জল, আকাশ কিংবা রেলপথে নয়, এবার বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে পায়ু পথে স্বর্ণ ভারতে পাচার হচ্ছে। পাচারকারীরা এ সীমান্ত পথটি নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে।
পাচারকারীরা ইতোপূর্বে জুতার ভিতর, ব্যাগের ভিতর, প্যান্টের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে স্বর্ণ পাচার করতো। কিন্তু কাস্টমস্ তল্লাশী কেন্দ্রের সদস্যরা এ সব কৌশল সম্পর্কে সচেতন হওয়ায় এখন তারা স্বর্ণের বার পাচার করছে পায়ুপথে। একান্ত গোপনসূত্রে সংবাদ পাওয়া ছাড়া এ সব স্বর্ণ পাচারকারীদের আটক করা বেশ দূরহ। ব্যাগেজ বা অন্যন্যা জায়গা যত সহজে তল্লাশী করে একজন সন্দেহজনক স্বর্ণ পাচারকারীকে আটক করা যায়। পায়ুপথে স্বর্ণ পাচার করলে অতসহজে বোঝা যায় না। তাকে আটকের পর বেশ ঝক্কি ঝামেলাও পোহাতে হয় কাস্টমস্ কর্তৃপক্ষের। আটকের পর তাকে প্রথমে স্বীকার করনোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু অস্বীকার করলে তাকে হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে নিয়ে এক্সরে করানো হয়। পায়ুপথে স্বর্ণের অস্তিত্ব পাওয়া গেলে তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে খাওয়ানো হয় কলা, পাউরুটিসহ তরল খাবার। চেষ্টা করানো হয় পায়ুপথ দিয়ে এ সব স্বর্ন উদ্ধারের। তবে ২ থেকে ৬ ঘণ্টা, ক্ষেত্র বিশেষ ৮ ঘণ্টার মধ্যে পায়ুপথের স্বর্ণের বার উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
এক পাচারকারীর পায়ুপথ থেকে সর্বোচ্চ ১৭টি পর্যন্ত স্বর্ণের বার উদ্ধার করেছে বেনাপোল কাস্টমস্ এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেল কর্তৃপক্ষ।
তবে বেনাপোল চেকপেস্টে কর্মরত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, এখানে কর্মরত শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেলের কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পেলে এ পথে স্বর্ণ পাচার অনেকাটা কমে যেত।
বেনাপেল কাস্টম হাউসের জয়েন্ট কমিশনার আ. আ. ম আমীমুল ই্হসান খান জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেনাপোল আর্ন্তজাতিক চেকপোস্ট এলাকা থেকে ২৭ জন স্বর্ণ চোরাচালানীকে আটক করেছে কাস্টমস্ ও শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। এ সময় জব্দ করা হয়েছে ১৯ কেজি ৩০৪ গ্রাম স্বর্ণ। যার বাজার মূল্য ১৩ কোটি ৫১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ ব্যাপারে বেনাপোল পোর্ট থানায় ও চুয়াডাঙ্গা থানায় মামলা হয়েছে ১৯টি।
বেনাপেল চেকপোস্ট থেকে সর্ব শেষ ৭ জুন আটক স্বর্ন মানব শরিয়তপুর জেলার আব্দুল মান্নান ব্যাপারীর ছেলে লাভলু ব্যাপারী জানান, এ সব স্বর্ণ তার নয়, তিনি বাহক মাত্র । ঢাকা থেকে প্রতি পিচ স্বর্ণের বার কলকাতার নিদিষ্ট স্থানে পৌঁছে দিলে তিনি পাবেন পিস প্রতি ২ হাজার টাকা মাত্র। তবে এ স্বর্ণের প্রকৃত মালিক কে তাও তার জানা নেই। তার এক বন্ধু তাকে এ সব স্বর্ণের বার কলকাতায় পৌঁছে দিতে বলেছে। তবে এ পর্যন্ত বেনাপোল চেকপোস্ট এলাকা থেকে যারা স্বর্ণসহ আটক হয়েছে তারা কেউ স্বর্ণের মালিক নয়, বাহক মাত্র।
বেনাপোলের একজন ব্যবসাহী জানান, দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আসা ভারতীয় গরুর টাকা (ভারতীয় গরু ব্যবসায়ী মাহাজনদের) সে দেশের মহাজনদের যোগান দিতে এ স্বর্ণ পাচার হয়। ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিক্রি করা গরুর টাকা না নিয়ে স্বর্ন নিয়ে থাকে। চোরাই পথে ভারতে টাকা পাঠানো নিরাপদ নয় এবং বহনেও অসুবিধার কারণে এ দেশ থেকে গরু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভারতে স্বর্ণ পাঠিয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে ভারত থেকে বাংলাদেশে চোরাই পথে গরু আসা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত স্বর্ণ পাচার অব্যাহত থাকবে ।