এই ঘটনাটি ঘটে পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের বাদুরতলা গ্রামে।এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষই জেলে । তাদের একমাত্র পেশায় হচ্ছে গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরা।গত বৃহস্পতিবার গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য গ্রামের আঠারো জন জেলে মাছ ধরতে যায়।সকালে হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে জেলেরা । তার পর থেকে জেলেরা নিখুজ রয়েছ্র।
‘ও ভাই মোর স্বামী-পোলায় সাগরে গ্যাছে, হুনছি বইন্যায় সাগরে ডুইব্যা গ্যাছে। চারদিন ধইরা (ধরে) খোঁজ নাই হ্যাগো, মোর স্বামী-পোলারে আইন্যা দ্যান।’ এভাবেই কখনো ঘরের মেঝেতে, কখনো উঠানে মর্ছা যাচ্ছেন নিখোঁজ জেলে তোতা মিয়ার স্ত্রী আমেনা বেগম। স্বামী আর ছেলের কথা বলতে বলতে বেহুঁশ হয়ে পড়েন তিনি।একই পরিবার থেকে মো: তোতা মিয়া, তার ছেলে মো: কবির হোসেন ও ভাতিজা মো: রিপন নিখোঁজ রয়েছে।
শুধু আমেনা বেগমই নয়, এই গ্রামের আঠারোটি জেলের পরিবারেই চলছে এরকম আহাজারি। সাগরে নিখোঁজ জেলে মো: তোতা মিয়ার বাড়িসহ নিখোঁজ অন্য জেলেদের বাড়িতে প্রতিনিয়ত আসছে তাদের প্রতিবেশি ও আত্মীয়-স্বজনরা।অন্যদিকে একই পাড়ার নিখোঁজ মো: রিপনের পনের বছরের কন্যা তানিয়া বিলাপ করে বলছেন, মোর আব্বারে আইন্যা দেন, মোর আর কিছুই লাগবে না। মোরে কেডা স্কুলে নিয়া যাইবে’।
নিখোঁজ জেলেদের স্বজনদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। যতই সময় যাচ্ছে, ততই স্বজনদের দীর্ঘশ্বাস বেড়ে চলছে।অপরদিকে তোতা মিয়ার প্রতিবেশী হিরু মিয়ার মা আনোয়ারা বেগম একমাত্র ছেলের শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। কখনো কখনো আনোয়ারা বেগম অজ্ঞান হয়ে পড়েন। স্ত্রী শারমিন বেগম ৮ মাসের কন্যা সন্তান আয়শাকে নিয়ে স্বামীর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।
এবিষয়ে কথা হয়া বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আবুল হোসেন ফরাজীর সাথে। তিনি বলেন, আমরা নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে ঘটনার পরই কয়েকটি ট্রলার সাগরে পাঠিয়েছি। আমাদের পক্ষ থেকে নিখোঁজ জেলেদের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা করছি।পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: হুমায়ুন কবির বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিখোঁজ জেলে ও তাদের স্বজনদের খোঁজ করে নিচ্ছি। আর ফিরে আসা জেলেদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। যদি কোন জেলে মারা যায় তাহলে তাকে জেলা ও উপজেলা পরিষদ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।