আমার রুমমেটকে প্রতিদিন রাতেই দেখতাম একটা মেয়ের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা রাত জেগে কথা বলতে..সকাল হয়ে যেত,কিন্তু আবেগ আর কথা কোনটাই শেষ হত না..তিন বছরের গভীর রিলেশনশিপে ছিল তারা…প্রায়ই শুনতাম “আমি তোমাকে ছাড়া চলতে পারব না,বাঁচতে পারব না”..গত বছর উনার ব্রেকাপ হয়েছে..বাবা মায়ের পছন্দের একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে আজ তিন মাস হল..
প্রতি বছর রোজা শুরু হওয়ার আগে আগেই একটা বুড়ি আসত আমাদের বাড়িতে..এসে ফেতরার টাকা চেয়ে যেতো , সাথে একটা কাপড়ও .. দু’বছর হলো তারও দেখা নেই … হয়তো অভাব নেই, নয়তো ওপারে চলে গেছে .. এখন দরজায় অন্যকেউ এসে কড়া নাড়ে, তখন সেই ঝাপসা চোখের বুড়িটার কথা আবছা আবছা মনে পড়ে …
রমজানে সেহরীর সময় হলেই মসজিদের বৃদ্ধ মোয়াজ্জেন লোকটা মাইকে সবাইকে ডেকে তুলতো..আর একটি নিজস্ব ভঙ্গীর সুরে মানুষের ঘুম ভাঙ্গাতো…সে আর বেঁচে নেই … তার জায়গায় নতুন একজন এসেছে … সেও তার সুরে ডাকে, আমাদেরও ঘুমভাঙ্গে … তবে ডাকটা খুব অপরিচিত ঠেকে … কোনদিন সেই মুখটা না দেখতে পারা পরিচিত বুড়ো কণ্ঠটার কথা অবচেতনে মনে পড়ে !!
কিংবা মসজিদের একপাশে চেয়ারে বসে যে বয়স্ক মানুষটা নামাজ পড়তেন, সেই চেয়ারে এখন অন্যকেউ বসেন … তার আগেও অন্য একজন বসতেন … চেয়ারটার দিকে চোখ পড়লেই মানুষগুলোর ছবি অবচেতনে চলে আসে !!
মনজগতের ব্যাখা দিতে গিয়ে ফ্রয়েড বলেন, মানুষের মনের জমিটা পৃথিবীর চাইতে বিশাল … এখানে কারো জায়গা পেতে অন্য কাউকে সরাতে হয়না … সবার স্থানই বহাল থাকে, যার যার স্থানে … “ভুলে গেছি” শব্দটি বলে মূলত নিজেকে বা পরকে বুঝ দেই আমরা … ভেতরে থাকা মানুষগুলো জেগে ওঠে সময়ে অসময়ে, বহুদিন পর পর মনের সেলুলয়েডে …
কেউ যেমন আজীবন বেঁচে থাকেনা, তেমন পুরোপুরি মরেও যায়না… পুরোপুরি চলেও যায়না, আবার আজীবন আঙ্গিনায় ও থাকেনা
এ এক অদ্ভুদ দুর্বিষহ আনফিনিশড ইকুয়েশন !!