পদ্মা সেতুতে বিস্ময়কর অগ্রগতি

দেশের বিস্ময়কর উন্নয়ন ও অগ্রগতির বার্তা নিয়ে সোতস্বিনী পদ্মার বুকে স্থাপিত হলো স্বপ্নের সেতুর পঞ্চম স্প্যান। এই স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হলো পদ্মা সেতুর পৌনে এক কিলোমিটার অংশ। গতকাল নদীর দক্ষিণ প্রান্তে ৪১ ও ৪২ নম্বর খুঁটির ওপর ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্প্যানটি বসানো হয়। আষাঢ়ের নবধরা জলে পদ্মা এখন প্রমত্তা। কিন্তু থেমে নেই কাজ। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দিনরাত কাজ করে চলেছেন শ্রমিকরা। সেই কাজের ধারাবাহিকতায় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায় পদ্মা সেতুর পঞ্চম স্প্যান দৃশ্যমান হয়েছে। এই স্প্যানটিই জাজিরা প্রান্তের তীরের দিকের শেষ স্প্যান। এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু জাজিরা প্রান্তের তীর স্পর্শ করল। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কুমারভোগের বিশেষায়িত ওয়ার্কশপ জেটি থেকে ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজ স্প্যানটি তুলে নিয়ে জাজিরার দিকে রওনা দেয়। বিকালে স্প্যানটি নিয়ে যাওয়া হয় ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের কাছে। সন্ধ্যায় স্প্যানটি ৪১ নম্বর খুঁটির কাছে নোঙর করে রাখা হয়। সরেজমিন দেখা যায়, সকাল থেকেই পদ্মার বুকে খেলা করছিল ঢাউস আকারের ঢেউ। সকাল সাতটা বাজতেই পদ্মা সেতুর ৪১ ও ৪২ নম্বর খুঁটির ওপর স্প্যান বসানোর কাজ শুরু হয়। ঢেউ-সে াত উপেক্ষা করে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর জাজিরা তীর স্পর্শের সময়কে স্মৃতিতে ধরে রাখতে ভিড় জমায় হাজার হাজার মানুষ। ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোটে পদ্মা পার হওয়া যাত্রীরা নৌযান থামিয়ে মোবাইলে ধারণ করে রাখছিলেন অগ্রযাত্রার এই দৃশ্যটুকু। পদ্মা সেতু প্রকল্পের উপসহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবীর জানান, ১৫০ মিটার দীর্ঘ এই স্প্যান গতকাল বেলা পৌনে ১টার সময় বসানো হয়েছে। এই স্প্যানের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর ৭৫০ মিটার অর্থাৎ পৌনে এক কিলোমিটার দৃশ্যমান হলো।’

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর এ বছরের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় দ্বিতীয় স্প্যান। গত ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটির ওপর বসে তৃতীয় স্প্যান। এরপর ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর

খুঁটির ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানো হলে সেতুর ৬০০ মিটার দৃশ্যমান হয়। দ্বিতলবিশিষ্ট পদ্মা সেতু হচ্ছে, মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটি প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। খুঁটির ওপর ইস্পাতের যে স্প্যান বসানো হবে, এর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। পুরো সেতুতে মোট খুঁটির সংখ্যা হবে ৪২। একটি থেকে আরেক খুঁটির দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দূরত্বের লম্বা ইস্পাতের কাঠামো বা স্প্যান জোড়া দিয়েই সেতু নির্মিত হবে। ৪২টি খুঁটির ওপর এ রকম ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। স্প্যানের অংশগুলো চীন থেকে তৈরি করে সমুদ্রপথে জাহাজে করে আনা হয় বাংলাদেশে। ফিটিং করা হয় মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে।