সারাদেশে ক্রমেই অপরাধীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে।যে কোন খারাপ কাজে বাধা খাচ্ছে না তারা । যুব সমাজ আজ ভয়ংকর দিকে যাচ্ছে দিন দিন ।তারি প্রতিফলনে বিভিন্ন অপকর্মে জরাচ্ছে তরুন -তরুনীরা।এমনি এক ভয়ংকর অপরাধের চিএ উঠে এসছে সম্প্রতি যাএাবড়িতে । জানা গেছেচা করি করেন রফিক উদ্দিন। বাসা উত্তরা বাউনিয়া এলাকায়। মোবাইল ফোনে তার পরিচয় হয় রেহানার সঙ্গে। কথা বলতে বলতে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেম। দুজনই দুজনকে কাছে পেতে চায়। রেহানা বলে, রফিক তুমি আস আমাদের যাত্রাবাড়ীতে। বাসায় কেউ থাকবে না।
আমরা কথা বলব। সময় কাটাব। এমন প্রস্তাবে রফিক রাজি হয়ে যায়। এই তো গত মাসের ১৪ তারিখে রফিক যায় যাত্রাবাড়ী। ঠিকানা মতে পৌঁছে যায় তিনি সকালেই। রেহানাকে দেখে ভীষণ খুশি পঞ্চাশোর্ধ্ব রফিক। রেহানাদের বাসার একটি ঘরে বসতে দেয় রফিককে। রফিক ঘনিষ্ঠ হতে চায়। এ সময় রেহানা বলে, আস্তে রফিক। আগে দেখে আসি দরজা খোলা আছে কি না। তুমি রেডি হও।
কিন্তু ওই ঘরে রেহানা আসেনি। এসেছে ৫ যুবক। তারা ঘরে ঢুকেই হাত পা বেঁধে ফেলে রফিকের। রফিক কিছুই বুঝতে পারছিল না। রফিক বলে, আপনারা কারা? যুবকদের একজন বলে, একটু পর টের পাবি। আমরা কারা। এরপর আরও দুই মহিলা ওই রুমে প্রবেশ করে। তারা এসেই নিজেদের কাপড় খুলে ফেলে। রফিকের শার্ট-প্যান্টও খুলে নেয়। এরপর দুই মহিলার সঙ্গে রফিকের নগ্ন ছবি তোলা হয়। রফিক বুঝতে পারে, সে বড় ধরনের প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে গেছে।
এরপর আসে লেনদেনের বিষয়। তারা রফিকের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। অন্যথায় স্ত্রী সন্তানদের কাছে তার ছবি পাঠানো হবে। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ভয়ভীতি দেখানো হয় রফিককে।সারা দিন পর রাতে রফিকের এক বন্ধু সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়ে আসে। অপরাধী সেই চক্রের হাতে তুলে দেওয়া হয় টাকা। অপরাধী চক্র সেখান থেকে কেটে পড়ে। যাওয়ার সময় রফিকের ব্যবহূত মোটরসাইকেলটিও নিয়ে যায়। জীবন নিয়ে সেখান থেকে ফিরে আসে রফিক।
এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ রুবেল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। ১২ দিন পর কেরানীগঞ্জ থানা এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে সেই মোটরসাইকেলটি।যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, রুবেলরা পরিকল্পনা করে ব্ল্যাকমেইল করে। ওদের দলে নারী সদস্য রয়েছে। প্রথমে দুর্বল চরিত্রের পুরুষগুলোকে টার্গেট করে নারী সদস্য দিয়ে প্রেমের অভিনয় করায়।
প্রেমে মজে যাওয়ার পর শুরু করে ডেটিং, সঙ্গে চিটিং ও ফিটিং! পুরুষরা বুঝতে সময় নিতেই শেষ হয়ে যায় সব। পুরুষটির স্ত্রীর কাছে নগ্ন ছবি পাঠানোর ভয়, পুলিশে দেওয়ার ভয় আর মিডিয়ায় ছবিসহ নিউজ করার ভয় দেখিয়ে নগদ টাকা, বিকাশ, চেক ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে নেওয়া।
একসময় ছেড়ে দিলেও দিনের পর দিন চলতে থাকে ব্ল্যাকমেইলিং। এদিকে লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে ঘটনা শেয়ার করতে পারে না বেচারা। কখনো কখনো ২/১টা ঘটনা থানায় নোটিস হয়।ঈদের আগের এমনই একটা ঘটনায় প্রায় ৪ লাখ টাকা আর একটা মোটরসাইকেল নিয়ে নেয় রুবেলের ব্ল্যাকমেইলিং বাহিনী। যাত্রাবাড়ী থানার এসআই ইকবাল হোসেন অক্লান্ত পরিশ্রম করে এবং বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কেরানীগজ্ঞ এলাকা থেকে ধরে নিয়ে আসে রুবেলকে, উদ্ধার হয় মোটরসাইকেলটি।
এমনই আরেক চক্রের সন্ধান পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শিক্ষিত স্মার্ট সুন্দরী নারী দিয়ে সুকৌশলে ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে। এরা হলো ফাহাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ওরফে রেজভী (২৪) ও শারমিন আক্তার টুম্পা (২১)।পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, পিবিআই (ঢাকা মেট্রোর) এর একটি বিশেষ টিম অভিযান চালিয়ে বাড্ডা লিংক রোড থেকে তাদের গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন সেট ও টুম্পার সঙ্গে এক ধনাঢ্য ব্যক্তির ৫টি অশ্লীল ছবি উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য ব্যক্তির ফোন নম্বর ও ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করে। পরে চক্রের পুরুষ সদস্য ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে চক্রের সদস্য সুন্দরী নারীকে সহকর্মী পরিচয় দিয়ে নামি-দামি রেস্টুরেন্টে চা-কফির অফার করে ও আড্ডা দেয়।
এভাবে কিছুদিন চলার পর এক পর্যায়ে চক্রের ওই নারী সদস্য ধনাঢ্য ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। চক্রটি বন্ধুত্বের সুবাদে মেয়েটিকে ব্যবসায়ীর সঙ্গে এককভাবে ব্যবসায়ীর অফিস, ফ্ল্যাট বা অন্য কোনো নিরিবিলি স্থানে পাঠায়।সেখানে গিয়ে মেয়েটি শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করে। এ সময় গোপনে ছবি তোলা হয়। পরবর্তীতে ওই ছবির কথা বলে ওই ব্যবসায়ীর কাছে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়।
তাদের দাবি না মানলে ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া বা পরিবারকে জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় চক্রের সদস্যরা। কিন্তু এতেও কাজ না হলে চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন সময় ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়। এসময় পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন আমাদের সাবাইকে সচেতন হতে হবে ।এমন ঘটনার শিকার হলে অবশ্যই পুলিশকে জানাতে হবে ।শরম লজ্জার ভয়ে প্রকাশ না করলে অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে যার ফলে অারো বড় ধরনের অপরাধে জড়াবে।
সূত্র:- বাংলাদেশ প্রতিদিন