খাবারে বেশি মাত্রায় গরম মশলা ব্যবহার করলে কি শরীরের কোনও ক্ষতি হয়?

একেবারে না বন্ধু! বরং একেবারে উল্টো ঘটনা ঘটে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে গরম মশলা বানাতে যে যে উপাদানগুলি ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তার অন্দরে এত মাত্রায় উপাকারি উপাদান ঠাসা রয়েছে যে তা শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে একাধিক উপকার পাওয়া যায়। যেমন ধরুন…

১. শরীর এবং ত্বকের বয়স কমায়:
দেশে-বিদেশে হওয়া বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে খাবারে গরম মশলার পরিমাণ একটু বেশি হলে কোনও ক্ষতি তো হয়ই না, উল্টে দেহের অন্দরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রপাটিজের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে শরীর এবং ত্বকের বয়স কমতে শুরু করে। ফলে খাতায় কলমে বয়স বাড়লেও শরীর এবং ত্বকের উপর তার কোনও প্রভাবই পরে না। এবার বুঝছেন তো সারা বিশ্বে ভারতীয় রান্নার কদর এত বেশি কেন!

২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
শুনতে আজব লাগলেও একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত গরম মশলা খাওয়া শুরু করলে দেহের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে ইমিউনিটির উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। ফলে একদিকে যেমন নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে, তেমনি কোনও ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস পায়।

৩. অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমে:
গরম মশলায় উপস্থিত জিরায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় আয়রন, যা শরীরে প্রবেশ করার পর লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন এত মাত্রায় বাড়িয়ে দেয় যে রক্তাল্পতা দূর হতে সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটাতেও এই প্রকৃতিক উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৪. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
প্রচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের দিকে নজর ফেরালে জানতে পারবেন, সেখানে উল্লেখ রয়েছে হজম ক্ষমতার উন্নতিতে গরম মশলা নানাভাবে উপকারে লেগে থাকে। আসলে এই মশলার এই মিশ্রনটি হজমে সহায়ক পাচক রসের ক্ষরণ এত মাত্রায় বাড়িয়ে দেয় যে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো রোগের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে স্বাদ গ্রন্থিরা বেজায় অ্যাকটিভ হয়ে পরে। ফলে খাবার খাওযার ইচ্ছাও বাড়ে।

৫.শরীরের সচলতা বৃদ্ধি পায়:
খুব কাছ থেকে যদি গরম মশলায় ব্যবহৃত মশলাগুলির দিকে দেখেন, তাহলে জানতে পারবেন এদের মধ্যে প্রচুর মাত্রায় মজুত রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনপ্লেমেটারি উপাদান, অ্যান্টি-ডায়াবেটিক প্রপাটিজ, অ্যান্টি-ক্যান্সার এবং কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ লোয়ারিং প্রপাটিজ, যা ছোট-বড় কোনও রোগকেই ধারে কাছে ঘেঁষতে দেয় না। ফলে শরীরের কর্মক্ষমতা এতটা বেড়ে যায় যে স্বাভাবিকভাবেই আয়ু বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো।

৬. ক্যান্সারের মতো মারণ রোগকে দূরে রাখে:
শুনতে আজব লাগলেও একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে রান্নায় গরম মশলার ব্যবহার বাড়লে শরীরে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। আসলে এই মশলাটিকে প্রচুর মাত্রায় উপস্থিত রয়েছে অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান, যা এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, নিউট্রিশন এবং ক্যান্সার নামক একটি জার্নালে প্রকাশিত একটি স্টাডি অনুসারে টানা দশ দিন গরম মশলা খেলে শরীরের অন্দরে টক্সিক উপাদানের মাত্রা কমাতে শুরু করে। ফলে শরীরের বিষের পরিমাণ এত মাত্রায় কমে যায় যে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

৭. হার্টের ক্ষমতা বাড়ে:
পরিবারে কি কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের ইতিহাস রয়েছে? উত্তর যদি হ্যাঁ হয় বন্ধু, তাহলে যত বেশি মাত্রায় সম্ভব রান্নায় গরম মশলার ব্যবহার বাড়াতে হবে। কারণ এই মশলার মিশ্রনটি শরীরে প্রবেশ করার পর খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে শুরু করে। সেই সঙ্গে হার্টে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ এতটা বাড়িয়ে দেয় যে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ ধারে কাছে ঘেঁষারও সুয়োগ পায় না।

৮.ডায়াবেটিস ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না:
রক্তে সুগারের মাত্রা কি মাঝে মধ্যেই বেশ ওঠা-নামা করে থাকে? তাহলে কিন্তু বন্ধু ভুলেও গরম মশলার সঙ্গে সম্পর্ক খতম করবেন না! কারণ এই মশলার মিশ্রনটির মধ্যে থাকা দারচিনি, রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে দরচিনির মধ্যে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা এতটা বাড়িয়ে দেয় যে টাইপ-২ ডায়াবেটিস ধারে কাছে ঘেঁষার সুয়োগই পায় না। তাই যাদের সুগার লেভেল একবারে বর্ডারে রয়েছে, তারা হয় দারচিনি, নয়তো গরম মশলা খেতে ভুলবেন না যেন!

৯. কনস্টিপেশনের প্রকোপ কমে:
ট্রপিকাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি জার্নালে প্রকাশিক এক স্টাডি অনুসারে নিয়মিত গরম মশলা খাওয়া শুরু করলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরের অন্দরে বর্জ্যের পরিমাণ বেড়ে যায়। আর এমনটা হওয়ার কারণে পটির পরিমাণ বেড়ে য়ায়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা কমতে সময় লাগে না। তাই যাদের সকালটা একেবারেই সুন্দর যায় না, তারা রান্নার সময় গরম মশলা ব্যবহার করতে ভুলবেন না যেন!