ডেঙ্গুজ্বর একধরনের ভাইরাস থেকে হয়। এর অপর নাম ‘ব্রেকবোন ফিভার’। কারণ ডেঙ্গুজ্বরে প্রচুন্ড শরীর ব্যথা হয় যা হাড় ভাঙ্গা ব্যথার মত তীব্র। আমাদের দেশে জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসে এর প্রাদুর্ভাব বেশী হয়। এডিস জাতীয় মশার কামড়ে ডেঙ্গুজ্বর হয়।
ডেঙ্গু ভাইরাস কয়েক প্রকারের। একধরণের ভাইরাস দিয়ে সংক্রমণ হলে সে ভাইরাস দিয়ে আর ভবিষ্যতে ডেঙ্গু হবে না। তবে তার যদি অন্য প্রকার ভাইরাস দিয়ে পরবর্তীতে ডেঙ্গুজ্বর হয় তা খুব মারাত্মক হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে, ঢাকায় গত আট মাসে ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছে সাতজন, যাদের সবাই নারী ও শিশু। ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধে বাসা বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা নিধনের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে নগর কর্তৃপক্ষ প্রচারণার কথা জানালেও, তা খুব একটা দৃশ্যমান নয় বলে জানায় নগরবাসী।
ডেঙ্গু জ্বর ভাইরাসজনিত রোগ। মশার কামড়ের মাধ্যমে এ রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে অ্যাডিস মশা কামড়ালে ডেঙ্গু ভাইরাস রক্তের সঙ্গে মশার দেহে চলে যায়। মশার শরীরে এ ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করে। ৮ থেকে ১০ দিন পর ওই মশা অন্য কাউকে কামড়ালে তার শরীরে ভাইরাস ঢোকে এবং জ্বরে আক্রান্ত হন।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ অন্য ভাইরাস জ্বরের মতোই। হঠাৎ করেই প্রচণ্ড জ্বরে (১০৩-১০৪ ডিগ্রি) আক্রান্ত হন। এর সঙ্গে থাকে মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, চোখের নিচে ব্যথা (চোখ নড়ালে ব্যথা অনুভূত হয়)। শরীরে বা জয়েন্টে বেশি ব্যথা হয় বলে এ জ্বরের অন্য নাম ব্যাকবোন ফিভার। জ্বরের সঙ্গে শরীরে র্যাশ বা লালচে ভাব দেখা দেয়।
সাধারণত জ্বরের দ্বিতীয় দিন থেকে ত্বক লালচে ভাব ধারণ করে এবং জ্বর ২ থেকে ৭ দিন পর কমে যায়। জ্বর কমে যাওয়া মানেই রোগমুক্তি নয়, বরং তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। জ্বর কমার ২-৩ দিন পরের সময় বেশি মারাত্মক। এ সময় জটিলতা দেখা দেয়।
রক্তে অণুচক্রিকা কমে গেলে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এ সময় বেশি সচেতন থাকতে হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি বারবার বমি বা রক্তবমি করতে পারে, পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে পারে, নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে, মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে, চোখে রক্তজমাট বাঁধতে পারে। এ ছাড়া শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রচ- পেটব্যথা, আলকাতরার মতো কালো দুর্গন্ধযুক্ত মল হতে পারে, মল ও প্রসাবের সঙ্গে রক্ত পড়তে পারে। একেই বলে ডেঙ্গু হেমোরজিক ফিভার।
এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হলে আক্রান্ত ব্যক্তি শকে চলে যেতে পারেন।