গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন স্পেন, রানার্স-আপ পর্তুগাল

মরক্কোর সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে ‌‌‌’বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্পেন। আর ইরানের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করায় রানার্স আপ হয়েছে পর্তুগাল। ইউরোপের দুই শক্তিরই ড্র করায় হয়েছে সমান ৫ পয়েন্ট। তবে গ্রুপ পর্বে পর্তুগালের (৫) চেয়ে বেশি গোল করায় স্পেন (৬) গ্রুপসেরা হয়ে নাম লিখিয়েছে নকআউট পর্বে।

দুটো আলাদা ম্যাচ, তবে বাঁধা ছিল এক সুতোয়। শেষ ষোলো নিশ্চিত ছিল না স্পেন কিংবা পর্তুগাল কোনও দলেরই। কারণ তাদের সঙ্গে ইরানও উঁকি দিয়ে রেখেছিল পরের রাউন্ডে। যদিও স্পেন ও পর্তুগালকে পরের রাউন্ডে ধরে রেখেই চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স-আপ ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু কে চ্যাম্পিয়ন, আর কে রানার্স-আপ, সেটা জানতে একই সময়ে চোখ রাখা হয়েছিল আলাদা দুটো ম্যাচে। যেখানে মরক্কো ও ইরানের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেলেও দুটো উত্তেজনাকর ম্যাচ উপহার দিয়েছে ফুটবল বিশ্বকে।

দুই দফা এগিয়ে গিয়েছিল মরক্কো। তবে স্প্যানিশ ফুটবলের সামনে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি তারা। শেষ মুহূর্তের গোলে ২-২ গোলের ড্র করে বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়েছে তাদের। অন্যদিকে এই ইনজুরি টাইমের গোলেই পর্তুগালের কপাল পুড়িয়েছে ইরান। শেষ মুহূর্তের পেনাল্টিতে গোল হজম করে গ্রুপসেরা হতে পারেনি ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। ১-১ গোলের ড্রতে স্পেনের সমান ৫ পয়েন্ট হওয়ার পরও গ্রুপ পর্বে কম গোল করায় দ্বিতীয় হয়ে যেতে হয়েছে পরের রাউন্ডে।

সোমবারের রাতটা ভুলেই যেতে চাইবেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো! ইরানের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই পেনাল্টি পেয়েছিল পর্তুগাল। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ উইঙ্গার স্পট কিক থেকে লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। ৫৩ মিনিটে পেনাল্টি মিসের পর ৮৩ মিনিটে হলুদ কার্ডও দেখেছেন পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী। গ্রুপ রানার্স-আপ হওয়ার পর নিশ্চয় এখন পেনাল্টি মিসের আক্ষেপে পুড়ছেন রোনালদো!

কালিনিনগ্রাদে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল স্পেন, আর মরক্কো ছিল রক্ষণাত্মক। অতিমাত্রায় আক্রমণাত্মত হওয়ার খেসারত দিতে হয় স্প্যানিশদের ১৪তম মিনিটে। আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা ও সের্হিয়ো রামোসের ভুল বুঝাবুঝির পুরো ফায়দা তুলে নেন খালিদ বুতাইব। ইনিয়েস্তা ও রামোস দুজন দুজনের জন্য ছেড়ে দেন বল। মাঝখান থেকে খালিদ বল নিয়ে চলে যান ফাঁকা রক্ষণের দিকে, সামনে ছিলেন কেবল গোলরক্ষক দাভিদ দে গেয়া। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড স্টপার ঠেকাতে পারেননি গোল। তার দুই পায়ের মাঝখান দিয়ে বল জালে জড়িয়ে মরক্কোকে উৎসবে ভাসান খালিদ।

ম্যাচে ফিরতে অবশ্য সময় লাগেনি স্পেনের। মিনিট পাঁচেক পরই তারা সমতায় ফেরে ইসকোর লক্ষ্যভেদে। ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেন ইনিয়েস্তা। তার বাড়ানো চমৎকার ক্রস থেকেই হেডে লক্ষ্যভেদ করেন রিয়াল মাদ্রিদ উইঙ্গার।

এরপর প্রথমার্ধেই এগিয়ে যাওয়ার বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েছে স্পেন। কিন্তু সুযোগ নষ্টে কাজে লাগাতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধেও পারফরম্যান্সের ধারা সচল রেখে লিড নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে, কিন্তু ফিনিশিংয়ের অভাবে গোল পায়নি। ডিয়েগো কোস্তা পা চালিয়েও বল জালে জড়াতে পারেনি। ইসকোর হেড একেবারে গোল লাইন থেকে ঠেকিয়ে দিয়েছেন মরক্কোর এক ডিফেন্ডার। পিকের হেড পোস্টে বাতাস লাগিয়ে চলে গেছে। স্প্যানিশদের এই সুযোগ নষ্টের মিছিলে মরক্কো ঠিকই কাজের কাজ করে দেয় ৮১ মিনিটে। হেড থেকে দুর্দান্ত গোল করে আফ্রিকার দেশটিকে এগিয়ে নেন ইউসেফ এন নেসিরি।

তবে শেষ মুহূর্তে ইয়গো আসপাসের গোলে ড্র করে মাঠ ছাড়ে স্পেন। ইনজুরি টাইমের প্রথম মিনিটে বুটের নিচের অংশ দিয়ে অনেকটা ব্যাকহিলের মতো করে বল জালে জড়িয়ে স্পেনকে গুরুত্বপূর্ণ ১ পয়েন্ট এনে দেন তিনি। গোলটি অবশ্য এসেছে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) সাহায্যে। মাঠে থাকা রেফারি অফসাইডের বাঁশি বাজালেও ভিএআর তা গোলের ঘোষণা দেয়। এই গোলেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিশ্চিত হয় স্পেনের।

এদিকে মরদোভিয়া অ্যারেনার ম্যাচে আধিপত্য ছিল পর্তুগালের। শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ছিল তারা। শেষ রাউন্ডে ওঠার হিসাব তো ছিলই, সঙ্গে গ্রুপসেরা হওয়ার বিষয়ও ছিল তাদের সামনে। তাই ইরানের ওপর আক্রমণ চালায় ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোরা। যদিও ইরানের কড়া রক্ষণে সুবিধা করতে পারছিল না। অবশেষে বিরতিতে যাওয়ার আগমুহূর্তে তাদের আনন্দে ভাসান রিকার্দো কারেসমা। আদ্রিয়েন সিলভার ক্রস থেকে তিনি এগিয়ে নেন পর্তুগিজদের।

এরপর রোনালদোর পেনাল্টি মিসের পরও ওই গোলে এগিয়ে থাকার সুবিধা নিয়ে জয় ও গ্রুপসেরা হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল ২০১৬ সালের ইউরোপ চ্যাম্পিয়নরা। নির্ধারিত ৯০ মিনিট পেরিয়ে ইনজুরি টাইমের শুরুতেও ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল পর্তুগাল। কিন্তু লিডটা আর ধরে রাখতে পারেনি। নিজেদের সীমানায় সেদরিক সোয়ারেস হ্যান্ডবল করলে পেনাল্টি পায় ইরান। স্পট কিক থেকে বল জালে জড়িয়ে ব্যবধান ১-১ করেন করিম আনসারিফার্দ। শেষ পর্যন্ত ড্র করে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছাড়ে পর্তুগাল।