থাইল্যান্ডের সেই গুহায় উদ্ধার অভিযান নিয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য দিলেন ডুবুরি!

থাইল্যান্ডে চিয়াং রাইপ্রদেশের রহস্যময় গুহায় আটকে পড়া ১২ জন কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে।

থাই ডাক্তাররা বলছেন, উদ্ধার হওয়া ১২ কিশোর ও তাদের কোচ এখন ভালো ও সুস্থ আছে। ফুটবলার হওয়ায় এত দিন গুহায় থাকার পরও তারা মানসিকভাবে চাঙা আছে বলে জানিয়েছেন তারা। তবে আটকে পড়াদের বের করে আনার কাজে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অনেক বিদেশি বিশেষজ্ঞ ডুবুরি অংশ নিয়েছিলেন। ডেনমার্কের ইভান কারাজিচ তাদের একজন।

এই বিশেষজ্ঞ ডুবুরি থাইল্যান্ডেরই কো-তাও নামে ছোট একটি দ্বীপে একটি গুহার ভেতরে ডাইভিং বা ডুব সাঁতার দেয়ার একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালান। চিয়াং রাইয়ের পাহাড়ের গুহায় ১২ জন কিশোর ফুটবল দলটির আটকে পড়ার সংবাদ প্রচার হওয়ার পর অনেক স্বেচ্ছাসেবী ডুবুরির মতো তিনিও যোগ দেন উদ্ধারকারী দলে।

বিশেষজ্ঞ এই ডুবুরি গত কয়েকদিনের উদ্ধার অভিযানের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে কারাজিচ বিবিসিকে বলেছেন, এসময় তিনি আটকে পড়া কিশোর ফুটবলারদের সাহসের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, যাদের অধিকাংশ সাঁতারই জানতো না বলে জানান তিনি।

ইভান কারাজিচ বলেন, ‘এই বাচ্চাগুলোকে এমন কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা আগে কখনো এই বয়সের কোনো শিশুই হয়তো করেনি। মাত্র ১১ বছর বয়সে কেভ ডাইভিং (গুহার ভেতরে ডুব সাঁতার) চিন্তারও বাইরে।’

তিনি আরো বলেন, সরু গুহায় ভারি অক্সিজেনের পাত্র পিঠে নিয়ে মাস্ক পরে ডুব সাঁতার দেয়া যে কোনো বয়সের মানুষের জন্য বিপজ্জনক। যখন তখন বিপদ আসতে পারে। নিজের টর্চের আলো ছাড়া সবকিছুই ছিল অন্ধকার। তিনি বলেন, তাদের উদ্ধারের পরিকল্পনার সময় সবচেয়ে ভয় ছিল যদি বাচ্চাগুলো মাঝপথে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, তখন কিভাবে তা সামাল দেয়া যাবে।

এই ডুবুরি বলেন, ‘আমি বিশ্বাসই করতে পারি না যে, এই বাচ্চাগুলো কতটা সাহসী এবং ঠান্ডা মাথার হতে পারে। ভাবতেই পারছি না দুই সপ্তাহ ধরে ঠান্ডা, অন্ধকার গুহার আটকে ছিল তারা। বাবা-মাকে দেখেনি।’

বিশেষজ্ঞ ডুবুরি ইভান কারাজিচের দায়িত্ব গুহার মাঝামাঝি পথে অবস্থান নিয়ে অক্সিজেন-ভর্তি পাত্র পরীক্ষা করে বদলে দেয়া।

গত রোববার উদ্ধার হওয়া প্রথম বাচ্চাটিকে নিয়ে আসতে দেখার অনুভূতি জানাতে গিয়ে এই ডুবুরি বলেন, ‘মনে মনে অনেক আশঙ্কা ছিল আমার। ৫০ মিটারের মতো দূরে প্রথম যখন একজন ডুবুরি এবং তার পেছনে বাচ্চাটি নজরে এলো, আমি তখনও নিশ্চিত ছিলাম না যে বাচ্চাটি বেঁচে আছে কিনা। যখন দেখলাম সে শ্বাস নিচ্ছে, বেঁচে আছে, দারুণ স্বস্তি পেয়েছিলাম।’

প্রসঙ্গত, গত ২৩ জুন ১২ জন কিশোর ফুটবলারদের নিয়ে তাদের কোচ এক্কাপল চান্তাওয়াং গুহা দেখতে যান। কিন্তু গুহার ভেতরে ঢুকলে হঠাৎ বৃষ্টি আসলে তারা গুহার মুখ থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার ভেতরে চলে যান এবং সেখানেই আটকা পড়েন তারা। এসময় তাদের অক্সিজেন দিতে গিয়ে এক ডুবুরির মৃত্যুও হয়।

দীর্ঘ ১৮ দিন ধরে সেই অন্ধকার পানি ভর্তি গুহায় আটকে ছিল তারা। এর আগে রবিবার (৮ জুলাই) স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে অত্যন্ত সুদক্ষ ডুবুরি দল।