কুমিল্লার প্রার্থীদের সম্পদের পাহাড়

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া কুমিল্লার ১০ প্রার্থীর রয়েছে সম্পদের পাহাড়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের রয়েছেন সাত এবং বিএনপির তিন প্রার্থী। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তাদের অনেকের শত কোটি টাকার ওপরে সম্পদ রয়েছে। আবার অধিকাংশরই নিজের চেয়ে স্ত্রীর সম্পদ বেশি।

কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-মেঘনা) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব) সুবিদ আলী ভূঁইয়া এমপির চেয়ে তার স্ত্রী মাহমুদা বেগম ভূঁইয়ার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেশি। হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে সুবিদ আলীর অস্থাবর সম্পদ ১ কোটি ১ লাখ ৬৩ হাজার ৪১৭ টাকা আর ৪ কোটি ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ৯৬০ টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। তার স্ত্রী মাহমুদা বেগম ভূঁইয়ার অস্থাবর ২ কোটি ৬৫ লাখ ৯৬ হাজার ৬০ টাকা এবং স্থাবর সম্পদ রয়েছে ৩ কোটি ২৯ লাখ ১৬ হাজার ৫০০ টাকার। এ সংসদ সদস্যের আয়ের বড় অংশ আসে ভাড়া থেকে, বছরে ৬২ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫১ টাকা। আর এমপি হিসেবে পান ২৩ লাখ ৫ হাজার ৩৫০ টাকা।

কুমিল্লা-১ ও কুমিল্লা-২ (হোমনা তিতাস) আসনে নির্বাচন করতে দাখিল হলফনামায় দেখা গেছে, বিএনপি প্রার্থী ড. খন্দকার মোশাররফ ও তার স্ত্রী বিলকিস মোশাররফের সম্পদ প্রায় সমান। মোশাররফের অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে, ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার ২৭৯ টাকা আর বিলকিসের ৭ কোটি ৩৮ লাখ ৭ হাজার ৯৪২ টাকা। দুজনের কাছে ৮ লাখ ৫৩ হাজার ১৪২ পাউন্ড বৈদেশিক মুদ্রাও রয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ কোটি ৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।

অন্যদিকে ড. মোশাররফের ৬ কোটি ৭১ লাখ ৪৪ হাজার ৯৩৪ টাকার স্থাবর সম্পদ আর স্ত্রীর ৫ কোটি ৮৪ লাখ ৬৪ হাজার ২১৪ টাকার সম্পদ। মোশাররফের ৬৭ লাখ ৮৩ হাজার ৪০৪ টাকা দেনাও আছে। তার আয়ের উৎস ভাড়া থেকে বছরে ১ কোটি ৬৬ হাজার ১১৬ এবং কৃষি খাতে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা আসে। এ ছাড়া ব্যাংক ও আমানত সুদ থেকে আয় ৭ লাখ ৭৮ হাজার ৩২৪ টাকা।

হোমনা-তিতাস আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিমা আহমাদ মেরির চেয়ে অবশ্য স্বামী শিল্পপতি আবদুল মাতলুব আহমাদের সম্পদই বেশি। হলফনামা অনুযায়ী, মেরির অস্থাবর সম্পদ ১২ কোটি ২১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৭ টাকা আর মাতলুবের ১৩৭ কোটি ৯৪ লাখ ২১ হাজার ৫৬৯ টাকা।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর স্থাবর সম্পদ ৬ কোটি ১১ লাখ ৫ হাজার ১৪০ টাকার হলেও স্বামীর ১৪ কোটি ৮৭ লাখ ৩০ হাজার ৯২৬ টাকার। ছেলে আবদুল মুসাব্বির আহমাদের নামে ঋণ রয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

মুরাদনগর আসনে (কুমিল্লা-৩) আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের অস্থাবর সম্পদ ১৮৩ কোটি ৭৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫২৬ এবং স্থাবর সম্পদ ৯ কোটি ৩ লাখ টাকার। ব্যবসা থেকে তিনি বছরে ৭ লাখ ২৯ হাজার ৫৭৬ টাকা আয় করেন, শেয়ার থেকে ৪৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮১৬ টাকা। তার সবচেয়ে বেশি আয় সংসদ সদস্য হিসেবে পারিতোষিক ও ভাতাদি বাবদ, ২৩ লাখ ৬৬ হাজার ৩৭৫ টাকা।

কুমিল্লা-৬ সদর আসনে নৌকার মাঝি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ৭ কোটি ৫৮ লাখ ৪০ হাজার ৭৮১ টাকার, স্ত্রীর নামে ১ কোটি ১৭ লাখ ৪০ হাজার ৫২ টাকার। এ সাংসদের স্থাবর সম্পদ ১ কোটি ৮৪ লাখ ৬৫ হাজার এবং স্ত্রীর ৮৫ লাখ টাকার। যৌথ মালিকানায় স্থাবর সম্পদ সোনালী স্কয়ারের মূল্য ৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

