আগামী জাতীয় নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় ফেরার ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তা আর জনগণের ওপর ভরসা রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, আল্লাহ চাইলে আর জনগণ নৌকায় ভোট দিলেই কেবল তিনি আবার সরকার গঠন করবেন।
মঙ্গলবার গণভবনে বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধাসহ সামাজিক নিরাপত্তার অধীনে বিভিন্ন ভাতা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সরাসরি উপকারভোগীদের ব্যাংক হিসাবে পাঠানোর জিটুপি পদ্ধতি উদ্বোধন করেন প্রথানমন্ত্রী। এ সময় তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, উপকারভোগীদের ব্যাংক হিসাবে টাকা পৌঁছার খবর তাদের মোবাইল ফোনে চলে যাবে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সে টাকা তুলতে পারবেন তারা।
দেশে সব মিলিয়ে ভাতাপ্রাপ্তদের সংখ্যা প্রায় ৬৭ লাখ। তবে আজ ইলেকট্রনিক ট্রান্সফার পদ্ধতির আওতায় এসেছেন এক লাখ ১৫ হাজার জন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে বয়স্ক এবং পরে বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা চালুর কথা তুলে ধরেন। পরে চালু হয় প্রতিবন্ধী, হিজরা, চা শ্রমিক, বেদেদের ভাতা।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে জানান, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ওপর হামলার সময় তিনি এলাকায় গিয়ে জেনেছেন, বয়স্ক ভাতা দেয়ার ক্ষেত্রেও একটি টাকা কেটে নেয়া হয়।
ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসতে না পারলে যেন এমন কেউ করতে না পারে, সে চিন্তা থেকে উপকারভোগীদের ব্যাংক হিসাবে সরাসরি টাকা পাঠানোর পদ্ধতি চালু করার কথা জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে আবার নির্বাচন, এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে জনগণের ওপর। জনগণ নৌকায় ভোট দিলে আবার ক্ষমতায় আসব, না দিলে আসব না। আর আল্লাহর ওপর নির্ভর করে। যদি আল্লাহ দেন আর জনগণ যদি ভোট দেয় তাহলে আসব, নাহলে আসব না।’
‘কিন্তু তার আগে আমার কাজগুলোকে সুরক্ষিত করতে চাই যেন আমার দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ আর ছিনিমিনি করতে না পারে এবং তাদের কাছ থেকে কেউ যেন আর টাকা কেড়ে নিতে না পারে।’
‘জনগণ ভোট দিলে ক্ষমতায় আছি, না দিলে নাই। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে যে কাজগুলো করেছিলাম, ২০০১ এ ক্ষমতায় আসতে পারেনি বলে সেই কাজগুলোর অনেকগুলো ধ্বংস করে দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে যখন বয়স্ক ভাতা প্রথম চালু হয়, সে সময় উপকারভোগীর সংখ্যা ছিল চার লাখ ৩০ হাজার। আর বরাদ্দ ছিল ৪৯ কোটি টাকা। আর এখন এই সংখ্যাটি ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে। আর ১৪ লাখ বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা, দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধাসহ নানা ভাতা মিলিয়ে সংখ্যাটি প্রায় ৬৭ লাখ। আর এদের জন্য বরাদ্দ চার হাজার কোটি টাকার বেশি।
আবার বিভিন্ন এলাকায় জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে শতকরা ছয় থেকে সাত শতাংশ ভাতা পরিশোধ করা হতো এমন মানুষদের নামে যাদের অস্তিত্ব নেই। ইলেকট্রনিক ট্রান্সফার চালু হওয়ায় সেই দুর্নীতি শূন্যে নেমে আসত। আবার ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না।
যেসব দুঃস্থ মানুষ টাকা আনতে ব্যাংকে বা ইউনিয়ন পরিষদে যেতে পারবেন না, তারা সমাজকল্যাণ অফিসকে জানালে বাড়িতে টাকা পৌঁছে দেয়া হবে বলেও জানানো হয় অনুষ্ঠানে।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ভাতা দেয়ার দর্শন ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমরা যা দিচ্ছি সেটা কেউ যেন না খেয়ে কষ্ট না পায় সে জন্য। কিন্তু কেউ যেন কর্মবিমুখ না হয়। যারা ভাতা পাচ্ছেন তাদের মধ্যে যাদের কর্মক্ষমতা আছে তাদেরকে অবশ্যই কাজ করে নিজেদের জন্য উপার্জন করতে হবে। সে ব্যবস্থাটাও আমরা রেখেছি।’
‘আমরা এমন পরিমাণে ভাতা দেব যেটা দিয়ে আপনি হয়ত খাদ্যের ব্যবস্থাটা করতে পারবেন। কিন্তু আপনাকে কাজও করতে হবে বা এই টাকাটা আপনি কাজে লাগাতেও পারেন যেটা দিয়ে আয় উপার্জনও করতে পারেন।’
‘শুধু ভাতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে চলতে হবে, সেটা কিন্তু না। তাহলে সবাই কর্মবিমুখ হয়ে বসে থাকবেন। সেটা আমরা চাই না।’
‘এটা নিয়ে সংসার চলে না। পুরো সংসার চালানোর দায়িত্ব আমরা নেব না। আমরা কিছু সাহায্য করব যেন কেউ না খেয়ে কষ্ট না পায়। আমরা সাহায্য করব যেন নিজে কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, সেই সাথে সাথে ভাতাটাও থাকবে আপতকালীন সময়ের জন্য, যেন কষ্ট করতে না হয়।’
‘আর একজন বয়স্ক মানুষ যখন ভাতার টাকাটা পান, সংসারে গুরুত্ব বাড়ে; ছেলে, ছেলের বউ, নাতি পুতি যারাই থাকুক তারা