জীবিকার টানে এখন বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার লোক যায় বিদেশে। আর তার বেশি সংখ্যকই পাওয়া যাবে মধ্য প্রাচ্যে। সৌদি আরবেও অসংখ্য বাংলাদেশি প্রবাসির দেখা মেলে। সেখানে তারা এমনও কিছু কাজ করতে হয় যা তাদের জীবনেরও ঝুকি থাকে। তাই একজনের মনে প্রশ্ন ভাই, আমি সৌদি আসতে চাই, বেতন ২৫ হাজার টাকা। আর বাংলাদেশে একটা চাকরি করি, বেতন ১০ হাজার। এখন কী ১০ হাজার টাকার চাকরি ছেড়ে সৌদি যাওয়া ঠিক হবে? ‘আমরা প্রবাসী বাংলাদেশি’ নামে একটি গ্রুপে এ পোস্টটি করেন ওয়ালিদ মোল্লা। পোস্টে তিনি সবার মতামত চান।
এ পোস্টে তিন শতাধিক ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন। তাতে বর্তমানে প্রবাসীদের কী অবস্থা তা উঠে আসে। বিদেশে লাখ লাখ রেমিটেন্স যোদ্ধা যে সুখে নেই, তার নির্মম চিত্র উঠে এসেছে। এমনি কয়েকটি মন্তব্য আজকের আয়োজন।
মোহাম্মদ মোস্তফা লিখেছেন, ভাই ২৫ হাজার টাকা শুধুই বেতন দেখলেন। কিন্তু একজন মানুষের প্রতি মাসে খরচ আছে ৩০ হাজার টাকা। ৩০ হাজার খরচ রেখে তারপর বাড়িতে টাকা পাঠাবেন। এখন যদি আপনার পোষায় তা হলে আসতে পারেন। আমাদের কোনো মানা নাই!
হাছান মাহমুদ লিখেছেন, ভাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবার পরামর্শ বিবেচনা করবেন। আমি ও আপনার মতো দেশ ১০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করতাম। সাথে পড়ালেখাও করতাম। গত মে মাসে আলবাহা আমার বাবার কাছে আসছি একটা দোকানের ভিসায়। কিন্তু আসার পর কফিল আমাকে দোকান না দিয়ে খুরুজ মেরে দিয়েছে। এখন দেশে চলে যাবো। তাই ভাই আপনার সিদ্ধান্ত আপনার কাছে। তবে না আসাটাই ভাল।
মো. আশরাফুল ইসলাম একটু বেশি কঠোর ভাষা ব্যবহার করে মন্তব্য করেছেন। তিনি লিখেছেন, সুখে থাকতে ভুতে যদি না কিলায়, তাইলে দেশের চাকরি ছাড়বেন নাহ। আর যদি ভুতে বেশি কিলায় তাহলে সৌদি আরব চলে আসেন।
সুলতান মাহমুদ মিল্টন লিখেছেন, চলে আসুন।আর আসার সময় ভাল করে বিদায় নিয়ে আসুন।বলা যায় না আত্নহত্যাও করতে পারেন। তবে আবদুল্লাহ আল জাহিদ শুধু একটি মাত্র বাক্য ব্যবহার করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এই ভুল করবেন না।’
মো শাফায়েত হোসেন লিখেছেন, ‘আমার পরিচিত অনেককেই তাদের কোম্পানি পাঠাচ্ছে, পাওনা বেতনও দিচ্ছে না। আমার এক বন্ধুকে মরুভূমিতে রেখে গেছে! তার থেকে পাসপোর্ট ও নিয়ে গেছে আর আকামাও দেয় নাই।’
রবিন চৌধুরী লিখেছেন, ‘আপনি এই ভুল করবেন না ভুলেও। আপনি যেই টাকা দিয়ে আসবেন, সেই টাকা তুলতে আড়াই বছর ফাউ যাবে। ভুলেও আসবেন না। দালালের কথায় কান দিবেন না। হতে পারে দালাল আপনার কাছের লোক কিন্তু দালাল দালালই। তারা ৫০ হাজার টাকা লাভের আশায় আপনার পুরো জীবন ধবংস করতে চিন্তা করবে না। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন শরীফ বিন সালেহ। তিনি ওয়ালিদের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, ‘কেন মরতে আসবেন সৌদী আরবে?
দিনের শেষে আমরা শুধু রেমিটেন্সের হিসাব করি। প্রবাসী মানুষগুলোর দুঃখ-কষ্টগুলো হিসেব করি না। নিজেরা কষ্টে থেকেও পরিবার পরিজনদের সুখে রাখছেন। দেশের একজন মানুষ বিদেশে গিয়ে কষ্টে থাকুক, একজন প্রবাসী ভাই চান না। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশের ১০ হাজার টাকাই উত্তম। তাই নয় কী?