এক রুটিতে দিন পার করা সেই সায়েম আজ বিসিএস ক্যাডার!

বিসিএস বাংলাদেশের একটি স্বপ্নের চাকরি। শুধুমাত্র অত্যন্ত মেধাবী ছাত্ররাই এই গৌরব অর্জন করতে পারে। আর তার মাঝে অনেকেই আছে যারা অনেক গরিব ঘরের থেকে এসেও এই গৌরব অর্জন করতে পারে।

বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় যাওয়ার মতো ভালো কোনো পোশাক ছিল না ছেলেটির। এক বন্ধু তখন পাশে এসে দাঁড়ায়। আর চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো দিন সকালে নাশতা করেননি। শুধু দুপুরের দিকে পাঁচ টাকা দামের একটা পাউরুটি খেয়ে দিন পার করতেন। সেই ছেলেটিই আজ বিসিএস ক্যাডার। শুনুনু তাহলে অদম্য সেই ছেলেটির গল্প-

আবু সায়েমের বাড়ি কুড়িগ্রামে। বাবা অন্যের জমিতে কাজ করতেন। সে আয়ে তিনবেলা ভাত জুটত না। বাড়তি আয়ের জন্য মা কাঁথা সেলাই করতেন। তারপর সে কাঁথা বাড়ি বাড়ি বিক্রি করতেন। কত দিন কত রাত সায়েম যে না খেয়ে কাটিয়েছেন, সে হিসাব নিজেও জানেন না।

আজ সায়েমের কষ্টের দিন ঘুচেছে। ৩৫তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সমাজকল্যাণে মেধাতালিকায় দ্বিতীয় হয়েছেন তিনি। কথায় কথায় শৈশবের দিনে ফিরে গেলেন সায়েম, ‘আম্মা খুব ভোরে উঠে অন্য মানুষের পেয়ারাগাছের তলা থেকে বাদুড়ে খাওয়া পেয়ারা কুড়িয়ে আনতেন। ওই পেয়ারা ছিল আমাদের সকালের নাশতা।’

তাঁদের ঘরের সামনেই ছিল পেঁপেগাছ। ভাতের জোগাড় না হলে কাঁচা-পাকা পেঁপে খেয়েই থাকতে হতো। চাল না থাকায় একবার নাকি তাঁর আব্বা খেত থেকে কলাই তুলে আনেন। সেই কলাই ভাজা খেয়েই শুরু হয় তাঁর পেটজ্বলা। অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভাগ্যগুণে সে যাত্রায় বেঁচে যান সায়েম।

এভাবে অনাহারে-অর্ধাহারে, অসুস্থতায় কাটত দিনগুলো। তবু পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন, ছাড়েননি সায়েম। মাধ্যমিকের ভালো ফলের ধারা ধরে রাখলেন উচ্চমাধ্যমিকেও। এইচএসসি পরীক্ষার পর গ্রামের একটি কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিয়েছেন কিছুদিন। সায়েম বলেন, ‘ক্লাস করিয়ে ২ হাজার ৩০০ টাকা পেলাম। সেই টাকাতেই ভর্তি পরীক্ষা দিলাম।

ভর্তির সুযোগ পেলাম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।’ ছাত্র পড়িয়ে চলল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া আর বেঁচে থাকার লড়াই। সে লড়াইয়ে জয়ী হলেন সায়েম। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে বিসিএস পরীক্ষা দিলেন। এরপরের গল্প আর নাই বা বললাম! আজ সেই সায়েম বাবা মায়ের গর্ব।

সায়েম বলেন, ‘মা অন্যের কাঁথা সেলাই করে দিতেন। প্রতি কাঁথা হিসেবে মজুরি পেতেন ৭০ থেকে ১০০ টাকা। মায়ের ১০টি আঙুলে জালির মতো অজস্র ছিদ্র। আজ আমার মায়ের জীবন সার্থক।’