মেসুত ওজিল। ফুটবল বিশ্বে এই নামটি ব্যাপক পরিচিত। রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে দল বাদ পড়ায় ভক্তদের মতো মেসুত ওজিলও ভেঙ্গে পড়েছিলেন। কিন্তু, বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ার ক্ষত মুছতে না মুছতেই বর্ণবাদী আচরণের শিকার হলেন- এই জার্মান মিডফিল্ডার।
যদিও এই মুসলিম ফুটবলার খেলাধুলা ছাড়াও ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এসেছেন।
রাশিয়া বিশ্বকাপে জার্মানির ভরাডুবির পর অনেক উগ্রবাদী জার্মান সমর্থক তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান। এতদিন সমালোচনা আর তিরস্কার সহ্য করলেও এবার আর চুপ থাকেননি। জার্মান জার্সি গায়ে আর মাঠে নামবেন না বলে ঘোষণা দিয়ে বসেন তুরস্কে জন্ম নেওয়া ২৯ বছর বয়সী ওজিল।
ঘটনার শুরু মূলত তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগানের সঙ্গে ওজিলের সাক্ষাৎ নিয়ে। ওই ঘটনার জেরে জার্মানিতে ‘বর্ণবাদ এবং অসম্মানের’ শিকার হয়েছেন ওজিল। এই অভিযোগ তুলে তুর্কী বংশোদ্ভূত জার্মান ফুটবলার মেসুত ওজিল আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছেন।
শনিবার (২১ জুলাই) তিনি তার টুইটার অ্যাকাউন্টে নিজের বক্তব্য তুলে ধরে ওজিল বলেছেন, আমি তুরস্ক বংশোদ্ভূত তাই তুরস্কের প্রতি আমার ভালবাসা রয়েছে। আমার পিতা আমাকে শিখিয়েছেন, আমরা যেখান থেকে এসেছি, যেখানে আমাদের পরিবার বেড়ে উঠেছে এবং আমাদের স্মৃতি রয়েছে আমরা যেন তাকে ভুলে না যাই।
ওজিল আরও বলেন, জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মেরকেল ২০১০ সালে এরদোগানের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ওই সময় বার্লিনে তুরস্ক ও জার্মানির মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি ফুটবল ম্যাচ এরদোগান ও মেরকেল একত্রে উপভোগ করেছিলেন।
মেসুত ওজিল বর্তমানে জার্মানির নাগরিক। এ ব্যাপারটিকে তিনি ছোট করতে চান না। তিনি লিখেছেন, আমার দুইটি হৃদয়, এর একটি হচ্ছে তুরস্ক অন্যটি জার্মানি।
ওজিল বলেছেন, এরদোগানের সঙ্গে ছবি প্রকাশের পর অনেকে তাকে হুমকি ধামকি দিয়েছেন, তার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে তাকে অনেকে ই-মেইল করেছেন এবং রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের শুরুতেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ার জন্যে তাকে দায়ী করেছেন।
অনেকটা দুঃখ নিয়ে ওজিল বলেন, আমরা যখন ম্যাচ জিতি তখন আমি জার্মান, কিন্তু যখন হেরে যাই তখন একজন বিদেশি।
তবে ওজিলের এই অভিযোগের জবাবে জার্মান ফুটবল প্রধানের কাছ থেকে এখনও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ওজিল তার বিবৃতিতে প্রশ্ন তুলেছেন, জার্মান দলে তার মতো আরো অনেকেই আছেন যাদের সাথে জার্মানি ছাড়াও অন্য আরেকটি দেশের যোগাযোগ আছে, তাদের বেলাতে সেরকম আচরণ করা হয়নি কেন?
তিনি বলেন, এটা কি একারণে যে দেশটি তুরস্ক? এটা কি একারণে যে আমি একজন মুসলমান? আমার মনে হয় এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় আছে।
প্রসঙ্গত, মেসুত ওজিল পশ্চিম জার্মানির জেলেসেনকির্সেনতে ১৯৮৮ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। বিশ্ব ফুটবলে তিনি অ্যাসিস্ট কিং বা অ্যাসিস্ট মেশিন হিসেবে পরিচিত।
ওজিল ২০০৫ সালে জার্মান ক্লাব শালকার হয়ে ১৮ বছর বয়সে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন। ওজিলের গায়ে জাতীয় দলের জার্সি উঠে ২০০৯ সালে। আর সে ম্যাচে ওজিলদের প্রতিপক্ষ ছিলো নরওয়ে।
২০১০ বিশ্বকাপে ঘানার বিপক্ষে বক্সের বাইরে অসাধারণ এক গোল করে গোল্ডেন বলের জন্য নমিনেটেড হন। ২০১০ সালে ১৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে রিয়াল মাদ্রিদের যোগ দেন ওজিল। রিয়ালে তিন সিজন পার হওয়ার পর তাকে আর্সেনালের কাছে বিক্রি করে দেয় রিয়াল।
যদিও এ নিয়ে ভক্তরা রিয়াল কর্তৃপক্ষের ওপর বিরক্ত হয়। ২০১১ থেকে ১৬ পর্যন্ত মোটে পাঁচবার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের খেতাব পান ওজিল। সদ্য সমাপ্ত রাশিয়া বিশেকাপে জাতীয় দলের হয়ে ১০ নাম্বার জার্সিতে মাঠে নামেন এই মিডফিল্ডার।