অতিষ্ঠ হয়ে রাতে লাঠি হাতে পাহারায় গ্রামবাসী

পাবনা শহরে গরু-ছাগল চুরির ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। কিছুদিন আগে প্রায় প্রতিরাতেই বিভিন্ন গ্রামে হানা দেয় সংঘবদ্ধ চোরের দল। একের পর এক চুরির ঘটনায় আতঙ্ক আর উৎকন্ঠায় থাকা সাধারণ মানুষ ও গরুর খামারিরা চুরি ঠেকাতে দলবদ্ধ হয়ে পাহারা দিচ্ছেন। শীতকে উপেক্ষা করে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় রাত জেগে লাঠি হাতে পাহারায় রাত পার করছেন তারা। চোর ঠেকাতে গাড়িচাপায় প্রাণ গেছে একজনের।

গত ১৬ জানুয়ারি ভোরে পাবনার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর থেকে মহিষ চুরি করে কাভার্ডভ্যানে করে পালানোর চেষ্টা করে সংঘবদ্ধ চোরের দল। রামনগর ঘাট এলাকায় গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করলে কাভার্ডভ্যান চাপায় মারা যায় রব্বান আলী নামের এক ব্যক্তি। শুধু চাটমোহর নয়, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে গরু-মহিষ চুরির ঘটনা।

গত এক মাসে জেলার নয়টি উপজেলায় শতাধিক গরু ও মহিষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। চুরিতে পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান ব্যবহার করছে তারা। এতে দিশেহারা হয়ে পড়ে মানুষ চুরি ঠেকাতে লাঠি-বাঁশি নিয়ে মাঠে নেমেছে। পাড়া-মহল্লায় কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে রাত জেগে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছেন তারা। তাদের সঙ্গে রয়েছে গ্রাম-পুলিশ ও ইউপি সদস্যরা। শীতকে উপেক্ষা করে রাত ১২টা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত দলবদ্ধভাবে পাহারা দিচ্ছেন গ্রামবাসী।

সরেজমিন উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বালুদিয়ার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বেশ কিছু মানুষ শীতকে উপেক্ষা করে হাতে লাঠি নিয়ে গ্রামের রাস্তাঘাট পাহারা দিচ্ছেন। সঙ্গে বাজাচ্ছেন বাঁশি। সারা রাত পাহারা দেওয়ার পর সকালে সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ফিরছেন সবাই। এতে দৈনন্দিন কাজকর্মে অসুবিধা হলেও চুরি রোধে অনেকটা বাধ্য হয়ে পাহারা দিচ্ছেন তারা।

উপজেলার বালুদিয়ার গ্রামের বাবুল আক্তার, মোহাম্মদ আলী, শহীদ হোসেন, মানিক হোসেন নামে বেশ কয়েকজন জানান, অনেকেই বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ করে গরু পালন করছেন। তাদের এই সম্পদ চুরি হয়ে গেলে রাস্তায় বসতে হবে। যেভাবে গরু চুরি হচ্ছে তাতে সবাই আতঙ্কে রাত পার করছেন। সেজন্য চুরি ঠেকাতে বাধ্য হয়েই গ্রামের সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরাতে পালাক্রমে গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন।

চাটমোহর মুলগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান ও ছাইকোলা ইউপি চেয়ারম্যান জানান, এলাকাবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে গ্রামে প্রবেশ ও বাহির মুখসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পাহারা বসানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে গ্রাম-পুলিশ ও ইউপি সদস্যরাও কাজ করছেন। সবাই এভাবে সজাগ থাকলে শুধু চুরি-ডাকাতি নয়, মাদক পাচারও বন্ধ হবে বলে মনে করেন তারা।

চাটমোহর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেখ নাসীর উদ্দিন বলেন, গবাদি পশু চুরি ঠেকাতে প্রতি ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধি ও গ্রামবাসীর সঙ্গে বৈঠক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর চোর চক্রকে ধরতে পুলিশও কাজ করছে।

গবাদি পশু চুরির ঘটনায় এখন পর্যন্ত জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তাই চুরি রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হওয়ার পরামর্শ দেন সচেতন সমাজ।

————————-
মজার মজার ভিডিও দেখুন টাচ করে