সুনামগঞ্জের শিক্ষার্থীদেরকে উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে উত্সাহ জোগাচ্ছে পুসাস

দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে শিক্ষার হারের দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে সুনামগঞ্জ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ অপার সম্ভাবনাময় এ জেলার শিক্ষার মান বাড়াতে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সেই উপলব্ধি থেকেই গঠিত হয়েছে পাবলিক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব সুনামগঞ্জ, সংক্ষেপে পুসাস। সুনামগঞ্জের যেসব ছেলেমেয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন, তারাই এটির উদ্যোক্তা।

জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদেরকে উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে উত্সাহ জোগাতে কাজ করছে সংগঠনটি।

পুসাস গড়ার পিছনের অন্যতম উদ্যোক্তা ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আশফাক জাহান তানজিম বললেন, ‘আমাদের জেলা থেকে যারা বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, তাদের সবাইকে নিয়ে একটা প্লাটফর্ম তৈরি করার ভাবনা থেকেই পুসাসের যাত্রা শুরু। সুনামগঞ্জ জেলা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে যেকোনো জেলার চেয়ে অনেক কম। যারা আগামীতে ভর্তি পরীক্ষা দেবে, স্কুল বা কলেজে পড়াশোনা শেষ করবে, তাদেরকে উচ্চশিক্ষার প্রতি উত্সাহ জোগানোই আমাদের উদ্দেশ্য।’

জানা গেল, বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে ওঠার পর তানজিম ও তার কয়েকজন বন্ধুর মাথায় এধরনের সংগঠন গড়ার কথা মাথায় আসে। গেল বছরের মাঝামাঝি সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গ্রুপ খোলা হলো। এতে অন্যদের সাড়া মিলল।’ সংগঠনটির অন্যতম উদ্যোক্তা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান তাহমিদ বললেন, ‘ফেসবুকে সবার সাড়া পাওয়ার পর মনে হলো এবার মাঠে নেমে কাজ করা উচিত। আমরা বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। আমাদের এই সংগঠনের কার্যক্রমের মাধ্যমে যদি সুনামগঞ্জের শিক্ষার্থীরা কিছুটা হলেও দিকনির্দেশনা পায়, তবে সেটাই হবে আমাদের সার্থকতা। এরপর থেকে ঈদ ও অন্যান্য ছুটিতে বাড়ি গিয়ে আমরা কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছি। উত্সাহ-উদ্দীপনার সাথে তারাও সাড়া দিচ্ছে।’ বর্তমানে পুসাসের সদস্য সংখ্যা ছয়শর বেশি। তারা বুয়েট, ঢাবি, জাবি, জবি, শাবিপ্রবি, চবি, চুয়েট, রুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। গেল ঈদের ছুটিতে সুনামগঞ্জে একত্রিত হয়ে তারা সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। ঈদের পর ১৮ জুন বিকেলে সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নিগার সুলতানা, অধ্যাপক পরিমল কান্তি দে, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আবেদীন প্রমুখ। একই অনুষ্ঠানে ২০১৭-১৮ সেশনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগপ্রাপ্ত ৫০ জন শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

জানা গেল, ইতোমধ্যেই সুনামগঞ্জের শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কয়েকটি ফ্রি ক্লাস ও সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে। তবে উদ্যোক্তারা যেহেতু শহরে থাকেন না, তাই তারা অনলাইনভিত্তিক ক্লাস ও গাইডলাইনের ব্যবস্থা করার কথা ভাবছেন।