তারুণ্যের শক্তিতেই বিশ্বজয় ফ্রান্সের

রাশিয়ার বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়া দলটি ছিল দুর্ধর্ষ। হার না মানা দলটি অপ্রতিরোধ্য গতিতেই পৌঁছে গিয়েছিল ফাইনালে। বিপরীতে তারুণ্য নির্ভর ফরাসি দল। ফেভারিট হিসাবেই গিয়েছে বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক দিদিয়ে দেশমের অভিভাবকত্বে। দারুণ উদ্দীপ্ত ক্রোয়েটরা হার মেনেছে তরুণ কিন্তু বিশ্বকাপ ঐতিহ্যে এগিয়ে থাকা ফ্রান্সে কাছে। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ ম্যাচেও ক্রোয়েশিয়া মূলত হেরেছে ফরাসিদের তারুণ্য, অভিজ্ঞতা ও কৌশলের কাছে।

পল পগবা, কিলিয়ান এমবাপে, এনগোলো কান্তে, আঁতোয়া গ্রিজমানে গড়া তারুণ্য নির্ভর দেশমের। ফ্রান্সের এই দলের গড় বয়স ২৬ বছর। যেখানে এমবাপের বয়স মাত্র ১৯ বছর। তুলনামূলক নতুন প্রতিভায় গড়া দলটিতে আছেন পরীক্ষিত ও উদীয়মান তারকারা। টগবগে এই তারুণ্যে ভর করেই দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা ঘরে তুলেছে ফরাসিরা।

এবারের আসরে ফরাসিদের সাফল্যে বড় ভূমিকা রেখেছেন এমবাপে। নির্বাচিত হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা উদীয়মান তারকাও। পিএসজির এই তারকার ক্ষিপ্রতার কাছে প্রায়শই অসহায় হয়ে পড়েছিল প্রতিপক্ষের ডিফেন্স। ফাইনালে টুর্নামেন্টের চতুর্থ গোল করে টগবগে এই তরুণ ছুঁয়ে ফেলেছেন কিংবদন্তি পেলেকে।

২০১৬ সালের ইউরোর ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েছে ফ্রান্স। ফাইনালের আগে পগবা বলেই দিয়েছিলেন, ইউরোর মতো আর ভুল করবেন না তারা। পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ খেলেও সেবার ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালের কাছে হারতে হয়েছিল তাদের।

অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই তাদের ডুবিয়েছিল। তাই এবার বেশ সতর্কই ছিল দেশমের শিষ্যরা। ফাইনালে নিজেদের রক্ষণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই তবে আক্রমণে গেছে ফ্রান্স। তার ফলও পেয়েছে তারা। ম্যাচের প্রথম আধঘণ্টা ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণ সামলিয়েছে তারা। তারপর ধীরে ধীরে খেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

ফরাসিদের বিশ্বজয়ের আরেকটি কারণ মিডফিল্ডের শক্তি। পল পগবার মতো প্লে-মেকারের সাথে কান্তের মতো পরিশ্রমী তরুণ—এই দুই জনের রসায়নে মিডফিল্ডে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পেরেছিল ফ্রান্স। কান্তে প্রতিপক্ষের পা থেকে মোট ৫২ বার বল ছিনিয়ে নিয়েছেন। মিডফিল্ডে নিজের দায়িত্ব অত্যন্ত সফল ভাবে পালন করেছেন কান্তে।

ম্যাচের ১৮তম মিনিটে আত্মঘাতী গোলের কারণে মনোবলে চিড় ধরে ক্রোয়েশিয়ার। পরবর্তীতে ভিএরআর প্রযুক্তিতে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত ক্রোয়েটদের অনেকটাই হতোদ্যম করে দেয়। ফলে ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ার পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। বিপরীতে আরো দুইটি গোল করে এদিন জয় নিশ্চিত করে ফ্রান্স।

সবশেষে অভিজ্ঞতা বড় একটি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বড় কোন টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা নেই ক্রোয়েশিয়ার। বিপরীতে ফরাসিরা ফুটবলের ঐতিহ্যবাহী দল। দিদিয়ে দেশ নিজের ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক। বড় ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতায় ফ্রান্সের তরুণ দলটি ক্রোয়েশিয়ার চেয়ে এগিয়ে। সব মিলিয়ে সেই অভিজ্ঞতাও ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেয়।