মালয়েশিয়া প্রবাসীরা সাবধান, অল্প ভুলেই মহাবিপদ !

মালয়েশিয়াকে অবৈধ অভিবাসী মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশটির অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক সেরি মোস্তাফার আলী। চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তৎপর হবে প্রশাসন বলে জানিয়েছেন এই মহাপরিচালক। মোস্তাফার আলী জানান, নির্ধারিত দিন থেকে অবৈধ অভিবাসীদের আটক করার জন্য আরো কার্যকরী ভূমিকায় যাবে তার প্রশাসন। তিনি আরো যোগ করেন, অভিযানে অবৈধ কর্মী নিয়োগ দিয়েছেÑ এমন নিয়োগদাতাকেও আটক করা হবে। এ নিয়ে আশঙ্কায় আছেন সেদেশে থাকা বাংলাদেশের পেশাজীবীরা। তারা বলেছেন, এতে কাগজপত্রে সামান্য ভুল আছে তাদেরও সমস্যায় পড়তে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ কর্মসূচি বা থ্রি প্লাস ওয়ান চালু করেছি। যাতে দেশে থাকা সব অবৈধ অভিবাসী স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন।’ স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য স্টারে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ২০ জুলাই শুক্রবার দুটি নির্মাণশিল্পে অভিযান পরিচালনার পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান মোস্তাফার আলী। সংবাদমাধ্যমটির তথ্যমতে, স্বেচ্ছায় নিজ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার থ্রি প্লাস ওয়ান কর্মসূচি ৩০ আগস্ট পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এদিকে অভিবাসন বিভাগের তথ্য বলছে, এ বছরের জুলাই থেকে শুরু হওয়া মেথা থ্রি অভিযানে তিন হাজার অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। তবে আটকদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি রয়েছেন, তা জানা যায়নি। অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় সচেতনতামূলক প্রচারণা ভুলের বৃত্ত থেকে বের করে আনতে পারে বাংলাদেশিদেরÑ এমন মন্তব্য করেছেন দেশটিতে কর্মরত সচেতন রেমিট্যান্সযোদ্ধারা। মালয়েশিয়ার ১৩টি প্রদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছেন বাংলাদেশের কর্মজীবীরা। আর এ যোদ্ধারা আধুনিক মালয়েশিয়া গঠনেই নিরলস কাজ করে চলেছেন। কুয়ালালামপুরের টুইন টাওয়ার, পেনাংয়ের বাতুফিরিঙ্গি সৈকত, তেরেঙ্গানুর মসজিদ, মেলাকার মালয় রেস্তোরাঁ, পাহাঙ্গের চা বাগান, পেরাকের রাবার বাগান, লংকাউই দ্বীপ- কোথায় নেই বাংলাদেশিরা। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে বাংলাদেশিরা মালয়েশিয়ায় বসবাস করলেও তাদের ঘামের-পরিশ্রমের সুফল বেশ ভালোভাবেই নিচ্ছে দেশটি।

এশিয়ার দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ মালয়েশিয়ায় এসে আবার কেউ ফেরত গেছেনÑ এমন ঘটনা বিরল। বাংলাদেশিরাও খুব কম সময়েই মালয় ভাষা ও সংস্কৃতি আয়ত্ত করে এখানে দিনাতিপাত করছেন। গড়ছেন দেশের অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ। এতসব ভালো খবরের মধ্যেও মাঝেমধ্যে কিছু খবর পীড়া দেয় বাংলাদেশিদের। সেখানে অবস্থানের কাগজপত্রের ব্যাপারে অসতর্কতা অথবা খানিক ভুল কিছু লোককে হয়রানি এমনকি শাস্তির মুখেও ফেলে দেয়। আবার কতিপয় অসাধু চক্রের অসৎকর্মের কারণে পুরো বাংলাদেশি কমিউনিটিকেই অস্বস্তির মুখে পড়তে হয়। সচেতন মহলের মতে, একই ভুল বারবার করার পরও সচেতনতা না আসায় বাংলাদেশিদের এ অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে বারবার পড়তে হয়।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অসাধু চক্রের অসৎকর্মের ফলে সামগ্রিকভাবে হয়রানির শিকার হওয়া অনেক বাংলাদেশিকে টাকার গাছ হিসেবেও বিবেচনা করে মালয়েশিয়ান পুলিশ। তারা খুব সহজেই বাংলাদেশিদের ভুলের মাশুল হিসেবে জরিমানাস্বরূপ বিরাট অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়। এমনও অভিযোগ আছে, বাংলাদেশি বন্দিদের জিম্মি করে আটকদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে তারপর ছেড়ে দেয় স্থানীয় পুলিশ।

এজন্য দায়টা বেশি কাদের? বলা যায়, শ্রমিক আইন এবং সাধারণ নিয়মকানুনের অজ্ঞতার জন্যই এভাবে ভুগতে হচ্ছে বেশির ভাগ বাংলাদেশিকে। কারো কারো অসদুপায় অবলম্বনের কারণে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে যেতে হয় অনেককে। জানা গেছে, বিভিন্ন সংগঠন নেপালি, ইন্দোনেশিয়ান, ফিলিপিনো, থাই প্রবাসীদের জরুরি বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন রাখতে প্রচারণা চালায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণার পাশাপাশি বিভিন্ন গঠনমূলক অনুষ্ঠান ও বিদেশের মাটিতে অবস্থানকালে দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারে ওইসব দেশের নাগরিকদের সচেতন করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশিরা এ ধরনের সচেতন বার্তাই পান না। অবশ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে কোনো সংগঠন না থাকলেও মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের রয়েছে সর্বাধিক রাজনৈতিক সংগঠন! বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর দিক থেকে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশিদের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু তাদের সেই ভূমিকার গুরুত্বটা কথায় থেকে যাচ্ছে। মালয়েশিয়ার সচেতন প্রবাসীরা মনে করেন, সচেতনতামূলক প্রচারণা ও স্বদেশিদের মধ্যে পরোপকারের মানসিকতাই এ ভুল থেকে বের করে আনতে পারে বাংলাদেশিদের।

এদিকে ছোট ছোট ভুলের জন্য তাদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হলেও সেসব ভুল শোধরানোর কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টদের দোষারোপ করেছেন মালয়েলিয়ায় থাকা বাংলাদেশিদের অনেকে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবাসী কর্মীদের ভুল শোধরানোতে বিভিন্ন সময়ে সেমিনার ও আলোচনা সভার মাধ্যমে সচেতন করা হচ্ছে।