শনিবার দিল্লির রাজপথে উদ্ধার হয় মেজর অমিত দ্বিবেদীর স্ত্রী শৈলজার (৩০) মৃতদেহ। রাস্তায় পড়েছিল থেঁতলানো মৃতদেহটি। দেখে প্রথমে যে কেউই মনে করবে- গাড়ি চাপায় হয়তো তার মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃতদেহের গলাকাটা দেখতেই চমকে উঠে সবাই।
ঘটনার তদন্তে নেমে পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পুলিশ বুঝতে পারে খুনের সঙ্গে নিহতের পরিচিত কেউ জড়িত। সেই অনুযায়ী তদন্ত শুরু করে। খবর: আনন্দবাজার।
তদন্তকারী অফিসারদের একটি সূত্র শনিবারই জানিয়েছিল, প্রাথমিকভাবে একজন সেনা অফিসারকে তারা সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন।
এর পর রোববারই মেরঠে গিয়ে অভিযুক্ত মেজর নিখিল হান্ডাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিল্লিতে আনা হয়েছে। এরপর উদঘাটিত হয় ঘটনার রহস্য।
নিখিল জানায়, তিন বছর ধরে শৈলজার সঙ্গে ফোনে কথোপকথন। স্বামীর অজান্তে ভিডিও কল, চ্যাট সবই চলত। কিন্তু বিয়ে করতে রাজি না হওয়ার জেরেই তাকে খুন করা হয়।
জানা গেছে, ধৃত মেজর নিখিল বর্তমানে নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে কর্মরত। বছর তিনেক আগে ডিমাপুরেই ছিলেন মেজর অমিত দ্বিবেদী। দু’জনের কাজও ছিল একসঙ্গেই। সেই সূত্রেই অমিতের স্ত্রী শৈলজার সঙ্গে আলাপ হয় নিখিলের।
কিছু দিন পরই মেজর অমিত দিল্লিতে বদলি হয়ে চলে আসেন। কিন্তু, বদলির পরও মেজর নিখিল শৈলজাকে নিয়মিত ফোন করে কথা বলত। সেই সূত্রে দু’জনের ঘনিষ্ঠতাও বাড়ে। ফোনের পাশাপাশি চলত চ্যাট, ভিডিও কলি।
এমনকি নিখিলের সঙ্গে স্ত্রী ভিডিও কল করার সময় এক দিন ধরেও ফেলেন অমিত। তা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি হয়। পাশাপাশি, নিখিলকেও তার বাড়ি বা পরিবারের লোকজনের ত্রিসীমানায় আসতে নিষেধ করে দেন মেজর অমিত।
কিন্তু তার পরও তা থামেনি। স্বামীর অগোচরে কথোপথন চলতেই থাকে। নিহত শৈলজার কল রেকর্ডস ঘেঁটে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু নিখিলের বিয়ের প্রস্তাবে কছুতেই রাজি হননি শৈলজা।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবারই দিল্লিতে আসে মেজর নিখিল। ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় শৈলজার সঙ্গে দেখা করে তাকে নিজের গাড়িতে নিয়ে যায় সে। গাড়িতে ফের বিয়ের কথা বলে নিখিল। কিন্তু শৈলজা রাজি না হওয়ায় গাড়িতেই তাকে ছুরিকাঘাত করে খুন করে নিখিল। পরে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে মৃতদেহ রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেয়।
এর আগে সকালে ফিজিওথেরাপি করাতে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় সেনা হাসপাতালে গিয়েছিলেন শৈলজা। সেনার গাড়ির চালক তাকে হাসপাতালে নামিয়ে দিয়ে আসেন। আধা ঘণ্টা পর চালক তাকে আনতে গেলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, শৈলজা এ দিন ফিজিওথেরাপিই করাননি। এর আধ ঘণ্টা পরই রাস্তায় তার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার হয়।
পুলিশ জানায়, শুধু ‘মিস ইন্ডিয়া আর্থ’ এর ফাইনালিস্ট শৈলজা নন, অন্তত এক ডজন নারীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলতেন সহকর্মীর স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় ধৃত এই মেজর। তাদের মধ্যে অন্তত চারজনের সঙ্গে শৈলজার মতোই ছিল তার ‘ঘনিষ্ঠতা’।
এমনকি এদের প্রত্যেকেই ছিলেন কোনো না কোনো সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী। তাদের স্বামীরা নিখিলের ঊর্ধ্বতন অফিসার। আর তারা প্রত্যেকেই ডিমাপুরেই কর্মরত।
নিখিলের ছিল দু’টি মোবাইল। তার একটির অস্তিত্ব নিখিলের স্ত্রী জ্যোতিরও জানা ছিল না। ওই দ্বিতীয় মোবাইলটি থেকেই শৈলজাসহ এক ডজন মহিলার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলতেন নিখিল। করতেন ভিডিও কল, চ্যাট।