নবীর শিক্ষা করো না ভিক্ষা

ইসলামে ভিক্ষা কিংবা কারো কাছে হাত পাতা একটি ঘৃণ্য কাজ। পৃথিবীর ধর্মগুলোর মধ্যে ইসলামই ভিক্ষা কিংবা কারো কাছে হাত পাতার বিষয়ে সবচেয়ে কঠোর অবস্থানে। হজরত সামুরা ইবনে জানদুব (রা.) থেকে বর্ণিত মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘ভিক্ষাবৃত্তি হলো ক্ষত স্বরূপ; এর দ্বারা মানুষ মুখম-লকে ক্ষতবিক্ষত করে।’ (নাসায়ী: ৫/৯৭)। অন্যদিকে অভাব ছাড়া যদি কেউ কারো কাছে হাত পাতে তাহলে ইসলাম একে নিষিদ্ধ করে এর জন্য কঠিন শাস্তির ঘোষণা করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অভাব ব্যতিত ভিক্ষা করল সে যেন জাহান্নামের আগুন ভক্ষণ করলো। (মুসনাদে আহমাদ: ২৯/৫১)। কিছু লোক আছে যাদের সম্পদ থাকা সত্বেও তারা তাদের সম্পদ বাড়ানোর জন্য অন্যের কাছে হাত পাতে। রাসুলে কারিম (সা.) তাদেরকে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ বৃদ্ধির জন্য কারো কাছে ভিক্ষা চায় সে তো জাহান্নামের আগুন ভিক্ষা চায়। তার ইচ্ছা, সে চাইলে জাহান্নামের আগুন কম ভিক্ষা করতে পারে বেশিও ভিক্ষা করতে পারে। (ইবনে মাজা: ১/৫৮৯)। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কারো কাছে কিছুই না চাওয়ার দৃঢ় ইচ্ছা করবে ইসলামে তার জন্য শুভ সংবাদ।

হজরত সাউবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি এই মর্মে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে যে সে অন্যের কাছে হাত পাতবে না, আমি তার জান্নাতের জিম্মাদারী গ্রহণ করবো। (ইবনে মাজা: ১/৫৮৮ )। একান্ত অভাবে পড়েও কারো কাছে হাত না পেতে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজ হাতে উপার্জন করা ইসলামের শিক্ষা। ইসলামই বিশ্ববাসীকে শুনিয়েছে এই শ্লোগান, ‘নবীর শিক্ষা করো না ভিক্ষা’। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কারোর নিজ পিঠে কাঠের বোঝা বয়ে এনে বিক্রি করা কারো কাছে হাত পাতার চেয়ে উত্তম। তাকে (প্রার্থীকে) সে কিছু দিক বা না দিক।’ (বুখারি: ২/৫৩৫)
কেউ যদি অভাবের কারণেও সাহায্য চায় তবু ইসলাম তা অপছন্দ করেছে। কারো ধারস্থ না হয়ে কর্মের প্রতি তাকে উৎসাহিত করেছে। মানুষের কাছে হাত না পেতে আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে হালাল উপার্জনের চেষ্টায় ব্রতী হলে আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত করে দেবেন, আল্লাহর করুণার প্রাচুর্য দান করবেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) এর কাছে কিছু আনসার লোক সাহায্য চাইল, তিনি তাদেরকে কিছু দান করলেন। তারা পূণরায় প্রার্থনা করলে নবীজি (সা.) তাদেরকে দান করেন এবং তার সঞ্চয় শেষ হয়ে যায় অতপর তিনি বলেন, আমার নিকট গচ্ছিত আর কোনো সম্পদ নাই। যে ব্যক্তি অন্যের কাছে হাত পাতা থেকে বিরত থাকবে আল্লাহ তাকে পবিত্র এবং অমুখাপেক্ষী করবেন। যে ব্যক্তি অভাবের কথা মানুষের কাছে প্রকাশ করবে তার অভাব দূর হবে না এবং যে ব্যক্তি তা আল্লাহর কাছে নিবেদন করবে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।