তবে কুমিল্লার মনোহরপুরের সোনালী স্কয়ারের দোকানদার ও ফ্ল্যাটের অগ্রিম হিসাবে দায়দেনা রয়েছে ৭ কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ টাকা। বছরে আয় ৩ কোটি ৪১ লাখ ২৬ হাজার ৬৫০ টাকা। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে সর্বোচ্চ ২ কোটি ৯৫ লাখ ২ হাজার ৮৫০ টাকা আয় করেন। হোটেল সোনালী (আবাসিক) থেকে নির্ভরশীলরা আয় করেন বছরে ১৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

একই আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আমিনুুর রশিদ ইয়াছিনের অস্থাবর সম্পদ ১৭ কোটি ৬ লাখ ৮১ হাজার ৭৪৭ টাকার এবং তার স্ত্রীর ৯ কোটি ৮১ লাখ ৪৬ হাজার ৪৩৮ টাকার। আমিনুরের স্থাবর সম্পদ রয়েছে ২ কোটি ৬০ লাখ ২৪ হাজার ৫৮৫ টাকার আর স্ত্রীর নামে ২৯ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকার। তবে এই প্রার্থীর কোনো দায় দেনা নেই। শেয়ার থেকে তিনি বছরে সর্বোচ্চ ১ কোটি ২৬ লাখ ১ হাজার ৩৯১ টাকা, চাকরি (অনুতোষিক) খাতে ১৮ লাখ টাকা আয় করেন। ব্যবসা থেকে তার কোনো আয় নেই।

কুমিল্লা-৮ বরুড়া আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নাসিমুল আলম চৌধুরীর অস্থাবর সম্পদ ৮ কোটি ৮৫ লাখ ৫৪ হাজার ৭৮৯ টাকার। আর ৩ কোটি ৮৮ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৫ টাকার রয়েছে তার স্ত্রীর। নাসিমুলের স্থাবর সম্পদ ১ কোটি ৫০ লাখ ৪৭ হাজার ৫৫১ এবং স্ত্রীর ২৩ লাখ ১০ হাজার টাকার। ভাড়া থেকে তার সর্বোচ্চ আয় ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪৬৫ টাকা।

এ আসনের বিএনপি প্রার্থী জাকারিয়া তাহের সুমনের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ১৩০ কোটি ৫৪ লাখ ১ হাজার ৮৯ টাকার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদ রয়েছে শেয়ার খাতে। সুমনের স্ত্রীর নামে ৮৫ কোটি ৬০ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৫ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এ প্রার্থীর স্থাবর সম্পদ রয়েছে ৫ কোটি ৬৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৯৭, আর স্ত্রীর নামে ৩ কোটি ৬৬ লাখ ৫৫ হাজার ২৮১ টাকার। তিনি সম্মানী ভাতা হিসেবে বছরে ৮৪ লাখ টাকা এবং শেয়ার খাতে বছরে ২ কোটি ২৭ লাখ ৫১ হাজার ৬৩২ টাকা আয় করেন।

লাকসাম আসনে (কুমিল্লা-৯) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া তাজুল ইসলাম এমপির অস্থাবর সম্পদ ২৮ কোটি ৩৬ লাখ ৯২ হাজার ৯৩১ টাকার। আর স্থাবর সম্পদের মূল্য ১৯ কোটি ১ লাখ ৯১ হাজার ৩০৫ টাকা। শেয়ার ও ব্যাংক আমানত থেকে তার সর্বোচ্চ আয় বছরে ২ কোটি ৯৪ লাখ ৫ হাজার ৩৩১ টাকা।

কুমিল্লা-১০ নাঙ্গলকোট, লালমাই ও সদর দক্ষিণ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্থাবর সম্পদ ৬৮ কোটি ৫৫ লাখ ৯৮ হাজার ৬২ টাকার। তার স্ত্রী কাশমিরী কামালের রয়েছে ৪৯ কোটি ১৫ লাখ ১২ হাজার ৩১৫ টাকার অস্থাবর সম্পদ। মন্ত্রীর স্থাবর সম্পদ ২ কোটি ৩২ লাখ ৩০ হাজার ৭৮৪, আর স্ত্রীর ২ কোটি ১৬ লাখ ৯২ হাজার ৪৪৮ টাকার। আ হ ম মুস্তফা কামালের বছরে আয় ৯ কোটি ২ লাখ ১২ হাজার ৪৬৫ টাকা।

এ ছাড়া দুই-তিনজন বাদে কুমিল্লা প্রায় সব প্রার্থীই কোটি টাকার ওপরে সম্পদ দেখিয়েছেন