২০০৯ সালে অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়ার পর মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রথম সফর ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে। সেবার দল সিরিজ জিতলেও মাশরাফি মাঠে থাকতে পারেননি হঠাৎ পাওয়া চোটে। কিন্তু এবার সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েই দলকে ওয়ানডে সিরিজ জিতিয়েছেন মাশরাফি। নয় বছর আগের সেই অতৃপ্তিটিই কি ঘোচালেন বাংলাদেশের ওয়ানডে দলপতি!
তাঁর হাঁটুর চোট নিয়েই আস্ত একখানা বই লিখে ফেলা যায়! কিন্তু আলাদা করে বললে হাঁটুর সেই চোটটা মাশরাফি বিন মুর্তজাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়। সেই চোটে যে তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারেরই অকালমৃত্যু ঘটেছে!
এতক্ষণে নিশ্চয়ই পরিষ্কার, মাশরাফির কোন চোটের কথা বলা হচ্ছে। ২০০৯ সাল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে সেটি ছিল তাঁর প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট। প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনে হাঁটুতে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়লেন মাশরাফি। এরপর ইতিহাস সৃষ্টিকারী সিরিজটা হয়ে থাকল সাকিবময়। সফরের বাকিটা পথ সাকিবের নেতৃত্বে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাই করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মাশরাফি হয়ে রইলেন এক আক্ষেপের নাম।
সেই চোটের পর মাশরাফির আর টেস্ট খেলা হয়নি। যে ম্যাচে তিনি চোট পেয়েছিলেন, সেটিকে বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট জয়ে রূপান্তরিত করেছিলেন সাকিব। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তাই একটা হৃদয়ঘটিত লেনাদেনা ছিল মাশরাফির। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম সফরে ভাগ্য তাঁকে ছিটকে ফেলেছিল চোটের অজুহাতে। ৯ বছর পর সেই মাশরাফিই ওয়েস্ট ইন্ডিজে ওয়ানডে সিরিজ জিতলেন অধিনায়ক হিসেবে! দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তো ছিলই। সিরিজ–নির্ধারণী ম্যাচে নিজের একটি ভাবনা দিয়েই ঘুরিয়ে দিয়েছেন ম্যাচের দৃশ্যপট।
তাতে মাশরাফির টেস্ট খেলতে না পারার আক্ষেপ অবশ্য এতটুকু ঘুচবে না। কিন্তু একটা অপূর্ণতা তো কাটল। নেতৃত্বভার পেলেও প্রথম দফায় তিনি নিজে মাঠে থেকে দলের জয়ে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি। শুধু প্রথম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে ৬.৩ ওভারের সেই স্পেলটুকু বাদে। কিন্তু এবার নেতৃত্বের সঙ্গে ব্যাটে-বলে সব জায়গাতেই ভূমিকা রেখে দলকে ওয়ানডে সিরিজ জেতালেন মাশরাফি। ওই ওয়ানডে সিরিজে মাশরাফির উইকেটসংখ্যাই কিন্তু সর্বোচ্চ (৩ ম্যাচে ৭ উইকেট)। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে তাঁর ২৫ বলে ৩৬ রানের ‘ক্যামিও’ ইনিংসটাও ভুলে গেলে চলবে না।
২০০৭ বিশ্বকাপ খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাওয়া হলেও মাশরাফি তখন অধিনায়ক ছিলেন না। আর ২০০৯ সালের পাঁচ বছর পর আরও একবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েছিলেন মাশরাফি। ২০১৪ সালে সেই সফরে দলের অধিনায়ক ছিলেন মুশফিকুর রহিম। ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচেই খেলেছিলেন মাশরাফি। কিন্তু সেই সিরিজের পাশাপাশি টেস্ট সিরিজেও হেরেছিল বাংলাদেশ। এতে মুশফিককে ওয়ানডে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে ফেরানো হয় মাশরাফিকে।
এই চার বছরে ওয়ানডে সংস্করণে বাংলাদেশ সমীহ জাগানিয়া দল হয়ে ওঠার পেছনে মাশরাফির নেতৃত্বগুণের বড় অবদান আছে। এবার যেমন এই সফরে টেস্ট সিরিজে যে দলটা তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ে তুলতে পারেনি, সেই দলকেই নেতৃত্ব দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ জেতালেন মাশরাফি।