পাসের হার কমায় খুশি শিক্ষামন্ত্রী !


টানা তিন বছর ধরে পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার আগের বছরের তুলনায় কমছে। তবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এতে মোটেও হতাশ নন। বরং তিনি আনন্দিত।

বলেছেন, শিক্ষায় সংখ্যাগত উন্নতি হচ্ছে, এখন তারা মানের দিকে জোর দিতে চান। আর এ জন্যই শিক্ষকদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাতা মূল্যায়নে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে চলতি বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী এবং ১০টি বোর্ডের প্রধানরা।

এরপর মন্ত্রী পরীক্ষার ফলাফলের বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। আর এতে দেখা যায় পাসের হার, জিপিএ ফাইভের দিক থেকে গত বছরের চেয়ে এবার পরীক্ষার্থীরা খারাপ করেছে।

সার্বিকভাবে এবার পাসের হার হয়েছে ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত বছর যা ছিল ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। অর্থাৎ এবার পাসের হার কমেছে দুই দশমিক ২৭ শতাংশ কমেছে।

সর্বোচ্চ জিপিএ (জিপিএ ফাইভ) পাওয়ার সংখ্যাও এবার কমেছে প্রায় ২৩ শতাংশ। গত বছর জিপিএ ফাইভ পাওয়ার সংখ্যা যেখানে ছিল ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন, সেখানে এবার সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার হাজার ২৬২ জন। কমেছে আট হাজার ৭০৭ জন।

কেবল এসএসসিতে এবার পাসের হার আরও কম হয়েছে। আগের বছরের চেয়ে দুই দশমিক ২৯ শতাংশ কমে এবার পাসের হার হয়েছে ৬৪ দশমিক ৫০ শতাংশ।

তবে এবার আগের বছরের চেয়ে এক লক্ষ ২৫ হাজার ৩১৭ জন পরীক্ষার্থী বৃদ্ধি, বিজ্ঞান ও কারিগরিতে আগ্রহ বাড়তে থাকা, মেয়েদের শিক্ষায় উন্নতির ধারাটি বজায় রাখা স্বস্তিদায়ক।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পাসের হারের ক্ষেত্রে একটু কম। আশা করি এটা উপলব্ধি করবেন যে আমরা এখন জোর দিচ্ছি, যে সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে সে সংখ্যাকে গুণগতভাবে উন্নত করার জন্য।’

‘গুণগত মান উন্নত করতে হলে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়, কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হয়। তার জন্য খাতা দেখার ক্ষেত্রে আমরা এখন অনেক কঠোর। যে শিক্ষকরা খাতা দেখেন তারা কঠোরভাবে দেখেন।’

পাসের হার কমায় মোটেও হতাশ হননি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বরং আমরা আনন্দিত যে, লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, মান বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই ধারাটা অব্যাহত থাকবে।’

‘আমাদের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে প্রমাণ হচ্ছে আরও বেশি মানুষ শিক্ষায় সম্পৃক্ত হচ্ছে এবং ঝরে পড়া কমছে।’

‘কারিগরি শিক্ষা নিয়ে জনসম্পদ গড়ে তোলা হচ্ছে, এই সংখ্যাটা এবার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।’

‘ছাত্রীদের অগ্রগতি সার্বিকভাবে সমাজের সকল ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। ফলাফলেও তারা ভালো করেছে, সংখ্যায়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখনও ছাত্রদের থেকে কিছুটা কম আছে।’

যারা উত্তীর্ণ হতে পারেননি তারা হতাশ না হওয়ার পরামর্শও দেন মন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা আশা করছি তারা নব উদ্যমে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে আগামীতে পরীক্ষা দেবেন।’

বিতর্ক ও গুজবমুক্ত পরীক্ষা

চলতি বছর এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষায় সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি আগেভাগে, যা গত কয়েক বছর ধরেই সাধারণ সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছিল।

এই বিষয়টির উল্লেখ করেও শিক্ষামন্ত্রী সন্তোষ জানান। বলেন, ‘যেন বিতর্ক সৃষ্টি না হয়, পরীক্ষার সকল পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে সমন্বিত কর্মকৌশল প্রয়োগ করেছিলাম।’

‘পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরিশোধন, মুদ্রণ, প্যাকেটজাতকরণ, ট্রাংকজাতকরণ, কেন্দ্রে প্রেরণসহ প্রতিটি স্থরে কঠোর নজরদারি, সতর্কতা ও বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল।’

প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে দুটি কৌশল কাজে দিয়েছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদেরকে হলে প্রবেশ করিয়েছি।’

‘আমরা ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্রটা প্রতিটি সেন্টারে পৌঁছাই ৩০ মিনিট আগে। ট্রেজারি থেকে তিন জন কর্মকর্তার মাধ্যমে এটা নিয়ে যাওয়া হয় যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটতে পারে।’

‘২৫ মিনিট আগে কেন্দ্র সচিবকে এসএমএসের মাধ্যমে কোন সেটে পরীক্ষা নেবেন তা জানিয়ে দেয়া হয় এবং সেই খামটা খোলেন। ফলে কোনোভাবেই প্রশ্ন ফাঁসের কোনো সুযোগ থাকে না। এবার এটা বাস্তব প্রমাণ হয়েছে।’