বিএনপির সংসদ বর্জন আর শপথ না নেওয়ার সঙ্গে একমত নন বিদেশি কূটনীতিকরা। তারা বিএনপির নেতৃবৃন্দকে সংসদে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। যে কজন সংসদ সদস্য আছেন তাদেরকে নিয়ে সংসদে গিয়ে তাদের কথা বলার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। কূটনৈতিক সূত্রে এমন খবর পাওয়া গেছে।
নির্বাচনের পর বিএনপি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউসহ বিভিন্ন কূটনীতিকদের কাছে নির্বাচনের অনিয়ম ও ভোট কারচুপি সংক্রান্ত অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তারা সংসদে শপথ গ্রহণ করবে না বলেও আনুষ্ঠনিকভাবে ঘোষণা করেছে।
কিন্তু অধিকাংশ দূতাবাসই বিএনপির এ অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানায়নি। বরং তারা বলেছে যে, বিএনপির সংসদে যাওয়া উচিত এবং সংসদে গিয়ে একটা বিরোধী দল হিসেবে তাদের যৌক্তিক ভূমিকা পালন করা উচিৎ।
আজ বিএনপির একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানে তারা সংসদে যাওয়ার কথা বলেছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনে কারচুপির স্বরূপ উন্মোচনের জন্য বিএনপির দু’জন শীর্ষস্থানীয় নেতা ভারতের দূতাবাসের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলেন। যে বৈঠকে বিএনপিকে ঐ কূটনীতিকরা সংসদে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সংসদে যাওয়াসহ ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে পাঁচটি পরামর্শ দিয়ে গঠনমূলক রাজনৈতিক ধারা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছে। এই পরামর্শগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
১. সংসদে যোগদান:
যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত বিএনপিকে বলেছে যে, যত ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দলই হোক না কেন সংসদে গিয়ে কথা বলতে হবে। যদি তাদের কথা না দেওয়া হয়, কিংবা তাদের বক্তব্য না শোনা হয়, সেই বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক মহল দেখবে। সেটাই গণতান্ত্রিক রীতি।
২. ২০ দলীয় জোট বিলুপ্ত করা:
বিএনপিকে ২০ দলীয় জোট বিলুপ্ত করা পরামর্শ দিয়েছে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকে ২০ দলীয় জোটের কোনো কার্যক্রম নেই এবং ২০ দলে যেহেতু জামাতসহ ইসলামপছন্দ মৌলবাদী রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে তাই এই জোট বিলোপ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দিকে মনোনিবেশ করার জন্যই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিএনপিকে।
৩. তারেক জিয়াকে সরিয়ে দেয়া:
ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন তিনটি পক্ষই আপাতত তারেক জিয়াকে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। তারেক জিয়ার নেতৃত্বে থাকা বাস্তবসম্মত নয় বলে এই তিনটি পক্ষ প্রায় অভিন্নভাবে মতামত দিয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের বক্তব্য হচ্ছে যে, যেহেতু তিনি দেশের বাইরে এবং একাধিক মামলায় দণ্ডিত, সেজন্যে তার নেতৃত্বে থাকা উচিৎ নয়।
যে কারণে বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারপারসন নেই, সেই একই কারণে তারেক জিয়ারও বিএনপির নেতৃত্বে থাকা উচিৎ নয়। বরং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজন ক্লিন ইমেজধারীর নেতৃত্বে বিএনপির রাজনীতি এগিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
৪. গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারা থেকে বিচ্যুত না হওয়া:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরামর্শ দিয়েছে যে, কোনো অবস্থাতেই বিএনপি যেন গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথ থেকে বিচ্যুত না হয়। সহিংসতা, সন্ত্রাসবাদ বা অন্য কোনো পন্থায় আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে হটিয়ে দেওয়ার কৌশল যেন বিএনপি গ্রহণ না করে। বরং গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারায় বিএনপি যেন ধাপে ধাপে অগ্রসর হয় সে পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
৫. সেক্যুলার রাজনীতির চর্চা করা:
ভারতের পক্ষ থেকে বিএনপিকে পঞ্চম যে পরামর্শটি দেওয়া হয়েছে তা হলো, সেক্যুলার রাজনীতির চর্চা করা। বিএনপি যেন তার রাজনীতিতে সকল ধর্মের সহাবস্থান এবং ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে তার নীতি এবং কৌশল প্রনয়ণ করে সেজন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই পরামর্শগুলোর মাধ্যমে কার্যত সংসদে যাওয়ার জন্য বিএনপির ওপর চাপ আরও বাড়লো। বিএনপি যদিও এখনো বলছে যে, কোনো অবস্থাতেই তাদের নির্বাচিত ৬ জন সাংসদ শপথ নেবে না এবং সংসদে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বিএনপি তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সংসদের অধিবেশন গত ৩০ জানুয়ারি শুরু হয়েছে। আইন অনুযায়ী, সংসদের আগামী ৯০ কর্ম দিবসের মধ্যে তাদের সংসদে যোগ দেওয়ার কথা।