মালয়েশিয়ায় অবৈধ প্রবাসীদের আটক করতে ৪৭৩ টি ভয়ংকর অভিযান!

মালয়েশিয়ায় ৪৭৩ টি মেগা-থ্রি অভিযানে সহস্রাধিক অভিবাসীকে আটক করেছে অভিবাসন বিভাগ। এদিকে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ করণের সময় বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতরা।

কবে নাগাদ ঘোষণা আসতে পারে তা এখনও জানা যায়নি। তবে শিগগিরই এ ঘোষণা আসতে পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, অবৈধ অভিবাসী ধরতে অভিবাসন বিভাগ পরিচালিত অপারেশন মেগা থ্রি চলাকালে ১ হাজার ২২৪ জনকে আটক করা হয়েছে।

১ জুলাই থেকে ৩ জুলাই এই তিনদিনেই পরিচালিত হয়েছে ৪৭৩ টি অভিযান। অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক সেরি মোস্তাফার আলী জানিয়েছেন, ৩ দিনের পরিচালিত অভিযানে সবচেয়ে বেশি আটক হয়েছে বাংলাদেশের নাগরিক।

অভিযানে ৩৯৯ জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। এরপর রয়েছে ১৬৪ জন ইন্দোনেশিয়ান, ফিলিপাইনের ১৫৭ জন, মিয়ানমারের ১০৯ জন, থাইল্যান্ডের ৪৩ জন এবং ভিয়েতনামের ৪১ জন। তিনি জানান, আটককৃতদের মধ্যে ৯২২ জন পুরুষ এবং ২৫৩ জন নারী আর বাকি ৪৯ জন শিশু।

নকল বা ভুয়া কাগজপত্র ছাড়াও বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে। এছাড়াও ১৫ জন নিয়োগকর্তাকে আটক করা হয়েছে। ৩০ জুন রি-হায়ারিং (পুনঃনিবন্ধন) প্রোগ্রাম শেষে জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে মেগা থ্রি অভিযান পরিচালিত হয়।

দেশটির অভিবাসন বিভাগের তথ্য মতে, অবৈধ অভিবাসীদের পুনঃনিবন্ধনের সুযোগ দিয়ে রি-হায়ারিং প্রোগ্রাম চলে দীর্ঘ আড়াই বছর। মোট ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৯৪২ জন অবৈধ অভিবাসী এবং ৮৩ হাজার ৯১৯ নিয়োগকর্তা এই প্রোগ্রামে আবেদন করেন। ৩০ জুন পর্যন্ত ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৯৬৬ জনের আবেদনপত্র যাচাই করা হয়।

এদিকে অবৈধদের বৈধ হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশি ও অন্যান্য দেশের এজেন্টরা ভিসা না করে লাখ লাখ রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু অভিযোগই নয় প্রকৃতপক্ষেই মালয়েশিয়াজুড়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন হাজার হাজার বাংলাদেশি।

খোদ বাংলাদেশির হাতেই বাংলাদেশিদের প্রতারণা সব থেকে বেশি বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। অনেকেই ভয়ে বর্তমানে জঙ্গলে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এ ছাড়া প্রবাসীদের একটি অংশ অভিযোগ করে আসছেন, পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব হওয়ায় অনেকেই সরকারের বৈধ হওয়ার সুযোগটি কাজে লাগাতে পারছেন না। পাসপোর্ট না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন অনেকে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি হাইকমিশনের ফেসবুক পেজে বিভিন্ন আক্রমণমূলক কমেন্ট করে তাদের রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন অনেকেই।

পুনঃনিবন্ধনের সময় বাড়াবে কিনা এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলার মো: সায়েদুল ইসলাম জানান, ধাপে ধাপে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেও সময় বাড়ানো হয়েছিল। সায়েদুল ইসলাম জানান, রি-হিয়ারিং কর্মসূচিকে সফল করতে বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পাশাপাশি ছুটির দিনেও মালয়েশিয়ার প্রত্যন্ত প্রদেশে দূতাবাসের কর্মকর্তারা আমাদের কর্মীদের সেবা দিয়েছেন। শ্রমিকদের সচেতন করতে প্রচারপত্র বিলি করা হয়। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করা হয়। কমিউনিটি সভা করে কর্মীদেরকে সচেতন, অবহিতকরণ ও উদ্বুদ্ধ করা হয়।

নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভাসমূহে তাদের আওতাধীন সকল অবৈধ কর্মীদের বৈধতা প্রদানের জন্য ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়। সায়েদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ আড়াই বছর মালয়েশিয়া সরকার সময় দিয়েছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে ইমিগ্রেশনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে এতদিন সময় বাড়ানো হয়েছিল।

তারপরেও দূতাবাস হাল ছাড়েনি। হাই কমিশনার শহীদুল ইসলামের নির্দেশনায় সময় বাড়ানোর জন্য অভিবাসন বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাদের ইমিগ্রেশনে ফিঙ্গারিংয়ের জন্য মালিক কর্তৃক আবেদন করেছেন। যারা ৩০ জুন ফিঙ্গার করতে পারেনি তাদের জন্য সময় বাড়াবে এবং দু একদিনের মধ্যে এ ঘোষণা আসতে পারে এবং যাদের বৈধ কাগজ-পত্র রয়েছে তাদেরকে হয়রানি না করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে বলে জানান শ্রম কাউন্সিলর।

এক প্রশ্নের জবাবে শ্রম কাউন্সিলর বলেন, দূতাবাস থেকে সবসময় বলে দেয়া হয়েছে কেউ যেন তথ্য গোপন না করে। তথ্য গোপন করলেই তার পাসপোর্ট পেতে সমস্যা সৃষ্টি হবে। এছাড়া দালালের শরণাপন্ন না হওয়ার জন্যও বলা হয়েছে। কিন্তু দালালের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হয়ে দূতাবাসের শরণাপন্ন হয় কর্মীরা। তখন আর কিছুই করার থাকে না। অবৈধ যারা আটক হয়েছেন তাদের দেশে ফেরত যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

এদিকে অভিবাসন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, থ্রি-প্লাস ওয়ান প্রোগ্রামের অধীনে ১ জানুয়ারি থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত যে সকল অবৈধ অভিবাসীরা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পন করেছেন তাদের মধ্যে ১ লাখ ১৭ হাজার ৪৪৮ জনকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছ এবং সঠিক পথে অবৈধ অভিবাসীরা দেশে ফেরত আসছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৮০-য়ের দশক থেকে মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ শুরু হয়। যখন মালয়েশিয়া একটি উচ্চাভিলাষী শিল্পায়ন বিষয়সূচি চালু করেছিল এবং সেই সময় থেকে মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় বৈধ অবৈধ মিলিয়ে ৬ মিলিয়ন বিদেশি শ্রমিক রয়েছে।

অনেক শ্রমিক বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেছে, কিন্তু তারা যে পেশায় কাজ করতে এসেছে সেই পেশায় কর্মরত না থেকে অন্য পেশায় কাজ করছে। মালয়েশিয়ার কাজের নিয়ম লঙ্ঘন করছে প্রবাসী শ্রমিকেরা। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছে অভিবাসন বিভাগ।