ডিমের কুসুম খাওয়া- ডিমকে ‘পাওয়ার হাউস অব নিউট্রিশন’ বা পুষ্টি শক্তির ঘর বলা হয়। প্রাণিজ প্রোটিনের মধ্যে ডিম হলো আদর্শ প্রোটিন। এখানে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এটি শরীরের অনেক উপকারে আসে। ডিম শুধু আদর্শ প্রোটিনই নয়, বরং অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে এতে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড। এটি হৃদরোগের বিরুদ্ধে অনেক কার্যকরী।
‘ডিমের কুসুম খেলে শরীর মুটিয়ে যায়, কোলেস্টেরল বেড়ে যাবে’ ধারণাটি বহুদিনের পুরনো । সত্যতা কতটুকু না জানলেও এটা মেনে চলেন অনেকেই। তবে কুসুম খাওয়ার রয়েছে অনেক উপকারিতাও । ‘করাটেনোয়েডস’ নামক পুষ্টি উপাদানের জন্য শাকসবজির উপর জোর দেন অনেকেই।
হৃদরোগের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত সম্পৃক্ত চর্বি ও ট্রান্সফ্যাট। তবে হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে শুধুমাত্র ডিমের কুসুম বাদ দেওয়া কি খুব কার্যকরী? বিজ্ঞানীদের মতে, শরীরের প্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল মাংস ও ডিম থেকে পেতে হয়। এটি টেসটোসটেরন হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে; এটি মাংসপেশি গঠনে সহায়ক।
ডিমের কুসুমে থাকে ‘লুটিন’ ও ‘জিয়ান্থিন’ নামক দুই ধরনের ক্যারাটেনোয়েডস। যা চোখকে অতি বেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ডিমের কুসুম খেলে বার্ধক্যজনিত চোখের সমস্যা রোধ হয়। ডিমের কুসুমে থাকে ‘কোলিন’। এটি একটি খাদ্য উপাদান যা শরীরের সকল কোষের সাধারণ কার্যপদ্ধতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বিশেষত, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। ফলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে।
ইউনিভার্সিটি অব কানেকটিকাটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডিমের কুসুম বরং রক্তে খারাপ চর্বি বা এলডিএল কমাতে ও ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল বাড়াতে সাহায্য করে।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, যাদের রক্তে কোলেস্টেরল ও এলডিএলের মাত্রা ঠিক থাকে, তাদের জন্য দৈনিক কোলেস্টেরল গ্রহণের পরিমাণ ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম। সাধারণত একটি ডিমের কুসুম থেকে ১৮৫ থেকে ১৮৭ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল পাওয়া যায়। তবে যাদের পরিবারে হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে তাদের অবশ্যই পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে ডিমের কুসুম খেতে হবে।
বিভিন্ন গবেষণায় ডিমের কুসুম এবং এর উপকারিতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। আর এর প্রয়োজনীয়তার কারণে আজকাল অনেকে ডিমকে কুসুমসহ খাচ্ছেন। এমনকি চিকিৎসকরাও পরামর্শ দিচ্ছেন প্রতিদিন একটি কুসুমসহ ডিম খাওয়ার। তবে আসলে কি রোজ একটি কুসুমসহ ডিম আপনি খাবেন?
কুসুমের আরেকটি উপাদানের নাম ‘বেটাইন’, যা রক্তে ‘হোমোসিস্টেইন’য়ের মাত্রা কমায়। রক্তকণিকায় হোমোসিস্টেইনের মাত্রা বেশি থাকলে হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তার মানে ডিমের কুসুম হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও সহায়ক।
নতুন গবেষণা অনুযায়ী, ‘স্যাচারেইটেড ফ্যাট’ বা যে চর্বি সর্বোচ্চ পরিমাণে জল ধরে রাখে, যা আপনার শরীরের শত্রু নয়। আর কোলেস্টেরলের সমস্যা আগে থেকেই না থাকলে ডিমের কুসুমের কোলেস্টেরল ক্ষতিকর নয়।
একটা বিষয় মনে রাখতে হবে পরিমাণ মতো খেলে কোনও খাবারই শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে না। তাই ডিমে অ্যালার্জি না থাকলে নিশ্চিন্তে কুসুমসহ ডিম খেতে পারেন।