তোফায়েলের ভাতিজা বনাম বিএনপির হাফিজ

বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান উপজেলা নিয়ে গঠিত ভোলা-২। স্বাধীনতার আগে-পরে মিলিয়ে বেশির ভাগ সময় আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে। আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের আসন হিসেবে পরিচিত হলেও আসনটির বর্তমান সাংসদ তারই ভাতিজা আলী আজম মুকুল। তোফায়েলের ছেড়ে দেওয়া আসনটিতে এবারও ভাতিজা মুকুল নৌকার হাল ধরছেন এমনটা এলাকায় বেশ আলোচিত। তার সঙ্গে ধানের শীষের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাফিজ ইব্রাহিম।

এই আসনে মোট ভোটার দুই লাখ ৮৯ হাজার ৬৬৩। স্বাধীনতার আগে ও পরে এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে দুইবার এমপি হন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ভাষাসংগ্রামী রেজা-এ-করিম চৌধুরী (চুন্নু মিয়া)। ১৯৮৬ সালে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ।

১৯৮৮ সালে এমপি হন জাতীয় পার্টির নেতা সিদ্দিকুর রহমান ওরফে হাইকমান্ড সিদ্দিক। ১৯৯১ ও ১৯৯২ সালে এই আসনটি আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদের দখলে থাকে। ২০০১ সালে আসনটি দখলে নেয় বিএনপি। এমপি হন হাফিজ ইব্রাহিম। ২০০৮ সালে আবার এমপি হন তোফায়েল আহমেদ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে তোফায়েল আহমেদ আরেকটি আসন থেকে বিজয়ী হওয়ায় আসনটি ছেড়ে দেন ভাতিজাকে। পরে উপনির্বাচনে এখান থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন আলী আজম মুকুল। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ইউছুফ হোসেন হুমায়ুন, ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বোরহানউদ্দিন উপজেলা চেয়ারম্যান মহাব্বত জান চৌধুরী, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহবুবুর রহমান হিরন, নাজিউর রহমান মঞ্জুর ছেলে আশিকুর রহমান শান্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ, বোরহানউদ্দিন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শাহীন চৌধুরী।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন কিনেছেন সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিম, তার ছেলে মারুফ ইব্রাহীম আকাশ, কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম মমিন, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা শহিদুল্লাহ তালুকদার, প্রবাসী জাহাঙ্গীর এম আলম ও অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন কিনেছেন জেলা সভাপতি কেফায়েত উল্লাহ নজিব, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান। এ ছাড়াও ইসলামী আন্দোলন থেকে ইতিমধ্যে মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন মাওলানা ওবায়েদ বিন মোস্তফা।

এই আসনে প্রচার-প্রচারনায় আওয়ামী লীগের তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে রয়েছেন বিএনপি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তারা কেউ এলাকায় তেমন আসছেন না। এদের মধ্যে অনেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে থাকেন। কেউ দেশের বাইরেও থাকেন।

এই আসনে এবারও তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা আলী আজম মুকুল মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পাখি কখনো ডাল ভাঙার ভয় করে না। সে ভরসা রাখে ডানার ওপরে। আমিও ডাল ভাঙার ভয় করি না। আমার আল্লাহর ওপরে ভরসা রয়েছে। আর জমিনে ভরসা সাধারণ মানুষের উপরে। আমি তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করি। তাই তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই আমাকে নির্বাচিত করবেন।’

অন্যদিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, পদ-পদবি নিয়ে দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকলেও সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিমই এই আসনের বিএনপির একক প্রার্থী। এর বাইরে অন্য কাউকে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা মেনে নেবে না। আইনি জটিলতার কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে না পারলেও আগামীতে পারবেন।

এ ব্যাপারে দৌলতখান উপজেলা বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মীর গিয়াস উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নির্বাচনী মাঠে হাফিজ ইব্রাহিমই দলের একক প্রার্থী। অন্য কাউকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। হাফিজ ইব্রাহিম দুঃসময়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সংগঠিত করেছেন।’

–ঢাকাটাইমস