এবার চিত্রনায়িকা

‘মধ্যরাতে প্রেমিক রুমে আসে। অন্তরঙ্গ দৃশ্য। খুব স্বাভাবিকভাবেই দৃশ্যধারণ হলো। আমার ও প্রেমিকরূপী তৌকীর ভাইয়ের কোনো সমস্যাই হয়নি। সমস্যা হলো ডাবিংয়ে। শুধু সমস্যা না, গুরুতর সমস্যা। ভয়েস দেওয়ার সময় অন্তরঙ্গ মুহূর্তের শব্দ করতে হবে। খুবই লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলাম, হাসিও পাচ্ছিল’—এবারের ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘কমলা রকেট’-এ অভিনয়ের অভিজ্ঞতা বলছিলেন ছবির নায়িকা সামিয়া।

ছয় বছর আগে লাক্স সুপারস্টার হয়েছিলেন। এবারই প্রথম অভিনয় করলেন চলচ্চিত্রে। এত দেরি হলো যে? ‘ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল বিলবোর্ডের মডেল হব, রাস্তার মোড়ে মোড়ে থাকবে আমার ছবি। অভিনয় নিয়ে ফ্যাসিনেশন ছিল না। তবে লাক্স সুপারস্টার হওয়ার পর চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছিলাম। অন্য সব লাক্স তারকার মতো আমার কাছেও অনেক ছবির প্রস্তাব এসেছিল। তবু করতে পারিনি। যদি শর্তই থাকে, কস্টিউম নিয়ে আমার অনিচ্ছা থাকতে পারবে না, তাহলে সেই ছবি কিভাবে করি?’ প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন দিয়েই শেষ করলেন। একটু থেমে ফের যোগ করলেন, ‘অন্য যেসব প্রস্তাব এসেছিল সেগুলোর কোনোটার গল্প পছন্দ হয়নি আবার কোনোটার পরিচালকের সঙ্গে মতের মিল হচ্ছিল না।’

‘কমলা রকেট’ পরিচালক নূর ইমরান মিঠুর সঙ্গে মতের মিল হয়েছিল? ‘দেখুন, পরিচালকের সঙ্গে আমার পূর্বপরিচয় ছিল না। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম থেকে আমাকে বলা হলো, একটা ছবি হচ্ছে। তুমি গল্প শুনে সিদ্ধান্ত নিতে পারো। গল্প পড়লাম, খুবই পছন্দ হলো। এরপর মিঠু ভাইয়ের সঙ্গে বেশ কয়েকবার আলোচনায় বসলাম, আমাদের দূরত্বটা কমে গেল। তা ছাড়া তৌকীর ভাই-মোশাররফ ভাইদের সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা তো ছিলই। বলতে গেলে ছবির সেটের প্রায় সবাই ছিলেন আমার পরিচিত। হেসে-খেলেই দারুণ একটা ছবির শুটিং করেছি।’

বড়পর্দায় নিজেকে প্রথমবার দেখে দারুণ উচ্ছ্বসিত সামিয়া, ‘এই অনুভূতি সত্যিই অন্য রকম। ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’ দারুণ সাড়াও পাচ্ছেন, ‘অনেকেই আমাকে উইশ করেছে, অভিনয়ের প্রশংসা করেছে। অনেক গুণী অভিনয়শিল্পী, সাহিত্যিকও বলছেন, আমি ভালো করেছি। শোবিজে এ পর্যন্ত যা করেছি, এটিই আমার সেরা অর্জন।’

সিনেমার শুটিংয়ে গিয়ে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে, কোনোটি মজার আবার কোনোটি কষ্টের। কষ্টের অভিজ্ঞতাও শেয়ার করলেন, ‘গল্প অনুযায়ী শুটিং শুরু হয় শীতের সময়ে। শীতের পোশাক পরে ঢাকা থেকে লঞ্চে যেতাম মোরেলগঞ্জ। ফের ঢাকায় ফিরতাম। এই যাওয়া-আসার মধ্যেই চলত শুটিং। মাঝে কিছুদিন বিরতি পড়ল। আবার যখন শুটিংয়ের ডেট পড়ল তখন রীতিমতো গরম। এই গরমের মধ্যে শীতের ভারী পোশাক পরে আবার যেতে হলো মোরেলগঞ্জ! খুবই কষ্টের অভিজ্ঞতা।’

‘কমলা রকেট’-এর সাফল্যে ভীষণ খুশি। ‘নাচ-গান ছাড়াও যে সুন্দর ছবি হয়, এই ছবি তার প্রমাণ। আমি নিজেও স্টার সিনেপ্লেক্সে গিয়ে ছবির টিকিট পাইনি। এতে আমি খুশিই হয়েছি’—বললেন সামিয়া।

ছোট পর্দায় নিয়মিত অভিনয় করছেন। এবার বড় পর্দায়ও নিয়মিত হতে চান।

পড়ছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়া শুরু করেছিলেন অর্থনীতি নিয়ে, শুটিং ব্যস্ততায় সময় দিতে পারছিলেন না, পরে বিষয় পরিবর্তন করে নেন ইংরেজি সাহিত্য। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েই পরিচয় হয় সাফাত চৌধুরীর সঙ্গে। বন্ধুত্ব থেকে প্রণয়, এখন তাঁর বাগদত্তা সামিয়া। ‘সাফাত আসলে আমার বন্ধুদের বন্ধু ছিল। পরে আমার বন্ধু হয়। সে পড়ত বিবিএতে। সাফাত আমাকে প্রস্তাব দেওয়ার এক মাসের মধ্যে আকদ হয়ে যায় আমাদের’—নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে বেশ খোলামেলাভাবেই বললেন সামিয়া।

অভিনয় আর সংসার, দুটো কি সমানতালেই চলবে তাহলে? ‘সংসার তো এখনো শুরু করিনি। শিগগিরই হয়তো শুরু হয়ে যাবে। তখন অভিনয়-সংসার দুটো নিয়েই থাকব। তবে বিয়ের পর আমাদের দেশে মেয়েদের নায়িকার খাতা থেকে ধীরে ধীরে নাম কাটা যায়। নায়িকার খাতা থেকে নাম কাটা গেলে কিছুদিন চাকরি করব বা অন্য কিছুতে মনোযোগ দেব। এরপর যখন মা-খালাদের চরিত্রে অভিনয়ের বয়স চলে আসবে তখন ফের অভিনয় করব’—বলে নিজেই হাসলেন।