আজ শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনায় আসছেন। সফরে প্রধানমন্ত্রী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাইকাজের উদ্বোধন করবেন।
পাবনার জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ঈশ্বরদী থেকে মাঝগ্রাম হয়ে পাবনা পর্যন্ত রেললাইন ও ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন। সফরকালে তিনি পাবনায় মোট ৪৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
পাবনা জেলার রূপপুর পদ্মার পারে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন রোসাটমের নেতৃত্বে চলছে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মহাকর্মযজ্ঞ।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের কংক্রিট ঢালাইকাজের উদ্বোধন করেন। এর মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে আজ শনিবার প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাইকাজের উদ্বোধন করবেন।
বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শওকত আকবর জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হয়েছে এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ। এরই মধ্যে রাশিয়ান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক দ্বিতীয় বা শেষ পর্যায়ের কাজও এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান কালের কণ্ঠকে জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিটের ঢালাইকাজের উদ্বোধন করবেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রুশ ফেডারেশনের উপপ্রধানমন্ত্রী ইউরি ইভানোচিভ বোরিসভ এবং দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
ট্রেন সার্ভিসসহ ৪৯ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হচ্ছে আজ : দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে পাবনাবাসীর স্বপ্নের রেল সার্ভিস চালু হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার এ রেললাইনের উদ্বোধন করবেন। এত দিন জেলার ঈশ্বরদীতে রেল সংযোগ থাকলেও তা পাবনা সদরের সঙ্গে যুক্ত ছিল না।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক জানান, ঈশ্বরদীর মাঝগ্রাম হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন রেল নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত ঈশ্বরদী-পাবনা রেল সেকশনে মোট ৭৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইন হচ্ছে। এর মধ্যে ২৫ কিলোমিটারে রেলপথের নির্মাণ প্রক্রিয়া, সেতু, কালভার্ট, রেলগেট-রেলক্রসিং, ট্রেন চলাচলের সিগন্যাল সব কিছু প্রস্তুত। বাকি ৫৩ কিলোমিটার দ্বিতীয় ধাপে শেষ হবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে প্রকৌশলী-২ আরিফ আহম্মেদ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফলক উন্মোচন করে উদ্বোধনের পর ট্রেনটি পাবনা এক্সপ্রেস নামে চলবে। উদ্বোধনের দিন ইঞ্জিনসহ ছয়টি বগি নিয়ে পাবনা থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত চলাচল করবে। পরবর্তী সময়ে পাবনা-রাজশাহীর মধ্যে চলাচল করবে।
প্রতিদিন ঈশ্বরদী-পাবনা-রাজশাহী-পাবনা-ঈশ্বরদীতে ৪২৩ যাত্রী ধারণক্ষমতার এই ট্রেনে থাকবে এসি সিগ্ধা, চেয়ার কোচ, নন-এসি ও শোভন। ঈশ্বরদী থেকে প্রতিদিন ট্রেনটি সকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে পাবনা পৌঁছবে ৬টা ৪৫ মিনিটে। এরপর পাবনা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ৭টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে রাজশাহী পৌঁছবে ৯টা ৩৫ মিনিটে। বিপরীত দিক থেকে রাজশাহী থেকে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে পাবনা পৌঁছবে রাত ৯টা ১৫ মিনিটে। পরে ট্রেনটি পাবনা থেকে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে ঈশ্বরদী পৌঁছবে রাত ১১টায়।
দীর্ঘকাল অপেক্ষার পর রেল পাওয়ায় পাবনাবাসীর মধ্যে ব্যাপক আনন্দ-উল্লাস লক্ষ করা যাচ্ছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পাবনার এ দাবি পূরণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল ও পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এক বিবৃতিতে ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
রেল যোগাযোগ উদ্বোধনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ পাবনায় মোট ৩১টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১৮টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।