তখন রাত সাড়ে ৩টা। গভীর ঘুমে ছিলেন সবিতা রায়। হঠাৎ, কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে ঘুম ভাঙে তাঁর। জাগিয়ে তোলেন নিজের স্বামীকেও। এরপর ঘর থেকে বের হয়ে বিস্মিত হয়ে যান স্বামী-স্ত্রী। দেখেন, মন্দিরের সামনে পড়ে আছে একটি শপিং ব্যাগ। ব্যাগের ভেতর একটি কন্যা নবজাতক। নাড়িও কাটা হয়নি শিশুটির। নাড়ি চুয়ে পড়ছে রক্ত।
আজ শনিবার ভোররাতে পিরোজপুরের সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এরপর শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় সদর থানা পুলিশ। শিশুটি বর্তমানে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে।
শিশুটিকে উদ্ধারকারী সবিতা রায় বলেন, ‘অনেক সময় পর্যন্ত কান্নাকাটি করে। কিন্তু বুঝি নাই যে, কোথায় কান্নাকাটি করে। তারপরে দরজা খুলে দেখি যে, একটা শপিং ব্যাগের ওপরে বাচ্চা রাখা। এরপরে এরে (স্বামীকে) ডাক দিছি। ডাক দিছি পরে উঠছে, আমরা দেখি যে, একটা মেয়ে বাচ্চা। নাড়িও বান্ধে নাই। সদ্য বাচ্চা। নাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে। বাচ্চাটা খুব কান্নাকাটি করে হাত খায়, খাবার জন্য।’
পিরোজপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ননী গোপাল রায় বলেন, ‘পুলিশের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, শিশুটিকে কৃষ্ণনগর মন্দিরের কাছাকাছি পাওয়া গেছে। সেখান থেকে উদ্ধার করে আমাদের হাসপাতালের নিয়ে আসে। শিশুটির বয়স মাত্র একদিন হবে। এবং হাসপাতালে নিয়ে আসার পর আমরা শিশুটির যাবতীয় দায় দায়িত্ব নিয়ে, অর্থাৎ তার ওষুধ, খাবার-দাবার, সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। এবং সেই মতো আমরা শিশুটিকে চিকিৎসা দিয়েছি। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন যে, শিশুটি সুস্থ আছে, ভালো আছে।’
কয়েক সপ্তাহ আগে পিরোজপুর আরেক নবজাতককে উদ্ধার করা হয়েছিল।
আরএমও ননী গোপাল রায় বলেন, ‘আমরা আগের শিশুটির ক্ষেত্রেও যেটা করেছিলাম যে, পিরোজপুর সমাজসেবা, পুলিশ বিভাগ, জেলা প্রশাসন এবং বিচার বিভাগের মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা শিশুটিকে সোনামণি নিবাস বরিশালে রেখেছি। শিশুটি ওখানে রয়েছে। এই শিশুটির ক্ষেত্রেও আমরা আমাদের সাধ্যমতো, যত্ন-আত্তি করে, সুস্থ রাখার চেষ্টা করছি। আশা করছি, শিশুটির যত্নে কোনো ত্রুটি হবে না। তবে, শিশুটির পরবর্তী যে সিদ্ধান্ত যেটা আপনারা দেখেন যে, শিশুটিকে নেওয়ার জন্যে, অনেক লোক আসে। তাদের ব্যাপারে পুলিশ বিভাগ, জেলা প্রশাসন এবং বিচার বিভাগ রয়েছে। তারা সম্মিলিতভাবে যে সিদ্ধান্ত দেবে, আমরা সেই মোতাবেক কাজ করব।’
শিশুটিকে উদ্ধারের পরে চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং তার অভিভাবক খোঁজার চেষ্টা চলছে বলে জানান পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জিয়াউল হক।