নারায়ণগঞ্জে হত্যার পর খুনি নিজেই ছিলেন হত্যার প্রতিবাদ আন্দোলনে সোচ্চার!

হত্যার পর অত্যন্ত কৌশলে খুনি নিজেই নেমে পড়ে নিখোঁজ বন্ধুকে খুঁজতে। পরিবারকে দিতে থাকে নানা সান্ত্বনা। নিখোঁজ বন্ধুকে খুঁজে পেতে থানা পর্যন্ত যান খুনি নিজেই। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।

খুন হওয়া ব্যক্তির মোবাইলের সিম উদ্ধারের পরেই বের হয়ে আসে খুনির আসল চেহারা। ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জ শহরের। নিখোঁজের ২১ দিন পর শহরের আমলাপাড়া এলাকার বন্ধুর বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে কালিরবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর চন্দ্র ঘোষের ৫ টুকরা খন্ডিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

সোমবার রাত ১১টার দিকে আমলাপাড়ার ১৫ কে সি নাগ রোডের রাশেদুল ইসলাম ওরফে ঠান্ডু মিয়ার বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে অভিযান চালায় পুলিশ। তারা সেপটিক ট্যাংক খুলে ভেতরে তল্লাশি চালিয়ে ৩টি বস্তায় প্রবীর ঘোষের ৫ টুকরো খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে। তবে খণ্ডিত লাশ উদ্ধার হলেও উদ্ধার হয়নি দুই পায়ের হাটুর নিম্নাংশ। এ বাড়ির ২য় তলায় প্রবীর চন্দ্র ঘোষের বন্ধু পিন্টু দেবনাথ ভাড়া থাকতেন। পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রবীর চন্দ্র ঘোষের বন্ধু পিন্টু দেবনাথ ও বাপন ভৌমিককে গ্রেফতার করেছে।

এদিকে প্রবীর ঘোষ নিখোঁজের পরেই জেলাজুড়ে এই ব্যবসায়ীকে ফিরে পেতে আন্দোলেন নামে তার পরিবারসহ বিভিন্ন সংগঠন।

পুলিশ সূত্র জানায়, সেই আন্দোলনেই খুনি পিন্টু সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল। প্রত্যেকটি কর্মসূচিতেই সে যোগ দিয়ে নিজেকে কৌশল খাটিয়ে বাঁচার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। কিন্তু প্রবীর ঘোষের মোবাইল সিম সব রহস্যের উদঘাটন করে দেয়।

পুলিশ সূত্রে জানিয়েছে, গত ১৮ জুন রাত সাড়ে ৯টায় নগরীর বালুর মাঠের বাসা থেকে কালিরবাজার এসে নিখোঁজ হন স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর চন্দ্র ঘোষ। নিখোঁজের ঘটনায় ১৯ জুন প্রবীরের বাবা বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। এরপর প্রবীর ঘোষকে উদ্ধার অভিযানে নামে পুলিশ।

প্রবীর ঘোষের সন্ধানকালে তার ব্যবহৃত মোবাইলটি কুমিল্লা সীমান্ত এলাকায় ব্যবহার হওয়ার সন্ধান পায় পুলিশ। তারা মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে গিয়ে এর বাহক বাপন ভৌমিককে গ্রেফতার করে। বাপন ভৌমিক পুলিশকে জানায় পিন্টু তাকে এ মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করতে দিয়েছে। পুলিশ বাপনকে গ্রেফতার করে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসে। এরপরপরই গ্রেফতার করা হয় প্রবীরের বন্ধু পিন্টু দেবনাথকে।

জিজ্ঞাসাবাদে পিন্টু দেবনাথ ও বাপন ভৌমিক জানায়, প্রবীর ঘোষের লাশ আমলাপাড়ার ১৫ কে সি নাগ রোডের রাশেদুল ইসলাম ওরফে ঠান্ডু মিয়ার বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে রয়েছে। এ তথ্য পাওয়ার পরপরই পুলিশ বাড়িটিকে ঘিরে রাখে। পরে ডোম নিয়ে এসে সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে তল্লাশি অভিযান চালায়। অনেক দিন হয়ে যাওয়ায় লাশটির খণ্ডগুলো বিকৃত হয়ে গেছে। পচে গলে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।

প্রবীরের পারিবারিক সূত্র জানায়, কিছু দিন আগে ভারতের কলকাতায় প্রবীর ঘোষের বন্ধু পিন্টু দেবনাথের ওপেন হার্ট সার্জারী হয়। এই প্রবীর ঘোষই ভারতে পিন্টুর চিকিৎসার জন্য সকল সহযোগিতা করে।

পুলিশ বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছে, প্রবীর ঘোষের এক ভাই দীর্ঘদিন থেকে বিদেশে অবস্থান করছে। ওই ভাইয়ের দেয়া টাকা নিয়েই প্রবীর ও পিন্টু স্বর্ণ ও সুদের ব্যবসা করছিলেন। এই টাকার একটি বিশাল অংশ পিন্টুর কাছে গচ্ছিত ছিলো। প্রবীর এ টাকার জন্য কিছুদিন ধরে পিন্টুকে চাপ দিয়ে আসছিলো।

পুলিশ সুপার মঈনুল হক জানান, পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই প্রবীর ঘোষকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার কারণ এখনো সুস্পষ্ট নয়। গ্রেফতারকৃত পিন্টু দেবনাথ এবং বাপন ভৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা শুধুমাত্র লাশটি কোথায় আছে তা বলেছে। কিভাবে হত্যা করা হয়েছে, কারা কারা জড়িত, কেনোই বা হত্যা করা হয়েছে এ ব্যাপারে তারা পুরোপুরি মুখ খোলেনি। যেহুতু লাশ উদ্ধার হয়েছে পুরো ঘটনাটি এখন পরিষ্কার হয়ে যাবে।

ভাই হারিয়ে শোকে মূহ্যমান ইতালি প্রবাসী ছোট ভাই সৌমিক ঘোষ লেন জানান, আমার ভাই নিখোঁজ হওয়ার পর খুনীরা তাকে খোঁজার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যায়। আমরা ঘুনাক্ষরেও টের পাইনি এরাই খুনী। অথচ এই খুনীরা আমাদের প্রতিদিনই সমবেদনার বাণী শুনিয়ে আসছিল।

এই ঘটনার পেছনে অন্যকারো হাত আছে দাবি করে কালীবাজার স্বর্ণ ব্যবসায়ী মার্কেটের সভাপতি সঙ্কর ঘোষ বলেন, ওরা দুজন মিলে হত্যা করেনি। এই হত্যার পেছনে অন্য কারো হাত আছে। আমরা চাই, হত্যার রহস্য উন্মোচন করে হত্যাকারী এবং হত্যার পরিকল্পনাকারী সকলের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হোক।

সূত্র: বিডি-প্রতিদিন