ভোর থেকেই কেন্দ্র দখলে রাখতে বিএনপি-জামায়াতের ব্যাপক প্রস্তুতি

একের পর এক মামলা-হামলায় জর্জরিত কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় তেমন প্রকাশ্য হতে না পারলেও ভোটের দিন রবিবার কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ দিন ফজরের আজানের পর পরই দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা একযোগে মাঠে নামবেন। সেই সাথে পাড়া-মহল্লার নারী-পুরুষ ভোটারদেরও একত্রিত করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের।

বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, রবিবার নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন সাধারণ ভোটারেরা অবাধ যাতায়াত করতে পারবেন ভোটকেন্দ্রে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকেও থাকবে জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এই সুযোগে সাধারণ ভোটারের মধ্যে ঢুকে গিয়ে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ভোটকেন্দ্রগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নানা কারণে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হাসিনা আহমেদ প্রচারণায় মাঠে থাকতে পারেননি। তবে ভেতরে ভেতরে দলটি নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। এরই অংশ হিসেবে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ১৩৯টি ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কয়েক শ দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে শক্ত কমিটিও গঠন করেছেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক ভোটকেন্দ্র পাহারায় কেন্দ্রভিত্তিক গঠিত এই কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নীরবে প্রচারণা চালান।

এ সময় তারা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরিতেও অনেকটা সফল হয়েছেন। এমনকি তাদের প্রার্থী অ্যাডভোকেট হাসিনা আহমেদ ও তাঁর স্বামী বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ কর্তৃক ভোটারদের উদ্দেশে লেখা চিঠিও বিলি করেছেন নারী-পুরুষ ভোটারদের মাঝে। যার ফলশ্রুতিতে ভোটের দিন একেবারে ভোর থেকেই প্রতিটি গ্রাম-মহল্লা থেকে নারী-পুরুষরা বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা ভোটকেন্দ্রে যাতে চলে যায়। এটি সম্ভব হলে চূড়ান্ত সফলতা আসবে বলে মনে করছেন বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভা যুবদলের একাধিক নেতা বলেন, আমাদের প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণা করতে গেলেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সশস্ত্র লোকজন হামলা করছে। হামলায় বিএনপি নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন অনেক। আবার একের পর এক মামলায় জড়িয়ে দেওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রচারণায় না নেমে চুপ থাকেন। তবে হামলা ও মামলায় আমরা একেবারে দমে না গিয়ে ভেতরে ভেতরে প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে ভোটারদের আহ্বান করেছি আগামী ৩০ ডিসেম্বর ধানের শীষে ভোট দিতে একেবারে ভোর থেকেই কেন্দ্রে চলে যেতে।

তারা আরো বলেন, আমরা মাঠপর্যায়ে ভোটারদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছি, সকাল সকাল কেন্দ্রে না গেলে আপনাদের (ভোটার) ভোট দিতে পারবেন না। এই কথা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন ভোটাররাও। বিশেষ করে নারী ভোটাররা যাতে একেবারেই ভোর থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে চলে যায় সে জন্য আমরা মাঠে কাজ করেছি।

চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার বলেন, ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মানুষের জন্য আরেকটা বিজয় অপেক্ষা করছে। সেই বিজয় আসবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের ঘরে। সে জন্য আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে রয়েছি। রবিবার ফজরের আজানের পর থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোর আশপাশে স্রোত নামবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সাধারণ জনতার। আর তাদের পাশে থাকবেন আমাদের নেতাকর্মীরা।

চকরিয়ার উপকূলীয় বদরখালীর এক বিএনপি নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুধু ভোটকেন্দ্র নয়, প্রতিটি অলি-গলি সয়লাব হয়ে পড়বে বিএনপি সমর্থিত সাধারণ মানুষে। তারা ভোটের ফলাফল নিয়েই ঘরে ফিরবে তার আগে নয়। এ জন্য দলের পক্ষ থেকে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, বিএনপির পক্ষে রাজপথের আন্দোলন বেগবান করার জন্য গত ১০ বছর তো অনেকবার চেষ্টা করা হয়েছে। সেই চেষ্টা পুরোপুরি সফল না হলেও এবার বিএনপিসহ জোটের নেতাকর্মীরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামবে ভোটের দিন। তখন প্রশাসনের আর কিছুই করার থাকবে না। এর পরেও গায়ে পড়ে কেউ বিএনপির ওপর কোনো ধরনের আঁচড় দেওয়ার চেষ্টা করলে মরণকামড় দিতে দ্বিধা করবেন না তারা। সেই প্রস্তুতিসহ যাবতীয় চিন্তা মাথায় রেখেই অপেক্ষার প্রহর গুনছি ৩০ ডিসেম্বরের জন্য।

গণমাধ্যমে প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কক্সবাজার ১ আসনে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হাসিনা আহমেদ বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন চকরিয়া-পেকুয়ার সালাহউদ্দিনপ্রেমী জনগণ দেখিয়ে দেবে তারা অপশাসন-দুঃশাসনের বিরুদ্ধে। এ জন্য চকরিয়া-পেকুয়ার মানুষ অপেক্ষায় রয়েছেন ভোটের মাধ্যমে তাদের রায় দেওয়ার জন্য।

ভারতের শিলংয়ে অবস্থানরত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদও একটি ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন চকরিয়া ও পেকুয়ার ভোটারদের উদ্দেশে। সেখানে তিনি বর্তমান সরকারকে গণবিরোধী আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় অর্জিত হয়েছিল। আগামী ৩০ ডিসেম্বর আরো একটি বিজয় হবে, সেই বিজয় হবে জনগণের বিজয়, গণতন্ত্রের বিজয়। তাই এ দিন ঘরে বসে না থেকে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিয়ে এই স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটাই।–কালেরকন্ঠ