বৈরি আবহাওয়ার কারণে কথিত ‘গুপ্তধন’ সন্ধানে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরের বাড়িটিতে অভিযান আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। আগামী সোমবার (৩০ জুলাই) থেকে আবারও প্রশাসনের সন্ধান অভিযান শুরুর কথা। তবে গুপ্তধন উদ্ধার অভিযান নিয়ে কিছুটা জটিলতায় পড়েছে পুলিশ ও প্রশাসন।
পুলিশ বলছে, গুপ্তধনের সন্ধান দেওয়া টেকনাফের বাসিন্দা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব তাদের কোনও সহযোগিতা করছেন না। তাকে বার বার ডাকা হলেও তিনি আসছেন না। তবে বাড়ির মালিক মনিরুল আলম সহায়তা করছেন।
তবে গুপ্তধনের সন্ধান দেওয়া মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলছেন, ‘তথ্যটি আমি পুলিশের মাধ্যমে সরকারকে জানাতে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। কিন্তু পুলিশ আমাকে না জানিয়েই ওই বাড়িতে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু করেছে। খোঁড়াখুঁড়ির পরদিন পুলিশ আমাকে ডাকলে আমি যাবো কেন? খোঁড়াখুঁড়ির সময় আমাকে উপস্থিত রাখতে পারতো, কিন্তু রাখেনি।’
গত ২১ জুলাই (শনিবার) রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরের সি-ব্লকের ১৬ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাড়িতে গুপ্তধনের খোঁজে মাটি খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে প্রশাসন ও পুলিশ। বাড়িটির মাটির নিচে কমপক্ষে দুই মণ স্বর্ণালংকার আছে— এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয় এ অভিযান। তবে বাড়িটির ভিত্তিপ্রস্তর দুর্বল হওয়ায় খোঁড়াখুঁড়ি স্থগিত করে দেওয়া হয়। এরপর ২২ জুলাই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।
বর্তমানে বাড়িটি পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। গুপ্তধন উদ্ধার অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারা থাকবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
মিরপুর থানার ভারপ্রপ্তা কর্মকর্তা (ওসি) দাদন ফকির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মিরপুরের একটি বাড়িতে গুপ্তধন আছে— এই মর্মে টেকনাফের বাসিন্দা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব গত ১০ জুলাই মিরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর বাড়ির মালিক মনিরুল আলম ১৪ জুলাই একটি জিডি করেন। পরে বাড়ির মালিকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমার গুপ্তধন উদ্ধারের খোঁড়াখুঁড়ির অভিযান পরিচালনা করি। এ বিষয়ে গুপ্তধনের সন্ধান দেওয়া আবু তৈয়বকে মোবাইল ফোনে বার বার ডাকা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এই বিষয়ে তিনি পুলিশকে কোনও সহযোগিতা করছেন না।’
তবে মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ সরকারকে জানাতে পুলিশকে তথ্য দিতে গিয়েছিলাম, আমি তো অপরাধ করিনি। কিন্তু জিডি দেওয়ার পর তিন দিন দুই রাত আমাকে থানায় বসাইয়া রাখা হইছে। পরে আমাকে না জানিয়ে বাড়ির মালিক মনিরুল আলমের জিডি নিয়ে ওই বাড়ি খনন করেছে। খননের পরদিন আমাকে ওসি ডাকে, আমি যাবো কেন?’
তিনি বলেন, ‘মিরপুর থানায় জিডি করায় আমাকে তিন দিন দুই রাত থানার ডিউটি রুমে বসিয়ে রাখা হয়েছিল, ঘুমাতেও দেওয়া হয়নি।’
আবু তৈয়ব বলেন, ‘আমি যখন থানায় গিয়ে ওসির সঙ্গে পরামর্শ করেছি, তখন ওসি বলছে, একটি জিডি করতে হইবো। থানা থেকে জিডি লেখা হইছে, আমি লেখি নাই। সেটা লেখার পরে আমাকে দস্তখত করতে বলছে, আমি দস্তখত করেছি। সেই থেকে আমাকে তিন দিন দুই রাত থানায় রাখা হয়েছিল। ১২ তারিখ আমাকে রাবেয়া হক নামে এক নারীর জামানতের ভিত্তিতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, এবং ওসি বলছে, এই বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হবে। সেখান থেকে নির্দেশনা পেলে আমাকে ডাকবে তারা। কিন্তু ডাকেনি। এরপর ওই বাড়ির মালিক মনিরুল আলমের জিডির ভিত্তিতে ওই বাড়ি খনন শুরু করে, সেটাও আমি জানি না। খননের পড়ে ওসি দাদন ফকির আমাকে ডেকেছেন, তখন আমি যাবো কেন?’
ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম বলেন, ‘অভিযানটি আপাতত স্থগিত রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করবো। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের কাছে এই ধরনের যন্ত্রপাতি আছে। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা ওইসব যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তার করবে।’
২০১০ সালে সেলিম রেজা নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে এই বাড়িটি গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কেনেন মনিরুল আলম। মিরপুর পল্লবীতে থাকেন তিনি। আর এই বাড়ি দেখাশোনা করেন শফিকুল ইসলাম ও সুমন নামে দুজন। শফিকুল ইসলাম ছিলেন বাড়ির কেয়ারটেকার। বাড়ির ভেতরে সাতটি কক্ষ ছিল। একটিতে শফিকুল ও সুমন থাকতেন। আর বাকিগুলোতে ভাড়াটিয়া থাকতেন। তবে গত তিন/চার মাস আগে বাড়ির সব ভাড়াটিয়াকে অন্যত্র চলে যাওয়ার নোটিশ দেওয়া হয়। কারণ, বাড়িটি ভেঙে নতুন ভবন তৈরি করা হবে।
বাড়ির মালিক মনিরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যদি এখানে কিছু পাওয়া যায়, তবে রাষ্ট্রের নিয়ম অনুযায়ী সরকারি কোষাগারে তা জমা হবে। এ বিষয়টি আমি থানায় লিখিত দিয়ে এসেছি।’
গত ১০ জুলাই মোহাম্মদ আবু তৈয়ব মিরপুর থানায় জিডি করার পর ১২ জুলাই রাতে কয়েকজন লোক বাড়ির ভেতরে গুপ্তধন আছে বলে জোরপূর্বক ঢোকার চেষ্টা করে। এই মর্মে ১৪ জুলাই বাড়ির মালিক মনিরুল আলম থানায় আরেকটি জিডি করেন। পরে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাড়িটি খননের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।