আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষ হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের ঢামাঢোলও বেজে উঠেছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর সব দলের অংশগ্রহণেই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত পাবার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুডবুকে থাকা ৩০ জন তরুণ প্রার্থীর মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত হয়ে রয়েছে। এমন একটি তালিকা ভোরের পাতার হাতে এসেছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন ও মাঠ জরিপে এগিয়ে থাকা এসব তরুণ প্রার্থী নিজেদের মনোনয়ন ফরমও ইতোমধ্যে জমা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডও চাচ্ছেন তরুণরা এগিয়ে আসুক রাজনীতির মূল ধারায় এবং পরবর্তী রাজনীতির হাল ধরুক।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী তালিকায় নতুন ও তরুণদের স্থান দিতে চাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। সেই তরুণ নেতৃবৃন্দর মধ্যে বেশির ভাগই সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও বর্তমান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম রয়েছে। তালিকাতে কয়েকজন পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী নেতার নামও রয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এই তরুণ প্রার্থীরা নিজ নিজ সংসদীয় আসনের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং জনপ্রিয়তা অর্জনে তারা এলাকায় যাচ্ছেন, গণসংযোগ করছেন। বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে মনোনয়নপ্রত্যাশী নতুন ও তরুণদের নজর এখন এলাকার দিকে।
ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী এই নেতাদের অনেকে এলাকায় ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। মনোনয়নের দৌড়ে পুরনো প্রার্থীদের সামনে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছেন তারা। তাদের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা যেমন রয়েছেন তেমনি আছেন ছাত্রলীগ কিংবা অঙ্গ সংগঠনের নেতাও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্য বলেন, আগামী নির্বাচনে প্রায় ১২০ থেকে ১৩০জন প্রার্থীর পরির্বতন হবে। এই আসনগুলোতে তরুণদের স্থান দেওয়া হবে। বয়স্ক প্রার্থীদের নাম বার বার আসলেও এবার আগামী রাজনীতির নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য তরুণদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে। এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিশেষ পরিস্থিতিতে হওয়ায় ওই সময়ে ৫০টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হয় কিন্তু এবার প্রায় ১০০ এর বেশী আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে এবং তা হবে।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বলেন, বয়সের কারণে যারা বিভিন্ন রোগ-শোকে ভূগছেন তারাও এবার দলের মনোনয়ন পাবেন না। এছাড়াও যে সকল সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাদের পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত তরুণদের দল মনোনয়ন দেবে।
দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল (নেত্রকোনা-৩), সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম (শরীয়তপুর-২), কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী (লক্ষ্মীপুর-৪) ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী (চাঁদপুর-৩), উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম (চট্টগ্রাম-১৫), ব্যারিস্টার তৌফিকুর রহমান (নরসিংদী-৫) , নেত্রকোনা-৫ আসন থেকে আাওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, ফরিদপুর -১ আসনে আরিফুর রহমান দোলন।
ব্যবসায়ীদের মধ্যে তালিকায় রয়েছেন এক্সপোর্টাস এসোশিয়েসন অব বাংলাদেশ (ইএবি)’র সভাপতি, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও তারকা ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদী (খুলনা-৪)। যিনি উপনির্বাচনে খুলনা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। ঢাকা-১৬ (পল্লবী-রূপনগর) আসনে বিজিএমইএ’র বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, সাতক্ষীরা-২ আসনে এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান কমিটির পরিচালক, ইরান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাসটিজের প্রেসিডেন্ট, আওয়ামী লীগের শিল্প-বাণিজ্য ও ধর্ম বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য ড. কাজী এরতেজা হাসান, নরসিংদী-৪ (বেলাব ও মনোহরদী) আসনে নিট পোশাক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি আসলাম সানি।
অন্যদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি (জামালপুর-৫), গাইবান্ধার-৫ সাঘাটা ফুলছড়িতে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ (বাগেরহাট-৪), নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এ এইচ এম মাসুদ দুলাল, কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি (নাটোর-৪)।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারী (শরীয়তপুর-৩)। মাগুরা-১ আসনে ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখর। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মনিরুজ্জামান মনির (ঝালকাঠি-১), শফি আহমেদ (নেত্রকোণা-৪), অজয় কর খোকন কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে।
ঢাকার আসনগুলোতে কয়েকজন তরুণ তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন। তাদের মধ্যে আওলাদ হোসেন (ঢাকা-৪), যুবলীগের ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট (ঢাকা-৮), মনিরুজ্জামান মনির (ঝালকাঠি-১)। সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন (ঢাকা-১৪)। এছাড়া সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যদের মধ্যে তালিকায় আরো রয়েছেন নূরজাহান বেগম মুক্তা (চাঁদপুর-৫), তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম (টাঙ্গাইল-৬), ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে সেলিনা জাহান লিটা।