অবশেষে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠকে কপাল খুলতে যাচ্ছে অবৈধ প্রবাসীদের!

আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া: আশায় প্রহর গুনছে অবৈধরা। সংকট উত্তরনে মালয়েশিয়ায় ২৯-৩০ মে দুই দেশের সচিব পর্যায়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

একটি সূত্র জানায়, জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ শুরু হলে একপর্যায়ে সিন্ডিকেট এবং অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে মাহাথির সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ স্থগিত করে। সরকার ঘোষণা দেয় সমগ্র প্রক্রিয়াটি মূল্যায়ন করে একক এবং মানসম্মত প্রক্রিয়া নির্ধারণ করবে।

জানা গেছে, অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ, কর্মীদের বিভ্রান্ত করা, কাজ ও বেতন সম্পর্কে ভুল ধারণা দেয়া , মধ্য পর্যায়ে দালালি ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে। এর মধ্যে অবৈধ অভিবাসীদের প্রসঙ্গ প্রাধান্য পায়। এসব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী মালয়েশিয়া মানব পাচার জনিত হুমকির মুখে রয়েছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সরকার লেবার সোর্স কান্ট্রির সহযোগিতা ছেয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত দুটি জয়েনট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় অবৈধ কর্মীদের বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে।
এছাড়া অবৈধ কর্মীরাও আশায় রয়েছে কোন এক সুন্দর প্রত্যাশায়। আসন্ন ২৯ ও ৩০ মের বৈঠকে অবৈধদের সহজে নিজ দেশে ফিরে যাওয়া বা বৈধ হবার সুযোগ পাবে।

এদিকে মালয়েশিয়ার মানব সম্পদ মন্ত্রী কুলেসগারান বলেছেন, সহজ শর্তে কোম্পানি কর্মী প্রতিস্থাপনের সুযোগ পাবে। সংশ্লিষ্টরা আশা করে এ সুযোগ দিলে অনেক অবৈধ কর্মী বৈধ হতে পারবে।

তবে সম্প্রতি ইমিগ্রেশনের প্রধানের হুশিয়ারি অবৈধ প্রবাসীদের আতংক বিরাজ করছে। তিনি বলেছেন ঈদের পর ব্যাপক তল্লাশি অভিযান করে বিদেশি কর্মীদের ভিসা চেক করবেন। এতে যাদের ভিসা নেই তারা গ্রেফতার হবেন এবং শাস্তির আওতায় আসবেন। এতে করে কর্মীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কুয়ালালামপুরে একটি কন্সট্রাকশন সাইডে কাজ করেন সিলেটের রতন মিয়া। তিনি জানালেন, এ অভিযানের খবর শুনে এখন আতংকে আছেন।

“বৈধতার জন্য সব রকম চেষ্টা চালিয়েছি। বৈধতার পার্মিট তো হয়নি বরং উল্টো পুলিশ এখন আমাদের খুঁজছে। আমরা এখন কোথায় যাব, কী করবো? আমরা একটা আতংকের মধ্যে আছি।”
তিনি বলেন, অবৈধ শ্রমিকরা ইতিমধ্যেই অনেকে পালিয়ে আছেন। তবে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে ঝুঁকি নিয়ে তাদের কাজে আসতেই হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেদেশের সরকারের দেওয়া সুযোগ ইতিমধ্যেই কাজে লাগিয়েছেন। বাকি আনুমানিক ৫০ হাজারের মতো শ্রমিক এই সুযোগ নিতে প্রতারণার শিকার হয়ে এখনো অবৈধ অবস্থায় দেশটিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশন।

হাইকমিশন প্রতারিত হওয়া এবং সরল বিশ্বাসে অর্থ দিয়ে নাম লেখার পরও বৈধ না হবার বিষয় উল্লেখ করে সেদেশের সরকারকে অনুরোধ করে যাচ্ছে। অতি সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর মালয়েশিয়া সফরকালে মানব সম্পদ মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং আনোয়ার ইব্রাহিমের সাথে সাক্ষাত করে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এখন উভয় দেশের বৈঠকে কতটা সুবিধা আদায় হয় সবাই সেদিকে নজর রেখেছে।

এদিকে বাংলাদেশিদের সঙ্গে বিরাট প্রতারণা করেছে বলে পুলিশে অভিযোগ করেছে। হাইকমিশন তাদের জন্য পুলিশকে লিখেছে। এই অভিযোগের ভিওিতে প্রতারকদেরও গ্রেফতার করছে দেশটির অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা।

তবে অধিকাংশ প্রতারকরা মালয়েশিয়া ছেড়ে অন্য দেশ বা বাংলাদেশে বহাল তবিয়তে আছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এশিয়ার অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠন ক্যারাম এশিয়ার আঞ্চলিক সমন্বয়কারী হারুনুর রশিদ এ প্রতিবেদককে বলেন বৈধতার জন্য কাগজপত্র নিয়ে একটি মধ্যস্বত্বভোগী গোষ্ঠীর কাছে গিয়েই বিপাকে পড়েছেন এই শ্রমিকেরা। “দেশটিতে এখনও নানা কাজে বিদেশি শ্রমিক প্রয়োজন হয়। মালয়েশিয়া সরকার অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠাতে এমন অভিযানে না নেমে বরং তাদের বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ দিলে উভঁয় দেশই উপকৃত হবে।”

তিনি বলেন, অভিযানে যাদের আটক করা হবে, তাদের ১৪ দিন সময় দেওয়া হবে বৈধ কাগজ হাজির করতে। তা না পারলে আটকদের জায়গা হবে দেশটির ১২ টি ডিটেনশন সেন্টারে। এসব ভাগ্য বিরম্বিত প্রবাসীর জন্য সত্যিই কষ্টকর। আর বর্তমান ইমিগ্রেশনে সারেন্ডার করে প্রায় ৪-৫ হাজার রিঙ্গিত জরিমানা দিতে হচ্ছে, অপেক্ষা করতে হচ্ছে ১৪ দিন। অনেকে গ্রেফতার হচ্ছেন।

রোগীদের মৃত্যুর রেকর্ডও আছে। এমন প্রক্রিয়ার কারণে অনেকে স্বেচ্ছায় সারেন্ডার করে দেশে ফিরে যেতে আগ্রহী হচ্ছে না। সরকারের উচিত সহজে দেশ ত্যাগের ব্যবস্থা করা। ‘ এধরনের অভিযান চালানোর আগে প্রবাসী কর্মীদের মাধ্যেমে মালয়েশিয়ার উন্নয়নে অবদান রাখার বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ জানান দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসীরা। সকলের আশা জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রপের উপযুক্ত সিদ্ধান্ত হবে। আশায় রয়েছেন সকল প্রবাসী এবং দেশে থাকা পরিবার।