প্রবাস ডেস্ক: সৌদি প্রবাসী স্বামীর মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর থেকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না স্ত্রী সুইটি বেগম। ৭ বছরের কন্যাশিশু নিষাদ বাবার মৃত্যুর ঘটনাটি তেমন বুঝতে না পারলেও বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন ৭ মাসের অন্তঃস্বত্তা স্ত্রী। বাড়ির সকলেও মিলেও রুখতে পারছেন না সুইটি বেগমকে। পানি দিয়ে তার জ্ঞান ফেরানোর পরেই আবার তার প্রশ্ন ‘আমি কিভাবে বেঁচে থাকবো, আমার পেটের সন্তান তার বাবার মুখ দেখবে না, বাবা বলে ডাকতে পারবে না’।
সুইটির আর্তনাদে বাতাস ভারী হয়ে উঠছে, নিকট জনেরা কোনো জবাব খুঁজে না পেয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠছেন। পুত্র শোকে বাবা বদিয়ার মিয়া নির্বাক পাথর হয়ে গেছে। নাসিরের মৃত্যুর খবর শুনে ছুটে আসা স্বজন ও প্রতিবেশীদের দিকে শুধু তাকিয়ে চোখের পানিতে বুক ভাষাচ্ছেন। কথা বলছেন না কারো সাথেই।
সন্তান হারা মায়ের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে কদমতলার বাতাস। তিনি মূর্ছা যাওয়ার পাশাপাশি প্রলাপ বকতে শুরু করেছেন।
আজ শনিবার দুপরে কালিয়া উপজেলার কদমতলা গ্রামে বদিয়ার শেখের বাড়িতে গিয়ে হৃদয় বিদারক এই দৃশ্য চোখে পড়ে।
সৌদী আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নড়াইলের কালিয়ার মো. নাসির শেখ (৩০) নামের এক বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকাল বাংলাদেশ সময় ৮টার দিকে (সৌদি সময় সকাল ৫টা) জিজান শহরে তার মৃত্যু হয়। সে কদমতলা গ্রামের বদিয়ার শেখের ছোট ছেলে।
সৌদি আরবে নাসিরের সাথে থাকা একই গ্রামের মহসিন শেখ জানায়, শনিবার সকালে বাসা থেকে কাজে যাবার উদ্দেশে বের হয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় অপরদিক থেকে আসা একটি বাস তাকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। এ সময় মহসিন সৌদী আরবের দাম্মাম শহরে থাকা নিহতের ভাই ইমামুল কবিরকে জানান। ইমামুলের রুমমেট শরীয়তপুরের সুমন শেখ সকাল ৯টার দিক নাসিরের বাড়িতে মোবাইলে ঘটনাটি জানিয়ে দেয়।
চার ভাইবোনের মধ্যে নাসির সবার ছোট। নিজের ও পরিবারের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে বাবা, মা ও স্ত্রী সন্তানদের সুখের দিন গড়তে নাসির শেখ গত প্রায় দেড় বছর আগে পাড়ি জমায় সৌদী আরবে।
নিহতের বড় ভাই আরজুল্লা শেখ জানান, নাসির দেড় বছর আগে সৌদী আরব গেছে। গত ডিসেম্বর মাসে ১ মাসের ছুটি কাটিয়ে আবার ফিরে গেছে তার কর্মস্থল জিজান শহরে। তার ৭ বছরের একটি মেয়ে (নিষাদ) আছে এবং তার স্ত্রী সুইটি খানম ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।