অধিনায়ককে তো এমনই হতে হয়। ম্যাচের মধ্যেই নিতে হয় গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত। কাল মাশরাফি বিন মুর্তজার একটি সিদ্ধান্তই বদলে দিয়েছে ম্যাচের চিত্র। ম্যাচ হাতের মুঠোয় এনে ফেলেছে বাংলাদেশ।
চারদিকে প্রায় খোলা ওয়ার্নার পার্কে শো শো বাতাসে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। সামনে ক্যারিবীয় সাগরের নীল জলরাশি, পেছনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে কালো পাহাড়। পাহাড়ের মাথায় সাদা টুপির মতো জড়িয়ে মেঘপঞ্জি। সেন্ট কিটস এমনিতেই চোখজুড়ানো, সুন্দর এই দ্বীপে কাল বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সবই উপভোগ্য লাগল। ৯ বছর পর বিদেশের মাটিতে সিরিজ জেতা বলে কথা!
সতীর্থেরা পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে চলে গেছেন। সবার শেষে ড্রেসিংরুম থেকে বের হলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তামিম ইকবাল ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন, সিরিজসেরা হয়েছেন—সব পুরস্কার ‘খান সাহেব’ নিয়ে গেলেন, তা নিয়ে অধিনায়কের কী রসিকতা! পুরস্কার একটা মাশরাফিকেও দেওয়া উচিত। দ্বিতীয় ম্যাচটা হারের পর গায়ানা থেকে যখন উড়ানে উঠবে বাংলাদেশ, তার কিছুক্ষণ আগে সতীর্থদের ডেকে মাশরাফি বুঝিয়েছিলেন, ‘যদি প্রথম ম্যাচটা হেরে যেতাম ১-১ থাকত না, থাকত ২-০। আমাদের এখনো সুযোগ আছে, চলো সেন্ট কিটসে সুযোগটা কাজে লাগাই।’
মাশরাফির এই যে অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা, এ জন্যই শুধু নয়, এই ম্যাচে মাশরাফিকে একটা পুরস্কার দেওয়া উচিত ম্যাচ বদলে দেওয়া এক আইডিয়ার জন্যও। তামিম যখন সেঞ্চুরি করলেন, দেখা গেল ড্রেসিংরুমের দোতলা থেকে নিচে এসে বাঁহাতি ওপেনারের অভিনন্দন জানাচ্ছেন। পায়ে তাঁর প্যাড। সাব্বির রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন তখনো নামেননি। মাশরাফি তৈরি হয়ে বসে আছেন, ঘটনা কী?
কিছুক্ষণ পরে পরিষ্কার হলো বিষয়টা, ছয়ে নেমে পড়লেন অধিনায়ক। ৪ চার, ১ ছক্কায় ২৫ বলে তাঁর ৩৬ রানের ইনিংস সহায়তা করল বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জিং স্কোর এনে দিতে। মাশরাফির এ ঝড়টা যে ম্যাচের রং বদলে দিতে সহায়তা করেছে, বললে ভুল হবে?
ছয়ে নামার ভাবনা কীভাবে এল, সে কথা মাশরাফি খোলাসা করলেন ম্যাচের পর, ‘৩৫ ওভারে পর থেকে কোচ চাইছিলেন রানরেট বাড়াতে। কোচকে বললাম, আমি যাই? তখন ব্যাটসম্যানদের সোজা শট খেলা কঠিন। চিন্তা করলাম, ঝুঁকিটা আমিই নিই। কোচও আমাকে সমর্থন করলেন। বললেন, কেন দ্বিধায় ভুগছ? যাও।’
মাশরাফি গেলেন। পেটালেন। বাকিটা ইতিহাস! রাতে ডিনারের পর টিম হোটেলের সামনে আড্ডা দেওয়ার সময়ও মাশরাফি বারবার বলছিলেন, ‘আমার ওই সময়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা বড় কাজে দিয়েছে।’
যখন কথা বলছিলেন, রেস্তোরাঁর বড় পর্দায় চলছিল ম্যাচের হাইলাইটস। মাশরাফি ম্যাচ দেখছেন আর আপন মনে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে যাচ্ছেন ম্যাচের প্রতিটা মুহূর্ত। নির্বাক আর বিস্ময়ভরা চোখে অধিনায়কের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, আর মনে হয়, মাশরাফির অক্সিজেন যেমন ক্রিকেট, বাংলাদেশ দলের অক্সিজেনও তিনি!