বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেই এমন প্রাপ্তিযোগকে রাশিয়ার সবাই অবশ্য ভালোভাবে নিচ্ছেন না। রাশিয়ার সাবেক ভলিবল তারকা ইয়েকাতেরিনা গামোভা যেমন বলছেন, অল্প অর্জনেই বেশি প্রাপ্তিতে ভেসে যাচ্ছে ফুটবল দল
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর প্রথমবার আর সব মিলিয়ে ৪৮ বছর পর বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল রাশিয়া। এই সাফল্যের নেপথ্য কারিগর মুণ্ডিত মস্তক ও পুরুষ্ট গোঁফের স্তানিস্লাভ চেরচেশভ রুশদের নয়নের মণিই হয়ে গেছেন। বিশ্বকাপ সাফল্যের পুরস্কার হিসেবে দিন কয়েক আগেই চেরচেশভের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়েছে রুশ ফুটবল ফেডারেশন। এবার ভূষিত হলেন বেসামরিক নাগরিকদের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘অর্ডার অব নেভস্কি’তেও। সম্মাননা পেয়েছেন আকিনফিয়েভ-ইগনাশেভিচসহ দলের অন্য খেলোয়াড়েরাও।
স্বাগতিক দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ খেলায় পর্যাপ্ত প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ ছাড়াই লড়াইয়ে নামতে হয়েছিল রাশিয়াকে। বিশ্বকাপে নিজেদের দেশ নিয়েই আশাবাদী ছিলেন না অধিকাংশ রুশ। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে শেষ আটে উঠে যায় রাশিয়া। যে পথে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেনের মতো দলকেও হারিয়ে দেয়। ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে স্বপ্নযাত্রা থেমে গেলেও রুশদের আনন্দ হিল্লোলে ভাসতে ওইটুকুই যথেষ্ট ছিল।
তো বিশ্বকাপের সাফল্য উদ্যাপনের জন্য গত পরশু রাষ্ট্রীয় ভবন ক্রেমলিনে ফুটবল দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানেই ‘অর্ডার অব নেভস্কি’ তুলে দেওয়া হয় ৫৪ বছর বয়সী চেরচেশভের হাতে। অধিনায়ক ইগর আকিনফিয়েভকে দেওয়া হয়েছে ‘অর্ডার অব অনার’। এই একই পুরস্কার পেয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী ডিফেন্ডার সের্গেই ইগনাশেভিচও। খালি হাতে ফেরেনি বাকি দলও। সবাই পেয়েছেন সম্মাননা সার্টিফিকেট। আর রাশিয়া বিশ্বকাপের দলকে ‘মাস্টার অব স্পোর্ট’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেই এমন প্রাপ্তিযোগকে রাশিয়ার সবাই অবশ্য ভালোভাবে নিচ্ছেন না। রাশিয়ার সাবেক ভলিবল তারকা ইয়েকাতেরিনা গামোভা যেমন বলছেন, অল্প অর্জনেই বেশি প্রাপ্তিতে ভেসে যাচ্ছে ফুটবল দল। দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও অলিম্পিকে দুটি রুপাজয়ী রুশ দলের সমস্যা গামোভা পরশু নিজের ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘অনেককে (রাষ্ট্রীয়) সম্মাননা পেতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বা অলিম্পিকে স্বর্ণ জিততে হয়। কিন্তু কিছু মানুষ কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেই সম্মাননা পেয়ে গেল। পুরস্কারটার (মাস্টার অব স্পোর্ট) মান কমে যেতে দেখে লজ্জাই লাগছে।’
তা রাশিয়ার ফুটবলের মান-সংস্কৃতি মিলিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠাও তো ছোট অর্জন নয়। এ প্রশ্নের বিপরীতেও যুক্তি আছে গামোভার, ‘হ্যাঁ, খেলোয়াড়েরা দারুণ খেলেছে। পুরো দেশ আনন্দে মেতেছে, তাদের সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু তারা তো বিশ্বসেরা হতে পারেনি…তারা একটু ভালো বোনাস পেলেই চলত।’
চেরচেশভ-আকিনফিয়েভদের অবশ্য নিন্দুকের কথা নিয়ে ভাবতে বয়েই গেছে। বিশ্বকাপ সাফল্যের পর পাওয়া দেশের মানুষের বাহবা আর সম্মাননা মিলিয়ে তাঁরা তো এখন সপ্তম স্বর্গে!