ঝালকাঠির একটি টার্কি মুরগির খামার অনেকের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কম খরচে লাভজনক খামারটি দেখে টার্কি পালনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে অনেকেই। সিঙ্গাপুরফেরত দুই বন্ধু এই টার্কি খামার গড়ে তুলেছেন। প্রতি মাসে খামারের টার্কি মুরগি, বাচ্চা ও ডিম বিক্রি করে আয় হচ্ছে এক লাখ টাকারও বেশি।
জানা যায়, কয়েক বছর আগে সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন ঝালকাঠির মোর্শেদুল ইসলাম। সেখানে গিয়ে পরিচয় হয় ঝিনাইদহের রাজিব হোসেনের সঙ্গে। দুই বন্ধু ইন্টারনেটে টার্কি মুরগির খামার দেখে উদ্বুদ্ধ হন। টার্কি হচ্ছে বড় আকারের গৃহপালিত মুরগি। এদের উৎপত্তিস্থল উত্তর আমেরিকায়। ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে টার্কি পালন করা হয়। খাদ্যতালিকায় একটি অন্যতম উপাদান টার্কি। বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে টার্কি।
২০১৭ সালে দেশে ফিরে নিজেরাই খামার করার উদ্যোগ নেন দুই বন্ধু। ঝালকাঠি শহরের পূর্ব চাঁদকাঠি এলাকায় এক একর জমিতে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে গড়ে তোলেন টার্কি মুরগির খামার। বর্তমানে তাঁদের খামারে এক হাজার টার্কি মুরগি রয়েছে। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার ছয় মাসের মধ্যে টার্কি ডিম দেয়। ছয় মাসের মেয়ে টার্কির ওজন হয় পাঁচ থেকে ছয় কেজি। আর পুরুষগুলো হয় প্রায় আট কেজি। চর্বি কম ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে টার্কির চাহিদা বেড়েছে। মুরগি, বাচ্চা ও ডিম বিক্রি করে খামার থেকে বছরে আয় হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা।
খামারে ইনকিউবেটরের মাধ্যমে তাপ দিয়ে বাচ্চা ফোটানো হয়। কখনো দেশীয় পদ্ধতিতেও বাচ্চা ফোটে। এক দিনের একটি বাচ্চা ৩০০ টাকা, ডিম প্রতিটি ১০০ টাকা এবং পরিণত টার্কি ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয় খামার থেকে। খামারটির সার্বিক খোঁজখবর রাখছেন স্থানীয় প্রণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। ভ্যাকসিনেশনসহ রোগে আক্রান্ত টার্কির চিকিৎসায় এগিয়ে আসছেন তাঁরা।
ঝালকাঠির এই খামারের টার্কি মুরগির মাংস জনপ্রিয় হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে। খামারের এই টার্কি স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হচ্ছে পাশের জেলায়ও। অল্প খরচে লাভজন এই টার্কি পালনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন খামারের মালিক দুই বন্ধু।
খামারের মালিক মোর্শেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সিঙ্গাপুর গিয়ে ইন্টারনেটে বিভিন্ন স্থানের টার্কি মুরগির খামার দেখে নিজেইরা একটি খামার করার চিন্তা করি। টার্কি মুরগির খামার করার জন্য আমি এবং বন্ধু রাজিব দেশে ফিরে আসি। রাজিবের বাড়ি ঝিনাইদহে। সে আমার সঙ্গে ঝালকাঠি চলে আসে। আমরা দুই বন্ধু মিলে শহরের পূর্ব চাঁদকাঠি এলাকায় একটি টার্কি মুরগির খামার করি। প্রথমে আমরা ৩০টি টারকি দিয়ে খামারের যাত্রা শুরু করি। এখন আমাদের খামারে এক হাজার টার্কি রয়েছে। এখান থেকে মাসে দুই বন্ধুর এক লাখ টাকা আয় হচ্ছে। তাই আর সিঙ্গাপুর যাওয়ার চেষ্টা করিনি। আমরা আগে টার্কির বাচ্চা কিনে আনতাম, এখন নিজেরাই বাচ্চা ফোটানোর মেশিন কিনে এনেছি। অনেক সময় দেশি মুরগি দিয়েও ডিম উম দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে বিক্রি করি।’
মোর্শেদুল ইসলামের বন্ধু রাজিব হোসেন বলেন, ‘টার্কি মুরগিকে আমরা স্থানীয় ঘাস ও কচুরিপানা খেতে দিয়ে থাকি। এ ছাড়া বাইরে থেকে খাবার এনে দিই। খুব দ্রুত টার্কিগুলো বড় হয়ে যায়। আমাদের খামারে এক দিনের বাচ্চাসহ ১২ কেজি ওজনের টার্কি রয়েছে। আমরা পাইকারি ও খুচরা বিক্রি শুরু করেছি। এখান থেকে ডিমও বিক্রি করা হয়।’
ঝালকাঠি জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুল হান্নান বলেন, ‘টার্কি মুরগি লাভজনক, তাই এটি পালন করে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। প্রয়োজনে আমরা আগ্রহী ব্যক্তিদের সব ধরনের সহযোগিতা করব।’