ্গে দু’জনকে ভালবাসার ক্ষমতা তার জন্মগত। কিন্তু যখনই সম্পর্ক বা দাম্পত্যের কথা আসে, তখনই আমরা সতর্ক হয়ে যাই। কেন জানেন?’

‘‘আসলে সমাজ এসব সম্পর্ককে বাঁধে সামাজিক ও আর্থিক সুবিধা বুঝে। এসব জটিলতা এড়াতেই সে নিজস্ব কিছু নিয়ম চালু করে ও সেখানে যৌনতাকেও জুড়ে দেয়। তবে মনে রাখা দরকার, সম্পর্ক কিন্তু মোটেও শরীরসর্বস্ব নয়।

শরীরে একজনের হয়ে মনে মনে দু’জনের হয়ে থাকা কিংবা মন ও শরীর উভয়ই দু’জনের হয়ে থাকায় কোনো ফারাক নেই। কেউ দু’জনকেই ভালবাসি বললে, তাকে ‘মিথ্যে’ বলে ধরে নেয়ার প্রবণতা আমাদের রয়েছে।

বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে সেখানে। কিন্তু অনেকেই দায়-দায়িত্ব দু’জনের ক্ষেত্রেই পালন করেন। এখানে অবশ্যই সঙ্গের মানুষদের অভিমান বা কষ্টের বিষয়টি আলাদা প্রসঙ্গ। কিন্তু কেউ দু’জনকে ভালবাসার দাবি করলে তা মিথ্যে নয়,’’ বলেন রমনি।

‘তবে ভালবাসার মধ্যেও রকমফের হয়। কোনোটা দীর্ঘস্থায়ী হয়, কোনোটা কিছুদূর হেঁটেই পথ বদলায়। তাই বুঝে নেয়া দরকার, কোনটা ক্ষণিকের ভালে্ লাগা আর কোনটা টিকে থাকার মতো অনুভূতি।

তবে দুই সঙ্গীকেই দু’টি সম্পর্কে থাকার কথা জানানোর সাহস পান না অশান্তি আর সমাজের ভয়েই। তাই বেছে নিতে হয় একজনকে। তৈরি হয় জটিলতা। বিভিন্ন মাপকাঠিতে মাপতে গেলে সমস্যা যেন আরো বেড়ে যায়। একজনের সঙ্গে গল্পে মশগুল থাকা আপনার পছন্দের, তো আর একজনের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনি নিশ্চিত। এমন পর্যায়ও তৈরি হতেই পারে।’

এ মনোবিদদের মতে, ‘সঙ্গী থাকা সত্ত্বেও অন্য একজনকে মনে ঠাঁই দিলে আত্মদংশনে ভোগার কারণ নেই। কোনো সম্পর্কে কোনো প্রতিযোগিতা থাকে না। দায়-দায়িত্বে অবহেলা না করে, নিজের অবস্থান ও সাহস বুঝে তবেই এগিয়ে যান।

অন্তত সমাজ ও নিজের অনুভব, এই অসম লড়াই লড়তে পারার মতো শক্তি আছে কি না ভেবেই আগাবেন, তবে মনে রাখবেন একসঙ্গে দু’জনকে ভালবাসায় কোনো অন্যায় নেই।’