দামুড়হুদা হাসপাতাল: চিকিৎসা সেবা আটকে আছে নানা সংকটে

সাজিদ হাসান সোহাগ,চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেখানে শুধু নেই আর নেই নানা কারনে সংকটে আছে চিকিৎসা সেবা। দামুড়হুদার মুক্তারপুর গ্রামের জরিনা বেগম চিকিৎসার জন্য শনিবার এসেছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। তাকে দামুড়হুদা হাসপাতালের সামনের রাস্তা দিয়ে ১৫ কিলোমিটার দূরে চুয়াডাঙ্গায় আসতে হয়েছে। দামুড়হুদা হাসপাতালে কেন তিনি চিকিৎসা নেননি এমন প্রশ্নের জবাবে জরিনা বেগম বলেন, ওই হাসপাতালে গাইনীর মহিলা ডাক্তার নেই।

চিকিৎসক সংকট ছাড়াও দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে অন্যান্য নানা সংকট। একমাত্র এম্বুলেন্সটি নস্ট হয়ে পড়ে রয়েছে ১০ বছর ধরে। এম্বুলেন্সটিকে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আট বছর ধরে নস্ট হয়ে পড়ে আছে এক্সরে মেশিনটি। মেরামতের চেষ্টা করেও মেরামত করা সম্ভব হয়নি। ফলে, এক্সরে মেশিনটিকে মেরামত অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ মোট ৩৮টি পদ শুন্য রয়েছে। মোট ১৪৭ জনের বিপরীতে নিয়োজিত আছেন ১০৯ জন। বাকি পদ শুন্য। আবাসিক মেডিকেল অফিসার পদটিও শুন্য। নারী গাইনি চিকিৎসক পদ শুন্য থাকায় উপজেলার অধিকাংশ গাইনী রোগিদের যেতে হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ও গাইনী বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট থাকলেও দুজনই সাময়িক আদেশে চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত। একইভাবে সার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্টের একমাত্র পদের চিকিৎসক প্রেষণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত। একটি মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেসথেশিয়া) ও ডেন্টাল সার্জনের পদ শুন্য। মেডিকেল টেকনোলজি (রেডিও গ্রফার), যক্ষা ও কুষ্ট নিয়ন্ত্রণ সহকারিসহ পিওন, আয়া ও পরিচ্ছন্নতাকর্মির পদ শুন্য রয়েছে।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে চিৎলা গ্রামে অবস্থিত। চার কিলোমিটারের এ রাস্তাটিও তেমন উন্নত নয়। খানাখন্দে ভরা এ রাস্তা দিয়ে কোনো রোগিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলে সেই রোগি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বেন। চুয়াডাঙ্গা থেকে দামুড়হুদা, দর্শনা ও জীবননগর অতিক্রম করে যে প্রধান সড়কটি চলে গেছে তার আশপাশের অধিকাংশ দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামবাসিকে তাদের রোগি দামুড়হুদা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে নেওয়ার চেয়ে ১০-১৫ কিলোমিটার দূরের চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া যুক্তিযুক্ত মনে করেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ার কারণে অনেকে মনে করেন, দামুড়হুদা সদর থেকে চার কিলোমিটার ভেতরে যাওয়ার চেয়ে ১০ কিলোমিটার দূরে চুয়াডাঙ্গা পৌছে যাওয়া সহজ।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের আজিজুল হক বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হলেও এখানে আধুনিক চিকিৎসার কোনো ছোঁয়া লাগেনি। পরীক্ষা প্রায় সবই করতে হয় বাইরে থেকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দামুড়হুদা সদরে কিংবা জেলা সদরে যেতে হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যদি জেলা শহরে যেতে হয় তাহলে চিকিৎসাও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে করা যেতে পারে। সেই চিন্তা-ভাবনা করে অনেকে তাদের রোগি এই হাসপাতালে না এনে সরাসরি নিয়ে যান চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাাতালে।
নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, কার কখন বিপদ হবে কেউ জানে না। রাত ১০টায় কেউ যদি কোনো দূর্ঘটনায় আহত হন তাকে এই হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে যদি রেফার্ড করার প্রয়োজন হয় তাহলে বিপাকে পড়তে হয় রোগির লোকজনকে। এখানকার এম্বুলেন্সটি নস্ট থাকায় রোগিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। আলাদা ব্যবস্থায় নিতে হলে যানবাহন প্রয়োজন। তা অনেক সময় এখানে পাওয়া যায় না। একটি আলমসাধু, ইজিবাইক, সিএনজি নিতে হলে ছুটে আসতে হয় ৪কিলোমিটার দুরে দামুড়হুদা সদরে অনেক সময় পাওয়াও যায়না। এজন্যও অনেক রোগি আগেভাগেই চলে যান চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে।
দামুড়হুদার কাদিপুর গ্রামের মিলন হোসেন বলেন, এ হাসপাতালে রয়েছে নানা সংকট। চিকিৎসার সুব্যবস্থা নেই। এই সুযোগে অনেক চিকিৎসক নামধারী গ্রাম্য ওষুধ বিক্রেতা নিজেরাই চিকিৎসক সেজে বসে সব রোগের চিকিৎসা দেন। এভাবে অপচিকিৎসার কারণে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং হচ্ছেন।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল বলেন, এ্যাম্বুলেন্স ও এক্সরে মেশিনের ব্যাপারে প্রায়ই উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়। কোনো কাজ হয়নি। ৩৮ শুন্য পদের ব্যাপারেও লেখা হয়েছে। ৩১ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন ৩০-৩১ জন রোগি ভর্তি থাকে। আউটডোরে প্রতিদিন ৪০০-৪৫০ রোগি চিকিৎসা নেন। প্রধান সড়কের পাশের গ্রামগুলোর রোগিরা এখানে কম আসেন। তারা যান চুয়াডাঙ্গায়। সংকট দূর করে এখানকার সেবার মান বাড়ানো গেলে আরো বেশি মানুষকে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হবে।