সেলফি তুলতে গিয়ে লাশ হলেন প্রাপ্তি-মেহরাব

রাজধানীর নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজীবা বিনতে তানভীর প্রাপ্তি ও মেহরাব ইশরাকুল। সাত বন্ধু মিলে বেড়াতে গিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় মেঘনা পাড়ে। বন্ধুদের মধ্যে দুইজন মেয়ে ও পাঁচজন ছিল ছেলে। একসঙ্গে আর ফিরে আসা হলো না তাদের। সাত সহপাঠীর পাঁচজন মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে এলেন, আর উদ্ধার করা হলো প্রাপ্তি ও মেহরাবের প্রাণহীন নিথর দেহ।

আশুগঞ্জের চরসোনারামপুর এলাকার মেঘনা নদীর পাড়ে শনিবার বেড়াতে যান সাত বন্ধু।সবাই মিলে নৌকায় মেঘনা নদীতে ঘুরতে যান। পরে তারা সারা দিন রেলসেতু ও আশপাশ এলাকায় ঘুরে বিকেলে আশুগঞ্জের চর সোনারামপুর এলাকায় বেড়ান। ফিরে আসার আগে মেঘনা পাড়ে সেলফি তুলতে গিয়ে ঘটে যায় মর্মান্তিক দূর্ঘটনা। সেলফি তোলার এক পর্যায়ে পা পিছলে নদীতে পড়ে যান প্রাপ্তি। সাতার জানা না থাকায় মেঘনার স্রোতে সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে যান। চোখের সামনে বন্ধু ডুবে যাওয়ায় তাকে উদ্ধারের জন্য পানিতে ঝাপিয়ে পড়েন মেহরাব, কিন্তু বর্ষার উত্তাল মেঘনা তাকেও গ্রাস করে নেয়।

প্রাপ্তি ও মেহরাবকে পানিতে তলিয়ে যেতে দেখে স্থির থাকতে পারেননি অন্যরাও। দুই বন্ধুকে বাঁচাতে একে একে নদীতে লাফ দেন ঘুরতে যাওয়া নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাকি পাঁচ শিক্ষার্থীও। কিন্তু তারাও পানির স্রোতে তলিয়ে যান। পরে ভাগ্যের জোরে তারা প্রাণে বাঁচেন। তাদের ডুবে যেতে দেখে এগিয়ে আসেন আশেপাশের লোকজন। স্থানীয়দের চেষ্টায় পাঁচজন উদ্ধার পায়. তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু নিখোঁজ রয়ে যান তানজীবা বিনতে তানভীর প্রাপ্তি ও মেহরাব ইশরাকুল।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিস ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু বৈরি আবহাওয়া ও প্রবল স্রোতের কারণে ডুবুরি দল শনিবার রাতে উদ্ধার কাজ শুরু করতে পারেনি। রোববার সকালে ঢাকা থেকে আসা ১০ সদস্যের নৌবাহিনীর একটি ডুবুরি দল, ভৈরব বাজার ফায়ার সার্ভিসের ৯ সদস্যের একটি দল ও আশুগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি দল উদ্ধার অভিযান শুরু করে।

অভিযানে চলাকালে রোববার দুপুরে মেঘনা নদীর মাঝখানে তানজিবা বিনতে তানভীর প্রাপ্তির লাশ ভেসে উঠলে নৌ পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। এরপর ঘটনার প্রায় ২৮ ঘন্টা পর রাতে সোনারামপুর ঘটনাস্থলের পাশে মেঘনা নদীতে ইসরাফুল মেহরাবের লাশ ভেসে উঠে। নদীতে এলাকাবাসী নিহতের লাশ ভাসতে দেখে ভৈরব বাজার ফায়ার সাভিসকে খবর দিলে ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতের লাশ উদ্ধার করেন।

নিহতদের পরিবারের লোকজনের কোন অভিযোগ না থাকায় তাদের কাছে দুই শিক্ষার্থীর লাশ পুলিশের মাধ্যমে হস্থান্তর করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন আশুগঞ্জের ইউএনও মৌসুমী বাইন হিরা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম তালুকদার।