কিসের নির্বাচন, কার নির্বাচন, কেমন নির্বাচন: প্রশ্ন রনির

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরে পটুয়াখালী-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী গোলাম মাওলা রনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার অফিসিয়াল পেজে আজ বুধবার একটি স্ট্যাটাস দেন।

তার স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো…

‘আমি সারাজীবন যাকে গণতন্ত্রের মানস কন্যা বলে এসেছি এবং যার মঙ্গল কামনায় তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে বহুবার অঝোরে অশ্রু বিসর্জন করেছি তার উদ্দেশ্যেই আজকে আমি দু’কলম লিখতে বসেছি।

আমি আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে গিয়েছি নিজের আত্মমর্যাদা ও রাজনৈতিক সত্ত্বা বাঁচিয়ে রাখার জন্য। কারণ আওয়ামী লীগ আমাকে বিগত দিনে একজন উটকো ঝামেলার আবর্জনা ও মূল্যহীন মনে করেছে। দলটিতে আগামী দিনেও যে আমার দু-পয়সার মূল্য হবে না সেটা অনুমান করার পরই ভেবেচিন্তে বিএনপিতে যোগ দেই।

বিএনপির বর্তমান দুরাবস্থা ও সংকটকালে আওয়ামী লীগের মতো একটি নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে সংকটের সাগরে ঝাঁপ দেওয়া কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এমপি হওয়ার লোভ বা অন্য কোনো কারণে কেউ এই কাজ করতে সাহস পাবেন না- যদি না কারো ভেতরে জাতীয় স্বার্থ এবং নিজের রাজনৈতিক সত্ত্বা বাঁচিয়ে রাখার আকাংখা সুতীব্র না হয়ে উঠে।

আমি বিএনপিতে যাওয়ার পরও আমার সাবেক দল ও নেতানেত্রী সম্পর্কে কটুক্তি করিনি এবং কোনো কালে সেটা সম্ভবও হবে না। বরং গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগ বেঁচে থাকুক এই শুভ কামনা সব সময়ই থাকবে।

একাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সারাদেশে এই মুহূর্তে যা হচ্ছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো শক্তি আমার নেই। গণতন্ত্রের মানসকন্যার কথা বিশ্বাস করে আমি এবং আমার মতো যারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনকে অর্থবহ করার জন্য মাঠে নেমেছে তারা যে বর্তমানে কি দুর্ভোগ-দূর্দশা,বিপদ-বিপত্তি এবং প্রাণ সংহারী অবস্থার মধ্যে পড়েছি তা কেবল আসমানের মালিকই বলতে পারবেন।

রাষ্ট্রযন্ত্রের আশ্বাস, প্রশ্বাস এবং আশ্রয় দেবার ক্ষমতার ওপর সাধারণ মানুষের যে অবিশ্বাস, অনাস্থা ও সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে তা কবে এবং কোথায় গিয়ে কীভাবে শেষ হয় তা যদি ক্ষমতাসীনরা ভাবতেন তবে আখেরে তাদেরই মঙ্গল হতো।

আমার নির্বাচনী এলাকা পটুয়াখালী-৩ সংসদীয় আসনের গলাচিপা ও দশমিনায় বিএনপির সামান্যতম নির্বাচনী কর্মকাণ্ড নেই। দুই উপজেলার বিএনপির অফিস তালাবদ্ধ। অন্ততঃ একশজন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। প্রায় হাজার খানেক সামর্থবান নেতাকর্মী এলাকাছাড়া।

দরিদ্র কর্মীরা পুলিশের ভয়ে বাড়িছাড়া হয়ে ধানক্ষেত, পানের বরজ ও ঝোপে জঙ্গলে রাত কাটাচ্ছেন। হাট-বাজার, দোকানপাট বেচা-বিক্রি বন্ধ হতে চলেছে। কোন ভদ্রলোক বেইজ্জতি হবার ভয়ে পারত পক্ষে রাস্তায় বের হচ্ছেন না। লোকজনকে লাঞ্চিত অপমানিত ও মারধোর করে আওয়ামীলীগে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।

অন্য এলাকায় কি হচ্ছে তা বলতে পারবো না। তবে আমার এলাকায় পুলিশী নির্যাতন কিভাবে হচ্ছে তা যদি জননেত্রী জানতেন তবে নিশ্চয়ই তিনি ঘৃণায় তার সুবোধ বালকদের ভৎর্সনা করতেন। সমাজে যে ঘৃণা-বিদ্বেষ, প্রতিশোধ স্পৃহা দানা বাঁধছে তা অর্বাচীনেরা না বুঝলেও জননেত্রী যে বুঝেন তা আমি দিব্যি করে বলতে পারি।

জাতির জনকের কন্যা, বঙ্গবন্ধু কন্যা অথবা গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসেবে তিনি যদি এদেশবাসীর মধ্যে বেঁচে থাকতে চান তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রশাসনীয় সন্ত্রাস তার সেই আশা-আকাংখার মূলে যে কতোবড় কুঠারাঘাত তা তিনি যদি এখনও বুঝতে পারেন তবে সকল পক্ষের জন্যই মঙ্গল।’–আমাদেরসময়