ফুসফুসে ক্যানসারের উপসর্গ নির্ভর করে ক্যানসারের আকার ও অবস্থানের ওপর। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে বুকের এক্স-রে পরীক্ষায় এ রোগ ধরা পড়ে। এ পর্যায়ে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রোগীর ক্যানসার ফুসফুসেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এর চিকিৎসা সম্ভব।
উপসর্গ : স্থায়ী কাশি ও শ্বাসকষ্ট, বুকব্যথা, রক্তরঞ্জিত শ্লেষ্মা, ওজন হ্রাস ও স্বরভঙ্গ, বয়স যদি চল্লিশের ওপরে হয় এবং এক বা একাধিক উপসর্গ যদি দুসপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, তা হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
চিকিৎসা : এ রোগের চিকিৎসা তিনভাবে করা যায়। চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যানসারের আকার, ব্যাপ্তি ও হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষার (কোষের ধরন) ওপর। কখনো একাধিক চিকিৎসা পদ্ধতি সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়।
সার্জারি বা শল্যচিকিৎসা : এতে আক্রান্ত ফুসফুসের অংশটি শরীর থেকে অপসারণ করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ের ও ক্ষুদ্রাকৃতি ক্যানসারের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে সার্জারির মাধ্যমে নিরাময়ে সম্ভাবনা সর্বাধিক।
রেডিওথেরাপি বা বিকিরণ চিকিৎসা : এ পদ্ধতিতে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করা হয়। কেমোথেরাপি বা রাসায়নিক চিকিৎসা : এ পদ্ধতির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় ক্যানসারবিধ্বংসী ওষুধ। অধিকতর অগ্রসর বিশেষ ধরনের ফুসফুস ক্যানসারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপির ব্যবহার করা হয়।
ক্যানসার প্রতিরোধ করুন : ধূমপানের অভ্যাস থাকলে এখনই ত্যাগ করুন। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন (অতি ধূমপায়ীরা এক বছর অন্তর অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এক্স-রে করান)। দৈনন্দিন কার্যসূচিতে পরিবর্তন আনুন। এমন কিছু করুন, যাতে হাতের ব্যবহার হয় অথবা পায়ের ব্যায়াম (যেমন- হাঁটাহাঁটি, জগিং ইত্যাদি) হয়। বেশি করে পানি পান করুন এবং তাজা ফলমূল ও শাকসবজি, গাজর খান। তবে মোটেও অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করবেন না।
মূল কথা হচ্ছে, যদি ক্যানসারের প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় ও যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ সম্ভব হয়, তা হলে আপনার জীবন রক্ষা পেতে পারে। আসুন, ক্যানসারের সার্বিক প্রতিরোধ, সঠিক রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে এ মরণব্যাধি নিয়ন্ত্রণ করে ভালো থাকি।
লেখক : টিউমার ও ক্যানসার রোগ বিশেষজ্ঞ। অধ্যাপক, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা