আমাদের মিডিয়ার অসুন্দর(!) মানুষগুলো …
গরীবের সুন্দরী বৌ সকলের ভাবি। কথা’টা এতদিন শুধু রাজীনীতিবিদদের ক্ষেত্রে খুবই প্রযোজ্য ছিল। যে কেউ তাদেরকে নিয়ে সমালোচনা করে জাতে উঠতো। এখন এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে মিডিয়ার মানুষগুলোও। কারণ ইদানীং তাদেরও কেউ কেউ রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ভাবে সম্পৃক্ত হয়েছেন বা হতে চাচ্ছেন।
অহ আরেকটা কথা শুরুতেই বলে রাখি, মুক্তিযুদ্ধের পর চলচ্চিত্র জগৎ’টাকে পুনর্গঠিত করেছিল কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা রাজনীতিবিদরাই। নায়ক সোহেল রানা, ফারুক, খসরু, প্রয়াত মাহবুব খান গুই ও সিদ্দিক জামাল নান্টুদের বঙ্গবন্ধুই এফডিসি পুনর্গঠন করতে পাঠিয়েছিলেন। যারা সবাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও ঐসময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা।
মিডিয়ার মানুষগুলো অন্য যে কারোর চেয়ে বেশি রাজনীতি সচেতন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও আমরা দেখেছি স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের অগ্রনী ভূমিকা। মুক্তিরগানের কল্যানে দেখেছি তারা কিভাবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে দেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ৯০ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ৯৬ সালের খালেদা বিরোধী আন্দোলনেও তাদের ভূমিকা ছিল প্রশংসার দাবিদার।
তবে তখনকার আর এখনকার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে আগের দিনে মাঝে মধ্যে পত্রিকায় নিউজ গুলো দেখা যেত। এই ভার্চুয়াল মিডিয়ার যুগে প্রচারণাটা অনেক বেশি হচ্ছে। তাই হয়তো বিষয়গুলো সবার চোখে পড়ছে।
এতদিন যখন তারা আওয়ামীলীগের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন তখন শুধু বিএনপি-জামাত তাদের বিপক্ষে কথা বলেছে। ওনাদের কেউ কেউ যখন মনোনয়ন পত্র কিনেছেন তখন আমাদের লোকজন সমালোচনায় মেতে উঠেছেন। অবশ্যই এর যৌক্তিক কারণও আছে। কারণ কিছু মৌসুমী পাখিও এমপি হবার দৌড়ে সামিল হয়েছেন।
এখন যদি বলি মৌসুমী পাখিদের মনোনয়নপত্র কেনাটাও পরিকল্পিত। মিডিয়ার মানুষগুলোকে বিতর্কিত করার জন্যই তারা পরিকল্পনার অংশ হিসাবে এটা করেছেন।
কারণ পরিকল্পনাকারীরা খুব ভালো করেই জানে, মৌসুমী পাখিরা এমপি হবার দৌড়ে সামিল হলে স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামীলীগের লোকজন সমালোচনায় মেতে উঠবেন।
কারণ সরকারি দলে সমালোচনা করা আর নিজেদের বিরুদ্ধে নিজেরা লাগা ছাড়া কোনো কাজ অনেকেই খুঁজে পান না। আর এই ২/৩জনের জন্য সমালোচনা করতে গিয়ে পুরো মিডিয়ার মানুষগুলোকেই বিতর্কিত করা হচ্ছে, যা নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামাত করেছে। তাই মৌসুমী পাখিদের দিয়ে পরিকল্পিতভাবে মনোনয়নপত্র তোলানো হয়েছে।
যাদেরকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হচ্ছে তারা সংস্কৃতি জগতের মানুষ। তাদের ব্যক্তিত্ব কিংবা ভূমিকা বিতর্কিত করতে পারলে লাভ’টা কাদের তা একটু গভীরে গিয়ে দেখতে হবে, শুধু গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসালেই চলবে না।
এই দেশে সংস্কৃতির ধারক বাহক কিংবা পৃষ্ঠপোষক যাই বলিনা কেন তা হচ্ছে একমাত্র আওয়ামীলীগ। আর সংস্কৃতিকে বিতর্কিত করতে চায় মৌলবাদী গোষ্ঠী। সুতরাং মৌসুমী পাখিদের মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে দিয়ে বিতর্ক তৈরী করে কারা লাভবান হচ্ছে তা সহজেই বুঝা যায়।
আর আওয়ামীলীগ ঐতিহ্যগতভাবেই দেশের সর্বশ্রেণীর মানুষের দল, শুধু যারা রাজনীতি করেন তাদের দল না। সুতরাং মনোনয়ন যে কেউ চাইতেই পারেন। হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষ যেমন মনোনয়নপত্র কিনেছেন, ২/৩জন কৃষানীও কিনেছেন- এটাই আওয়ামীলীগের সৌন্দর্য্য। নির্বাচিত করার কিংবা না করার স্টিয়ারিং কিন্তু রাজনীতিবিদদের হাতেই। সুতরাং নিজেদের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকলে এতো উত্তেজিত হবার কিছু নেই।
আর সংস্কৃতি অঙ্গনের যারা নির্বাচনী প্রচারণায় জড়িত হয়েছেন তারা কাদের নেতৃত্বে ছিলেন ? রাজনীতিবিদের নেতৃত্বেই ছিলেন। তখন যদি প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন, তাহলে এখন কেন সহ্য হচ্ছেনা। এটাকি খুব স্বার্থপর আচরণ হয়ে যাচ্ছেনা ?
আমি নিজে এদের কাউকে মিছিল মিটিংয়ে নিয়ে যাইনি। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য অর্ধশত ভিডিও তৈরী করেছি, কেউতো আমার কাছে একটা চা- কফিও খেতে চাননি।
অনেকে শুটিং শিডিউল মিস করেও এসেছেন। কাউকে জোর করেও আনা হয়নি। নাগরিক দায়িত্ববোধ থেকেই এসে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন। এতে কি তারা কি খুব বেশি অপরাধ করে ফেলেছেন ? তাহলে কেন ২/৩ জনের জন্য পুরো সংস্কৃতি জগৎকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। পক্ষান্তরে কাকে লাভবান করা হচ্ছে ?
অবশ্য আমাদের জাতিগত একটা সমস্যা হচ্ছে, সহজে কিছু পেয়ে গেলে তার মূল্য দিতে পারিনা,সস্তা মনে হয়। যাদেরকে পয়সা খরচ করে সিনেমা-থিয়েটারে দেখতে যেতাম, এখন তাদেরকে হাতের কাছেই পাওয়া যাচ্ছে। এটাও আরেকটা সমস্যা- সস্তা মনে হয়। তাই হয়তো এই যাচ্ছে তাই আচরণ।
লেখক: আশরাফুল আলম খোকন
(লেখকের ফেসবুক থেকে নেওয়া)