তেঁতুলের কথা শুনলে বেশিরভাগ মানুষের জিভে পানি চলে আসে। টক স্বাদের এই ফলটি দৃষ্টিশক্তির উন্নতির পাশাপাশি ত্বকের পরিচর্যায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই এই গরমে রোগ মুক্ত সুস্থ শরীর পেতে সপ্তাহে কম করে ৩-৪ দিন তেঁতুল খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারতীয় লাইফস্টাইল বিষয়ক ওয়েবসাইট বোল্ড স্কাইয়ের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে তেঁতুলে গুরুত্বপূর্ণ ৯টি উপকারি দিক। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যায়…
১. বাতের ব্যথা কমায়
টক ফল তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা শরীরের ভেতরে প্রদাহের মাত্রা কমিয়ে আনে। ফলে জয়েন্টে ব্যথার প্রকোপ কমে যায়। একইসঙ্গে বাত বা আর্থ্রাইটিসের মতো রোগও প্রতিরোধ করে।
২. ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়
অনবরত সূর্যালোক,পরিবেশ দূষণ ও ধূলাবালির আক্রমণে ত্বকের বারোটা বেজে যেতে সময় লাগে না। আর এমন পরিস্থিতিতে স্কিন টোনের উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে তেঁতুলের কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে। এক্ষেত্রে ৩০ গ্রাম তেঁতুল নিয়ে এর সঙ্গে পরিমাণ মতো গরম পানি ও হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই পেস্টটি ভাল করে মুখে লাগিয়ে কম করে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। এইভাবে সপ্তাহে দুবার ত্বকের পরিচর্যা করলে দেখবেন এত ধূলোবালির মাঝেও ত্বকের সৌন্দর্য একটুও কমবে না।
৩. ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি কমায়
রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেঁতুল গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। এই ফলটিতে উপস্থিত এনজাইম, কার্বোহাইড্রেটের শোষণ মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে আনে।
৪. হজম ক্ষমতা স্বাভাবিক রাখে
তেঁতুলে উপস্থিত ডায়াটারি ফাইবার হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ স্বাভাবিক রাখে। ফলে খাবার হজমে কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। এছাড়া তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ‘বিলিয়াস সাবস্টেন্স’ যা খাবার হজমের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এতে বদ-হজমের আশঙ্কা হ্রাস পায়। ফলে যে কোনও ধরনের পেটের রোগ হওয়ার আশঙ্কা করে যায়।
৫. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়
তেঁতুলে প্রচুর পরিমাণে বি কমপ্লেক্স ভিটামিন উপস্থিত যা মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষের শক্তি বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কগনেটিভ ফাংশনে উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তিও বাড়তে শুরু করে। তাই তো পড়াশোনা হোক কিংবা কর্মজীবন, যেকোন পেশায় যদি উন্নতি করতে হয় তাহলে তেঁতুল খাওয়া খুব জরুরি।
৬. হার্ট সুস্থ রাখে
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, তেঁতুলের উপস্থিত ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।
৭. দেহের ওজন কমায়
মশলা হিসেবে তেঁতুলকে কাজে লাগালে শরীরে হাইড্রোক্সিসিট্রিক অ্যাসিড বা এইচ সি এ-এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীরে উপস্থিত অতিরিক্ত চর্বি ঝরিয়ে সার্বিকভাবে ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে তেঁতুল খেলে শরীরে ফাইবারের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে ক্ষিদে কমে যায়।
৮. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
টক ফল তেঁতুলে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি থাকায় তা শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। একইসঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে।
৯. শরীরে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে
তেঁতুলে প্রচুর মাত্রায় আয়রন উপস্থিত যা শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বৃদ্ধির করে। এ ছাড়া অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত দেহের প্রতিটি কোণায় পৌঁছে দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ফলে প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে রক্তশূন্যতার মতো রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে না।
প্রসঙ্গত, আমাদের দেশের মহিলাদের মধ্যে সিংহভাগই অ্যানিমিয়ার শিকার। তাই এদেশে তেঁতুল খাওয়া প্রয়োজনীয়তা যেন আরও অনেক বেশি, সে বিষযে কোনও সন্দেহ নেই।